ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটের বাইরে দেশে যে কটি বিমানবন্দর রয়েছে কুমিল্লা তার অন্যতম। প্রতিদিনই এ বন্দরের সিগন্যাল ব্যবহার করছে দেশ-বিদেশের কমপক্ষে ৪০টি এয়ার বাস। আর সিগন্যালিং থেকে মাসে আয় হচ্ছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ বিমানবন্দরে কোনো বিমান নামছে না এবং এখান থেকে কোনো বিমান ওড়ে অন্যত্র যাচ্ছেও না।
একটু উদ্যোগ নিলেই কিন্তু এখানে বিমান ওঠানামার কাজ শুরু করা সম্ভব। কুমিল্লা বিভাগ না হলেও বিভাগীয় সব দপ্তর রয়েছে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের এ জেলায়। রয়েছে সমৃদ্ধ ইপিজেড, বার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বিমানবন্দরটি চালু করা হলে এটি একটি লাভজনক বিমানবন্দর হতে পারে বলে অনেকের মত। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রা বিমানবন্দরটি পুরোপুরি চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন।
কুমিল্লা এখন শীর্ষ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী জেলা। এখানকার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। এর ১৩ শতাংশই বিদেশে কর্মরত। এছাড়া বিমানবন্দরসংলগ্ন রয়েছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)। তাই এটি সচল হলে প্রবাসীদের আসা-যাওয়ার সুবিধার পাশাপাশি ইপিজেডে অনেক বিদেশি বিনিয়োগে আসবেন। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে।
জানা যায়, দেশে মোট তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে। এছাড়া সাতটি শর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং (স্টল) বিমানবন্দর রয়েছে। এই সাতটি স্টল বিমানবন্দরের একটি কুমিল্লা বিমানবন্দর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১-৪২ সালে নগরীর দক্ষিণ পাশে নেউরা, ঢুলিপাড়ার ও রাজাপাড়া এলাকার পাশে ৭৭ একর ভূমিতে তৈরি হয় এ বিমানবন্দর। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরটি অভ্যন্তরীণ রুটে সচল ছিল। পরে অজ্ঞাত কারণে এখানে বিমান ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়।
কুমিল্লা বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বিমান ওঠানামা না করলেও এখনও চালু অবস্থাতেই আছে বিমানবন্দরটি। এ বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী অনেক বিমানকে আকাশপথের সিগন্যাল দেওয়া হয়। প্রতিদিন এ বিমানবন্দর থেকে সিগন্যাল ব্যবহার করে অন্তত ৪০টি বিমান। এটির সিগন্যাল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে ভারতের অভ্যন্তরীণ রুট, ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরের বিমান। আগরতলা বিমানবন্দরে যাওয়া বিমানও এ রুটে চলাচল করে।
সূত্র আরও জানায়, কুমিল্লা বিমানবন্দরে নেভিগেশন ফ্যাসিলিটিস, কন্ট্রোল টাওয়ার, ভিএইচএফ সেট, এয়ার কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি, ফায়ার স্টেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ সব সুবিধাই রয়েছে। যাত্রীদের জন্য আলাদা রুমও আছে। সব সুবিধা থাকার পরও উদ্যোগের অভাবে গত ৪ দশকের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে বিমানবন্দরটি। তবে এটি চালু করতে খুব বেশি অর্থেরও প্রয়োজন নেই।
শুধু উদ্যোগ নিয়ে রানওয়ে মেরামত এবং ফায়ার সার্ভিস ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের কয়েকজন জনবল নিয়োগ করলেই এ বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে স্টল বিমান চলাচলের পাশাপাশি কলকাতা, আগরতলাসহ বিভিন্ন রুটে বিমান চলাচল সম্ভব। এসব কাজের জন্য প্রয়োজন মাত্র ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। বিমানবন্দরটি চালু হলে বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষ সহজেই দেশের বিভিন্ন স্থান ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করতে পারবেন। সুবিধা হবে প্রবাসীদেরও, বাঁচবে সময়। পাশাপাশি ইপিজেডসহ জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যেও প্রসার ঘটবে।
জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাসিন্দা প্রবাসী জাহাঙ্গীর হোসেন বাবুল বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়খালী অঞ্চলের ৬ জেলায়। গত ৪ দশকের বেশি সময় ধরে কুমিল্লা বিমানবন্দরটি বন্ধ থাকায় আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। দ্রুত বিমানবন্দরটি চালু করা দরকার। পাশাপাশি এ বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা বিমানবন্দর চালুর দাবি করে আসছি। এটি চালু হলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অনেক ভালো হবে। আমাদের বিমানবন্দরতো সচল আছেই, শুধু চালুর দাবি জানাচ্ছি। কুমিল্লা ইপিজেডে কর্মরত কয়েকজন জানান, এ ইপিজেডে বেশ কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ না হওয়ার কারণে আগ্রহ থাকার পরও অনেক বিদেশি এখানে বিনিয়োগ করতে আসছেন না। ইপিজেডের পাশের বিমানবন্দরটি চালু হলে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়বে।
জানতে চাইলে কুমিল্লা বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আবদুল গণি বলেন, প্রতিদিন আমাদের সিগন্যাল ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রুটের ৩৫ থেকে ৪০টি বিমান। এতে মাসে ৩০ লাখ টাকার মতো আয় করছি। এ বিমানবন্দরে সব কিছুই আছে। শুধু উদ্যোগের অভাবে এখানে বিমান ওঠানামা করে না। বর্তমানে আমাদের এখানে ২০ জন কর্মরত রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে একটু উদ্যোগ নিলেই বিমানবন্দরটি সচল করা সম্ভব। এজন্য রানওয়ে মেরামতসহ কিছু কাজ করতে হবে। পাশাপাশি আরও ২০-২২ জন লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। আমরা চাই দ্রুত বিমানবন্দরটি চালু হোক।