সাবিনা ইয়াসমিন শিল্পি ::
পটিয়া ও চন্দনাইশে ‘কোটি টাকার’ ৭ কমিটি,
অভিযোগ পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতাদের
ছাত্রলীগের পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা, কলেজ ও পৌরসভার সাতটি কমিটি ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। শুক্রবার ঘোষিত এসব কমিটিতে অছাত্র, বিবাহিত ও খুনের আসামিদের পদে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আর কমিটিতে স্থান দেয়ার বিনিময়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে।
কমিটি ঘোষণার পর গাছবাড়িয়া কলেজ গেট এলাকায় গতকাল বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পদবঞ্চিতরা।
চন্দনাইশে মহাসড়ক অবরোধকালে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন পদবঞ্চিতরা। এসময় সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র অমান্য করে এসব কমিটি দেয়ার অভিযোগ তোলা হয়। অবরোধকালে উপস্থিত নেতাকর্মীরা জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতার ব্যাংক হিসাব তদন্তের দাবি জানান। দুই নেতা কমিটি দেয়ার বিনিময়ে কোটিপতি বনে গেছেন বলেই জানান বিক্ষোভকারীরা।
জেলা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, গতকাল (২৫জুন) চন্দনাইশ উপজেলা, পৌরসভা, দোহাজারী পৌরসভা ও গাছবাড়িয়া কলেজে এবং পটিয়ায় উপজেলা, পৌরসভা ও পটিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম বোরহান উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের।
দুই উপজেলায় ছাত্রলীগের সাত কমিটিতে মোট ৪৩৮ জনকে সাংগঠনিক পদ দেওয়া হয়েছে। আর চন্দনাইশে কমিটি দেয়ার বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও অবহিত করা হয়নি।
বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দনাইশ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কমিটি দেয়া নিয়ে আমার সাথে কেউ কথা বলেনি। তারা আসবে বলেও আসেনি। এ কমিটি নিয়ে বলতে গেলে অনেক কথা। আগের সেই ছাত্রলীগ নেই। ছাত্রলীগ এখন কমার্শিয়াল হয়ে গেছে। বিষয়টি আমি কেন্দ্রকে অবহিত করবো।
কমিটি ঘোষণার বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম বোরহান উদ্দিন বলেন, পটিয়া ও চন্দনাইশে দীর্ঘদিন ধরে যে অচলাবস্থা চলছিল তা কাটাতেই নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে। এ কমিটি নিয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা হবে। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় বঞ্চিতদের স্বীকৃতি দেয়ার চেষ্টা করেছি। যে কারণে চন্দনাইশের আহবায়ক কমিটিতে বেশি যুগ্ম আহবায়ক রাখা হয়েছে। তিন মাস পর আহবায়ক কমিটিগুলো ভেঙ্গে নতুন কমিটি করতে হবে।
পটিয়া উপজেলায় নাজমুল সাকের সিদ্দিকীকে আহবায়ক, মো. সেলিম, মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান, রবিউল হোসেন ইবলু, তানভীর হোসেন, মো. জানে আলম, ইনতিসার ইবনে সেলিম, এম শওকত হোসেন, আনিসুল ইসলাম চৌধুরী, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, মোবারক হোসেন চৌধুরী রিপন, এনজয় দাশকে যুগ্ম আহবায়ক করে ১২০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে।
পটিয়া পৌরসভায় অজয় শীলকে আহবায়ক ও মো. জোবায়েত হোসেন, মোবাশ্বের আলম, মো. সাইদুল আলম তানিম, আতিকুর রহমান আলভী ও আদনান সাইয়্যিদ অনিককে যুগ্ম আহবায়ক করে ৬৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। পটিয়া সরকারি কলেজে মো. গিয়াস উদ্দিন সাব্বিরকে সভাপতি ও আবদুল হান্নানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে।
চন্দনাইশ উপজেলায় মো. মাঈনুর রহমান আসিফকে আহবায়ক ও মো. আলমগীর ইসলাম, শফিউল হোসাইন, মো. হামিদুল ইসলাম, মারজাদুল ইসলাম চৌধুরী আরমান, ইয়াছিন আরাফাত শ্রাবণ, মাসুদ চৌধুরী, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জামিল উদ্দিন, মোহাম্মদ সাইফুল আলম তুষার, এম. জাহেদ চৌধুরী, বিপুল তালুকদার, তৌফিকুর রহমান চৌধুরী, আজিজ উদ্দিন চৌধুরী টিংকু, মো. আরমান উদ্দিনকে যুগ্ম আহবায়ক করে ১০১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি করা হয়েছে।
গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে আসিফ মোস্তফা কামালকে সভাপতি ও মো. সাফাকুন নুর চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেয়া হয়েছে। চন্দনাইশ পৌরসভায় আমির হোসেনকে সভাপতি ও রাইসুল আসাদ জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেয়া হয়েছে। দোহাজারি পৌরসভায় মো. সাজ্জাদ হোসাইনকে সভাপতি ও আসিফুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের আংশিক কমিটি করা হয়েছে।
সাত কমিটির মধ্যে চন্দনাইশেও সবচেয়ে বেশি অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে চারটি কমিটি দেয়ার বিনিময়ে স্থানীয় ধর্নাঢ্য ব্যক্তি ও পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে অর্থ লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে কমিটি অমান্য করে চন্দনাইশ উপজেলার ২০ জনের মতো নেতা পদত্যাগ করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
পদবঞ্চিতরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করার কারণে সড়কে দুর্ভোগ বাড়ে। গাছবাড়িয়া কলেজ গেটের উভয় পাশে প্রচুর গাড়ি আটকা পড়ে। এসময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন পদবঞ্চিতরা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি খোরশেদুল আলম ইমতিয়াজ বলেন, আমরা চেয়েছিলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও এমপির সমন্বয়ে সুন্দর কমিটি। এখানে ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে অছাত্র, খুনের আসামি ও বিবাহিতদের ঠাঁই দেয়া হয়েছে। যারা মাঠে রাজনীতি করেনি তারাই কমিটিতে এসেছে। চন্দনাইশে চার কমিটি দেয়ার বিনিময়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে ৭০-৮০ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আরেক সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলার সাতটি কমিটি হলো, এতে ছাত্রলীগের কোন উপকার হলো না। যারা কমিটিতে এসেছে তাদের বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজ নেয়া হয়নি। ইতোমধ্যে কমিটির ১৫ জনের মতো নেতা পদত্যাগ করেছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে। এ কমিটির বিরুদ্ধে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে পদবঞ্চিতরা।
অর্থ লেনদেন ও বঞ্চিতদের ক্ষোভের বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম বোরহান উদ্দিন বলেন, ছাত্রলীগ বিশাল সংগঠন। সবাইকে কমিটিতে রাখা হয়নি। অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন বলেই মান-অভিমান করছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে সবাইকে মূল্যায়ন করা হবে।