হাজিয়া বেবি বিনতে বাসেদঃব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগরে সংখ্যালঘুর দোকান লুটপাট ও পরিবারের ওপর হামলা করেছে বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কাউসার মিয়া।
গত রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের আলাদাউদপুর গ্রামের ফুলতলী মোড়ে রিদু শীল (৫৭) নামে এক সংখ্যালঘুর দোকানে এই ঘটনা ঘটে। এতে করে রিদু শীল ও
প্রত্যক্ষদর্শী মানিক দেব জানান, সন্ধ্যার সময় একই গ্রামের ইকবাল মিয়ার ছেলে সাগর মিয়ার (২০) কাছে দীর্ঘদিনের দোকান বাকির টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে তর্ক বিতর্ক হয়। কেন সাগর মিয়ার সাথে তর্ক করছে সেজন্য যুবলীগ নেতা কাউসার মিয়ার (৩৫) নেতৃত্বে লোকমান মিয়াসহ তার অনুসারীদের নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা করে রিদু শীলের ওপর। রড, লাঠি দিয়ে আহত করে এবং তার দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
এ সময় আশেপাশের কয়েকজন রিদু শীলকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাদের মধ্যে অনেকে আহত হযে আমতলী বাজার ও চান্দুরা বাজারে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। অপর দিকে রিদু শীলের অবস্থা অবনতির দিকে গেলে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে সেখানে মাথায় ৪টি শেলাই ও কানের নিচে ২টি শেলাই দিয়ে বাঁধন করা হয়।
ভুক্তভোগী রিদু শীল মুঠো ফোনে আমাদের কণ্ঠকে বলেন, সাগর আমার দোকান থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বাকিতে মালপত্র নেয়, কোন টাকা পয়সা দেয় না। আজকে যখন সাগরকে কাছে পাইছি তখন ওর কাছে টাকা চাইতে গেলে সে টাকা দিবেনা বলে জোরাজুরি করে। এমন সময় সে কাউছারকে মোবাইল ফোনে ডেকে আনলে কাউছার বলেন আমি যেন সাগরকে ছেড়ে দিই। সাগরকে না ছাড়লে সে আমারে চিনাইবে সে কেমন কাউছার। দিতে ছাড়ি নাই বলে কিছুক্ষণ পর কাউছার তার পেটুয়াবাহিনীকে ডেকে এনে আমারে ইচ্ছেমতন রড দিয়ে পিটায়ে জখম করে চলে যায়। আমি বেহুশ হয়ে পড়ে থাকলে স্থানীয় লোকজন আমারে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে আহত রিদু শীলের স্ত্রী ও মামলার বাদী সাবিতা বিশ্বাস জানান, আমি গতকাল মামলা করছি। চান্দুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামিমুল হক চৌধুরীর (শামীম চৌধুরী)। আস্ফালনে কাউছার এমন নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছে। মামলা করার পর থেকেই চান্দুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। মামলা তুলে না নিলে আমতলী বাজারে ঢুকতে দিবেনা বলে হুমকিও দিয়েছে। তিনি আরো জানান, আমরা হিন্দু মানুষ, নিরীহ মানুষ, গরীব মানুষ। আমরা খুবই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা কাউছারের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
ঘটনার খবর পেয়ে বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মির্জা মোহাম্মদ হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে যুবলীগ নেতা কাউছারকে আটক করলে কাউছারের অনুসারীরা তাকে জোরপূর্বক পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়।
চান্দুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীমুল হক চৌধুরী (শামীম চৌধুরী)কে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
কাউছারকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তার অনুসারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মির্জা মোহাম্মদ হাছানকে প্রত্যাহার দাবী জানান।
এবিষয়ে বিজয়নগর থানার ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, যুবলীগ নেতা কাউছার তার বাহিনী নিয়ে রিদু শীলের উপর হামলা করে। এতে করে রিদু শীলকে গুরুতর আহত করে। এ বিষয়ে রিদু শীলের স্ত্রী বাদী হয়ে সোমবার রাত ৯টায় বিজয়নগর থানায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নাম্বার ৩১ (১৩/০৯/২১)। কাউসারকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেনি। আমি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছি মাত্র। আমি চেয়ারম্যান শামিউল হক চৌধুরী শামীমকে বলেছি কাউছারকে থানায় নিয়ে আসতে। ওর সাথে থানায় কথা বলবো।