এখনও কেউ কেউ পরীমনি, পিয়াসা, মৌ’কে নিছক অসামাজিক কার্যকলাপ, মদ, পার্টি, দেহ ব্যবসার সম্রাজ্ঞী হিসেবেই ভাবছেন। মোটেও তা নয়। তাদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিদেশে টাকা, নারী, ইয়াবা পাচার এবং অস্ত্র, স্বর্ণ ও হীরা স্মাগলিং করে দেশে আনাসহ বেশ কিছু স্পর্শকাতর অভিযোগ।
অভিযানের শুরুতেই সেসব অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে। বেরিয়ে এসেছে আরো নতুন নতুন তথ্য উপাত্ত যা ঝানু গোয়েন্দাদের কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট পরিচালনায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ আগরওয়াল, আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ, বর্তমান জুয়েলারী ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতিসহ অন্তত একডজন ডাকসাইটে ব্যবসায়ির নাম উঠে এসেছে। এ সিন্ডিকেটে কয়েকজন ব্যাংকারের যুক্ত থাকার খবরও পাওয়া গেছে। শীর্ষ পর্যায়ের এ সিন্ডিকেট গত তিন চার বছরেই দেশ থেকে কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিন্ডিকেটের হয়ে যাবতীয় কর্মকান্ড নির্বিঘ্নে চালাতে দাপুটে রাজনৈতিক নেতা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, কাস্টমস ও বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তা মিলিয়ে বিশ জনেরও বেশি সহায়তাকারী টিম রয়েছে।
কথিত মডেলসহ একই সিন্ডিকেটে অন্তত ১০ জন নারী সম্রাজ্ঞী রয়েছেন, এরমধ্যে চার জনই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী নেত্রী হিসেবে পরিচিত। পিয়াসা ও মৌ’র মূল বাণিজ্য ব্ল্যাকমেইলিং। উভয়ে অভিজাত শ্রেণীর তরুণিদের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে উচ্চবিত্তদের ব্ল্যাকমেইলিং করে কাড়িকাড়ি টাকা হাতানোর ভয়ঙ্কর সব কান্ড ঘটান। ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটভুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে পিয়াসা, মৌ শ্রেণীর কথিত মডেলরা এক- দেড় কোটি টাকা পারিশ্রমিক পেতেন। বিনিময়ে হাজার কোটি টাকা পাচার করতেন, বাড়তি বাণিজ্য হতো নারী ও ইয়াবা পাচারের মাধ্যমে। আনা হতো শত শত কোটি টাকা মূল্যের ডায়মন্ড, স্বর্ণ ও অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। দেশে এ সিন্ডিকেটের অস্ত্র সরবরাহের বাণিজ্য দেখভালের ক্ষেত্রে হুইপপুত্র শারুণ ও রাজবাড়ী পাংশার এমপি পুত্রের নাম বারবার উঠে আসছে পিয়াসা-মৌদের মুখে। পরীমনি’র রয়েছে দুবাই কানেকশন। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটটি ইদানিং অস্ত্রশস্ত্রে বলিয়ান নিজস্ব বাহিনীও গড়ে তুলেছে। প্রশিক্ষিত এ বাহিনীর সদস্যরা বরাবরই বিমানবন্দরের দিকে নজর রাখতেন। দুবাই থেকে ঢাকা বিমানবন্দর হয়ে যেসব স্বর্ণ ভারতে পাচার হতো সেসব লুটে নেয়াই ছিল তাদের কাজ।
জঅই ও উই আরো তিন সম্রাজ্ঞীসহ কয়েকজনের সন্ধানে রাজধানীময় চষে ফিরছে। সিন্ডিকেটের নেপথ্য নায়করা সবাই ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় রয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাওয়া মাত্র তাদেরকে কব্জায় নেয়া হবে বলেও ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রঃ দেশপত্র