সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার ঈশ্বরীপুর সনাতন ধর্মালম্বী’দের নিকট গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। সারাবিশ্বে সনাতন ধর্মালম্বীদের ৫১’টি পীঠের একটি এই যশোরেশ্বরী মন্দির।
সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাসমতে…..
‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’ প্রণেতা সতীশ চন্দ্র মিত্র এ মন্দির স্থাপনা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, ১৫৬০- ৮০ সাল পর্যন্ত রাজা লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকালে তিনি স্বপ্নে আদিষ্ট হন ঈশ্বরীপুর এলাকায় একটি মন্দির নির্মাণ করার। মন্দিরটি নির্মাণের পর সেটি বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে মন্দিরটি জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে ওঠে। সে সময় শ্যামনগরের ধুমঘাট ছিল বাংলার ১২ ভূঁইয়ার এক ভূঁইয়া রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী। রাজা প্রতাপাদিত্য এ সময় দেখতে পান ওই জঙ্গল থেকে এক আলোকরশ্মি বেরিয়ে আসছে। তিনি তখন মন্দিরটি খোলার নির্দেশ দেন। মন্দিরটি খুলেই সেখানে দেখা মেলে চণ্ডভৈরবের আবক্ষ শিলামূর্তি। তখন থেকে সেখানে পূজা-অর্চনা শুরু হয়।
পৌরাণিক গ্রন্থ মতে, দক্ষ রাজার কনিষ্ঠ কন্যার নাম ছিল সতীবালা। জন্ম থেকে মহাদেবের পূজারিণী ছিলেন তিনি। একপর্যায়ে তিনি স্বেচ্ছায় মহাদেবকে বিবাহ করেন। এতে দক্ষ রাজার ঘোর আপত্তি ছিল। এক অনুষ্ঠানে দক্ষ রাজার উপস্থিতিতে মহাদেব আসেন। কিন্তু মহাদেব দক্ষ রাজাকে তার শ্বশুর বলে পরিচয় দেননি। এতে তিনি চরম অপমানবোধ করেন। পরে শুরু করেন দক্ষযজ্ঞ। এতে সতীবালা ও মহাদেব নিমন্ত্রিত ছিলেন না। এতে অপমান বোধ করেন সতীবালা। কিছুক্ষণ পরেই সতীবালা দেহত্যাগ করেন।
এ খবর পেয়ে কৈলাস থেকে দ্রুতবেগে নেমে আসেন মহাদেব। তিনি দক্ষ রাজার মুণ্ডু কর্তন করে বলির জন্য নিয়ে আসা ছাগলের মুণ্ডু কেটে সেখানে বসিয়ে দিয়ে দক্ষযজ্ঞ লণ্ডভণ্ড করে দেন। পরে তিনি মৃত স্ত্রী সতীবালাকে কাঁধে নিয়ে কৈলাস পাহাড়ে চলে গিয়ে ক্ষোভে ও দুঃখে ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন। এ খবর পেয়ে ব্রহ্ম ও নারায়ণ সিদ্ধান্ত নিলেন মহাদেবকে ঠাণ্ডা করতে হলে তার কাছ থেকে সতীবালার মৃতদেহ সরিয়ে নিতে হবে। সে অনুযায়ী ত্রিশূল দিয়ে সতীবালাকে ৫১ খণ্ড করে ত্রিশূলে ঘোরানো হয়। এর এক খণ্ড এসে পড়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে। সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। এখানে সতীর করকমল বা পাণিপদ্ম ( হাতের তালুদ্বয় ও পায়ের পাতা) পতিত হয়েছে। দেবী সতীবালার শরীরের বাঁকী অংশ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, আফগানিস্থান, চীন ও নেপানের বিভিন্ন স্থানে পড়ে, স্থানগুলির তালিকা ৫ নং ছবিতে।
বিঃ দ্রঃ- উপরের তথ্যগুচ্ছ বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যম থেকে পাওয়া। বিশ্বাস একান্তই আপনার ব্যক্তিগত। তবে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করুক এবং দৃঢ় হোক, এটাই প্রত্যাশা…
লেখকঃ রাজশাহী পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক “হাসান হাফিজুর রহমান”।