জেলা প্রশাসক রহমত উল্লাহ স্যার
প্রশাসনে নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পর্ব-০২
মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, সততা ও সাহসের মাধ্যমে। রংপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক এম. রহমত উল্লাহ স্যার এমনই একজন মানুষ। জেলার সাধারণ মানুষ এখনো তাঁর কথা স্মরণ করেন। কর্ম- নিষ্ঠা সততার প্রশংসা করেন। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে সুনামের সাথে জনবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।তিনি কেবল কর্মক্ষেত্রেই সমাদৃত ছিলেন না, নিজের জেলা সাতক্ষীরার নলতায় জননন্দিত ছিলেন। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে তার নাম বার বার উচ্চারিত হয়। এলাকার অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ তার থেকে বিমুখ হন নি। এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। তাদের জীবন সংগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।
ধর্মীয় ক্ষেত্রেও তিনি পিছিয়ে থাকেন নি। নিজ গ্রামে মসজিদ -মাদ্রাসা বিনির্মানে প্রায় কোটি টাকার জমিও দান করেছেন এবং ওয়াকফ করে দিয়েছেন।
তিনি রত্নগর্ভা মাতা জমিলা খাতুন ও শিক্ষক পিতা জোনাব আলীর অসাধারণ সন্তান। তিনি ১৯৩৬ সালের ২রা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজির সফল শিক্ষক ছিলেন। তার পিতা জোনাব আলীর নামে নলতা হাট খোলা থেকে তারালী হাটখোলা পর্যন্ত রোডের নামকরণ করা হয়। পূর্ব নলতায় তিনি বেড়ে ওঠেছেন। নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাস করেছেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন ভালো ফলাফলসহ ১৯৫৮ সালে ।
তিনি প্রতিযোগিতামূলক ১৯৬১ সালের ইপিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হন। গোপালগঞ্জ থানায় (বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলা) সার্কেল অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। জেলা প্রশাসকের পর ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পদায়ন হয়। ইতিমধ্যে তিনি সে সময়ের মহামান্য প্রেসিডেন্ট এরশাদের রোষানলে পড়েন রংপুরের জেলা প্রশাসক থাকার জন্য। তিনি অযথা হয়রানির শিকার হন। অকালেই ঝরে যায় জনবান্ধব মেধাবী কর্মকর্তাটি। তিনি মাথা নত করেন নি। সাহস ধরে রেখেছিলেন।
তিনি মানুষের পাশে চিরকাল ব্যয় করেছেন। অবশেষে তিনি ১৯৯৬ সালের ১৪ জানুয়ারি চির নিদ্রায় শায়িত হন। তাঁর জানাজায় অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।
তাঁর একমাত্র পুত্র আফজাল ফারুক সরকারি কলেজে অধ্যাপনায় নিয়োজিত। তাঁর তিন কন্যা নাজনীন ফারক, নাসরীন ফারুক, আফ্রীন ফারুক যার যার ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। স্যারের সহধর্মিণী শ্রদ্ধেয় মেহেরুন্নেছা এখনো এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য আশ্রয়।
তবে রংপুর তথা সাতক্ষীরার নলতা এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতার অনেকেই স্যারকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। এক নামেই সবাই চিনে রহমতউল্লাহ ডিসি স্যার’কে।লেখকঃ আলমগীর হোসেন
উপসচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়
নির্বাহী সদস্য, অফিসার্স ক্লাব ঢাকা।