অভ‚তপূর্ব! অভাবনীয়!! সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন অথবা বিএমএসএফ সিনিয়র সহসভাপতি সাঈদুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকা মানহানি মামলা দায়েরের প্রতিবাদে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ আমাকে গভীর কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছে। গত বুধবার ছিল বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত দেশব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ। এদিন চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, ব্রাম্মনবাড়িয়া, নোয়াখালী, কক্সবাজার, টেকনাফ, ভোলা, পিরোজপুর, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, আশুলিয়া, চাঁদপুরসহ সারাদেশের দেড় শতাধিক স্থানে একই সময় একই ধরনের ব্যানার নিয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা এ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন। তবে বিএমএসএফ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ জেলা কমিটি আয়োজিত জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ কর্মসূচিতে শুধু সাংবাদিক নন, সর্বস্তরের মানুষের স্বতস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণ ছিল। মানুষের এই ভালবাসা আমাকে আপ্লুত করেছে, আবারও তাদেরকে পাল্টা ভালবাসার দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করে দিয়েছে। ফেসবুকে সাংবাদিক কেন্দ্রীক প্রচার প্রচারণা থাকলেও কোনো মিডিয়ায় এ কর্মসূচির আগাম ঘোষণা ছিল না, কাউকে সে মানববন্ধনে হাজির হওয়ার জন্য আলাদা ভাবে তাগিদও দেয়া হয়নি তবুও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, মিরপুর, খিলগাঁও, বনানী, মোহাম্মদপুর, লালবাগ কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে দল বেধে বেধে মানুষ ছুটে এসেছেন প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে।
যাত্রাবাড়ীর যে নাজমুলের সঙ্গে ৬ মাসে ৯ মাসে দেখা সাক্ষাৎ হয় না সেও কিভাবে কার মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে ঠিক সময় মতো ১৫/২০ জন বন্ধু বান্ধব নিয়ে হাজির হয়েছেন মানববন্ধনে। আমার সন্তান হিসেবেই সমধিক পরিচিত খিলগাঁও এলাকার আব্দুল আজিজ অসুস্থ অবস্থায় একদল মানুষ সঙ্গে নিয়ে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে এসে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন। আগাম ঘোষণা ছাড়াই সবার আগে সকালেই হাজির হয়েছেন সরকার জামাল ও তার সঙ্গী সাথীরা। রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকা থেকেও শতেক যানজটের ধকল পেরিয়ে লাল রঙের প্রতিবাদী ব্যানার নিয়ে সরকার জামালের উপস্থিতি সবাইকে আকৃষ্ট করেছে বৈ কি। সারা বছরেও যে আনিসুর রহমানের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হয় না, তিনিও মানববন্ধনের প্রতিবাদ এড়াতে পারেননি। হৃদয়ের টানে, ভালবাসার বোধে হাজির হয়েছেন প্রেসক্লাব আঙ্গিনায়। সেই যে শুরু থেকে ব্যানার ধরে দাঁড়িয়েছেন অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে আর নড়াচড়াও করতে দেখিনি। নতুন সময় পত্রিকার সম্পাদক মেধাবী নাজমুল হক শ্যামল নিজের প্রয়োজনেও করোনাকালে কোথাও বের হওয়ার নজির নেই যার, তিনিও মিরপুর ১২ থেকে সরাসরি হাজির হয়েছেন অনুষ্ঠানস্থলে। এরা কেউ বিএমএসএফ এর সদস্য সমর্থক নন, তবুও বিএমএসএফ এর ব্যানারেই প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন একান্ত ভালবাসার টানে।
আর বিএমএসএফ এর নেতৃবৃন্দ, কর্মি, সমর্থক…তাদের ভ‚মিকার কথা তো বলে শেষ করার উপায় নেই। ঢাকার সর্বদক্ষিণের উপজেলা দোহার থেকে ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি নাসিরউদ্দিন পল্লব মামার নেতৃত্বে জনা বিশেক সংবাদকর্মি সেই সাত সকালেই প্রেসক্লাবে হাজির। প্রায় একইসঙ্গে এসে পৌঁছান ঢাকা উত্তরের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে আরো একদল সংবাদ কর্মি। ভালবাসার কাছে পথের ক্লান্তি, দুর্ভোগ যেন তুচ্ছ হয়ে যায়, সবাই হাসিমুখে হাজির হলেও প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ মনোভাবও ছিল তাদের দেহ মন জুড়ে।
বনানীর সংবাদ কর্মিদের আন্তরিকতার বর্ণনা কতটুকুই বা তুলে ধরতে পারবো? বেলায়েত ভাই, বনানী প্রেসক্লাব সেক্রেটারী সোহাগ, রিপন হাওলাদার, ছোট ভাই স্বাধীন, সোহেল, থেকে শুরু করে সকলেই সারারাতই জেগে কাটিয়েছেন প্ল্যাকার্ড কিংবা ব্যানার তৈরির কাজে। শেষ রাত থেকে চলছিল তাদের অপেক্ষার পালা। সকাল আটটার আগেই বিভিন্ন গ্রæপে আর ব্যক্তিবর্গকে ম্যাসেজ পাঠিয়েই বেলায়েত ভাইয়েরা রওনা দেন প্রেসক্লাবমুখে। বলতে গেলে বনানী প্রেসক্লাবের সদস্যদের উপস্থিতির মধ্য দিয়েই যেন ভরাট হয়ে উঠে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ। মিরপুর থেকে বিএমএসএফ এর কেন্দ্রীয় নেতা লিমন দাঁড়িয়ে ছিলেন ঠিক প্রেসক্লাব গেটে, আগতদের অভ্যর্থণা জানিয়ে মানববন্ধনের জায়গা চিনিয়ে দেয়ার দায়িত্বে।
বারিধারা বসুন্ধরা এলাকা থেকে প্রায় একযোগেই ছুটে আসেন সেহলী আন্টি, সাহেদা আপা, সারা, সাদান হোসেন সাজু, মীর আলাউদ্দিন, সোহাগ, সোলায়মানসহ অন্যরা। উত্তরা থেকে ছোট বোন রুবি, রফিক ভাইয়ের সঙ্গীরাও সব হাজির। তুরাগ থেকে সাইফুল ইসলাম একা কিন্তু একা একাই আসেনি। তার সঙ্গে আসা দলের মধ্যে যে তরুণ ফটোগ্রাফারটি উপস্থিত ছিল…বোধকরি অনুষ্ঠানের সর্বোচ্চ ছবি আর ভিডিও তার ক্যামেরাতেই হয়েছে। মোহাম্মদপুর ঢাকা গেট এলাকার সংবাদকর্মি নিজাম ভাই সত্যি সত্যিই যে আমাকে ভালবাসেন তা তিনি আবারও প্রমান দিলেন। মিডিয়া অঙ্গনে বাংলাদেশের আলো’র মেহেদী হাসান যে আমার ভাতিজা সে খবর কে না জানে? মানববন্ধনের আগের দিন বিকেলেও তার অবস্থান ছিল বান্দরবানের দুর্গম নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায়। কী এক অজানা টানে মোটর সাইকেল চালিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে সরাসরি হাজির মেহেদী জাতীয় প্রেসক্লাবে। টানা ১৪ ঘন্টা মোটর সাইকেল চালিয়েও হাসিমুখে অংশগ্রহণ আর সবার খোঁজ খবর নেয়ার ঘটনাই বলে দেয় আসতে পারায় কেমন আনন্দবোধ হয়েছে তার।
আমার পছন্দের, উদিয়মান রিপোর্টার বাংলাদেশের আলো’র অপরাধ পাতা প্রধান সুমন সরদার। অনুষ্টানের ক’দিন আগে থেকেই তার কোনো যোগাযোগ ছিল না তার। কিন্তু প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে যখন দেখেছি অনেক আগেই হাজির হয়ে সে মানববন্ধনের শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যস্ত রয়েছেন তখন সব ক্ষোভ উ’বে গেছে মুহূর্তেই। মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ সমাবেশে এতো এতো মানুষের উপস্থিতি দেখে বোধকরি সবচেয়ে বেশি খুশি ছিলেন বিএমএসএফ এর কেন্দ্রীয় নেতা আকরাম ভাই ও মিজানুর রশীদ মিজান। বরাবরই ২০/৩০ জনের মানববন্ধন দেখে অভ্যস্ত নেতারা হয়তো ব্যক্তি ভালবাসারও গভীরতা খুঁজছিলেন ঘুরে ঘুরে।
আরেকজন প্রিয় ছোট ভাই সাভারের পারভেজ মুন্না, সঙ্গে একুশে টিভির সাংবাদিক কামরুলের নাম না লিখলেই নয়, মিরপুরের প্রান্ত পারভেজ থেকে শুরু করে লালন, মারুফ, ওবায়দুর, মনা, রাজুসহ প্রায় সকলেই হাজির হয়েছিলেন আমার প্রতি সহমর্মিতা জানাতে। খিলগাঁওয়ের ওয়াদুদ ভাই, ছোট বোন এলিজা, এমএইচ মুন্নার সরব উপস্থিতি ভুলে যাওয়ার উপায় নেই। সবাইকে দেখে দেখে মনির, নূরুল আমিন, নাহিদ, মহসীন মাদবররা যে আসেনি তা মনে করতেই পারছিলাম না। বাস্তবেই চেনাজানা কে নেই, কে আসেনি? সত্যিকারের অর্থেই অনেকে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ যেমন ঘটিয়েছেন তেমনি সাংবাদিকতার উপর আরোপিত আঘাতেরও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কেউ কেউ হয়তো দুটো বিষয়েরই উর্দ্ধে অবস্থান করে, তারা আর যাই হোক শুভ ইচ্ছাধারী নন। আমার চট্টগ্রামের ছোট ভাই সোহাগ আরেফিন আগের রাতেই ঢাকা ছেড়ে চলে যান নোয়াখালী, সেখানেই তিনি কর্মসূচি সফল করতে রাতভর ব্যস্ত থাকেন। ঘন্টায় ঘন্টায় সেখানকার আপডেট জানাতেও দ্বিধা করেনি। কক্সবাজারের গোটা জেলা জুড়ে টানা দুদিন যাবত বিএমএসএফ নেতা কর্মিদের উদ্যোগ আয়োজনের নানা নির্দেশনা দেখে বিশ্বাস করুন চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি। কয়েকশ’ মাইল দূরের সাংবাদিক ভাইয়েরা শুধু পেশার ভালবাসাকে আঁকড়ে ধরে আমার প্রতি কতোটা মমত্ব দেখালেন…। জেলার আটটি থানাতেই সমন্বিত ভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালেই লাইভ করে তা সহকর্মিরা শেয়ারও করেছেন। প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থানকালেই তা আমি দেখতে পেয়েছি। একইদিন প্রতিবাদ সমাবেশ করতে না পারায় বান্দরবানের আব্দুর রাহিমের যেন উৎকন্ঠার শেষ ছিল না। অবশেষে রাহিম বান্দরবানের সকল সাংবাদিক সংগঠনের সমন্বয়ে শনিবার সকালে জমজমাট মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে তার অবস্থান আর ভালবাসার জানান দিয়েছে। এতজনের মধ্যে বিএমএসএফ এর মান্যবর সাধারন সম্পাদক আহমেদ আবু জাফরের নামটা লিখে এ রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছি না। বিশাল মনের অধিকারী মানুষটি কখন যে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কখন যে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন সেসবের কোনো কিছুই ঠাহর করতে পারিনি আমি। ভাওয়াল গড়ের আনন্দঘন বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার নানা আয়োজনের ফাঁকেই তিনি মামলাটির বিষয় জানতে পেরে তৎক্ষনাত কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা সবাই তখন কর্মপরিকল্পনার বৈঠকের নানা বিষয় নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। তার বিরতিহীন উদ্যোগের ফসল বিএমএসএফ এর ঘরে উঠেছে, অসীম সহমর্মিতা জুটেছে আমারই ভাগ্যে। তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা থাকছে আমার, আমাদের।
ভাগ্নে আরব আলী বিশ্বাস, যাত্রাবাড়ীর আজিজ বাপজানসহ আরো কত শত জনের নাম লেখা প্রয়োজন, বড়ই প্রয়োজন তবুও লেখার কলেবর অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। আপনাদের এ ভালবাসার কাছে কুর্ণিশ জানাচ্ছি, অজীবনের কৃতজ্ঞতা ঘোষণা করছি। সত্যিই এর কোনো প্রতিদান দেয়ার সাধ্য আমার নেই। তবে যেখানেই সংবাদকর্মিরা আঘাতপ্রাপ্ত হবেন সেখানেই প্রতিবাদী কন্ঠস্বর থাকবে, এ প্রতিশ্রæতি দিচ্ছি আমি।
কেন মানববন্ধন? কেন বিক্ষোভ?
=============
আসলে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, ঘৃণা প্রকাশ, বিক্ষোভ প্রদর্শন কেন? এসব করলে কি মামলার ধারায় কোনো পরিবর্তন ঘটবে? নাকি অপরাধের শাস্তি লাঘব হবে? এসবের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আক্রান্ত সাংবাদিকের প্রতি সহমত প্রকাশ করা, সহমর্মিতা জানানো, সাহস জোগানো। পাশাপাশি দুর্বৃত্ত শ্রেণীকে জানিয়ে দেয়া যে, দেশের বিবেকবান মানুষজন এখনো সত্য ও ন্যায়নীতির পক্ষে। তোমাদের রক্তচক্ষুকে থোরাই কেয়ার করে তারা। সত্যবাদী মানুষ সর্বত্রই বুক ফুলিয়ে তার কথাটি প্রকাশ করতে সাহস পায় বলেই সারাদেশে তারা প্রকাশ্যে জনসম্মুখে মানববন্ধন করে বক্তব্যের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে যে, ‘প্রকাশিত সংবাদটি সত্য, মামলাটি হয়রানিমূলক।’ প্রতিপক্ষ বিচ্ছু সামশু চক্র কী দেশের কোথাও প্রকাশ্য সভা ডেকে বলতে পেরেছে ‘সংবাদটি মিথ্যা, আমরা মামলা দায়েরের মাধ্যমে ন্যায্য কাজটি করেছি।’ পারেনি। পাশাপাশি সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন কিংবা রোজিনা ইসলাম…এদেরকে একক কোনো বিশেষ ব্যক্তিত্ব বা বিরাট আয়তনের সাংবাদিক ভেবে নেয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন তাদেরকে প্রতীক হিসেবে ধরে নিজেদের ঐক্যকে বারবার ঝালাই করে নেয়া, আরো সুদৃঢ় বন্ধন গড়ে তোলা।