বিশ্ব জুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সাথেই তামাক জড়িত। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে তামাক-কর বৃদ্ধির জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন দেশের প্রখ্যাত ১২১ জন স্বনামধন্য চিকিৎসক। তারা বলেছেন, গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভের (গ্যাটস) রিপোর্ট বলছে, তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় অর্ধেক মারা যান তামাকের কারণে। তামাক ব্যবহারকারীদের তামাকজনিত রোগ যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি। তামাকজনিত অন্যান্য ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেশি। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে চিকিৎসকগণ এসব বলেন। তারা বলেন, প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ৩৫ শতাংশ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন। সংখ্যার হিসেবে যা সাড়ে তিন কোটিরও বেশি। আবার ১৩ থেকে ১৫ বছরের অপ্রাপ্তবয়স্করাও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার থেকে পিছিয়ে নেই। শতকরা হিসেবে সেটিও প্রায় ৬.৯ শতাংশ। যারা ধূমপান করেন না, কিন্তু পরোক্ষভাবে ধূমপানের ক্ষতির শিকার হন, এমন মানুষের সংখ্যা সামগ্রিকভাবে মোট ধূমপায়ীর সংখ্যার চেয়েও বেশি। সংখ্যার হিসেবে তা প্রায় ৪ কোটি মানুষ, যা প্রত্যক্ষ ধূমপায়ীর চেয়ে বেশি। অথচ এটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ততটা নই যতটা হওয়া উচিত ছিল। তার চেয়েও বড় কথা হলো, বাংলাদেশ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তারা বলছেন, এ দেশে সিগারেটের মূল্য অত্যন্ত কম, বিড়ি আরো সস্তা। ফলে বর্তমানে সিগারেট অধিক সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। এ জন্য ট্যাক্স বৃদ্ধির মাধ্যমে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি করা জরুরি।
তামাক কোম্পানিগুলো থেকে বলা হয় সরকার বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পায়। অথচ বছরে তামাকের স্বাস্থ্য ক্ষতিই হয় ৩০ হাজার কোটি টাকার উপরে। চলতি বছরের স্বাস্থ্য খাতের বাজেটই ২৯ হাজার কোটি টাকা। তাহলে দেখা যাচ্ছে, তামাকের কারণে ক্ষতির পরিমাণ স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের চেয়েও বেশি। আরেকটি বিষয় হলো, ২০১৩ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির সংশোধন খুবই জরুরি। তামাক নিয়ন্ত্রণে জোরালো আইন প্রণয়ন ও বিদ্যমান তামাক-কর কাঠামোর সংস্কারই পারে দেশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত করতে। বাংলাদেশে বৈশিষ্ট্য ও ব্র্যান্ড ভেদে সিগারেটে বহুস্তর বিশিষ্ট করকাঠামো চালু থাকায় বাজারে অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য সিগারেট পাওয়া যায়। ফলে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার পরিবর্তে ভোক্তা তুলনামূলক কমদামি সিগারেট বেছে নিতে পারছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিগারেটের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে প্রায় একই রকম রয়েছে। কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের সহজলভ্যতা অবশ্যই কমাতে হবে।
বিবৃতি প্রদানকারী ডাক্তারগণ হলেন- অধ্যাপক ডা: আফম রুহুল হক এমপি, অধ্যাপক ডা: আবদুল আজিজ এমপি, অধ্যাপক ডা: হাবিবে মিল্লাত এমপি, অধ্যাপক ডা: ওবায়দুল বাকী, অধ্যাপক ডা: অরূপ রতন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা: আবদুস সালাম খান, অধ্যাপক ডা: বিশ্বাস আখতার হোসেন, অধ্যাপক ডা: শেখ মো: আবু জাফর, অধ্যাপক ডা: আ এম এম শরিফুল আলম, অধ্যাপক ডা: কামরুজ্জামান চৌধুরী, অধ্যাপক কর্নেল ডা: মো: ইউসুফ আলী, অধ্যাপক ডা: আবুল আহসান (দিদার), অধ্যাপক লে. কর্নেল (অব:) ডা: মো: ফারুক মিয়া, লে. কর্নেল ডা: রুবিনা ইয়াসমিন, অধ্যাপক ডা: আ ফ ম আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ডা: মো: আবদুল মোবিন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা: ফৌজিয়া সোবহান, অধ্যাপক ডা: সুরাইয়া সুলতানা, অধ্যাপক ডা: মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ডা: এম এ রহমান, অধ্যাপক ডা: জহির উদ্দিন মাহমুদ, অধ্যাপক ডা: কে বি এম আবদুর রহমান প্রমুখ।