উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে:
নড়াইলে একুশে পদক প্রাপ্ত চারণকবি কবিয়াল বিজয় সরকারের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে শিল্পীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন ও সংক্ষিপ্ত স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সকালে এ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: ফকরুল হাসান, অ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিকী, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারন সম্পাদক মলয় কুমার কুন্ডু, বিজয় সরকার গবেশক আকরাম শাহীদ চুন্নু, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান স্বপ্নাসেন, বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জানাগেছে, কবিয়াল বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয়া দেবী। বিজয় সরকার নবমশ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন, মতান্তরে মেট্রিক পর্যন্ত। তার দুই স্ত্রী বীণাপানি ও প্রমোদা অধিকারীর কেউ বেঁচে নেই। বিজয় একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। ১৮০০ বেশি গান লিখেছেন তিনি। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। আধ্যত্মিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিজয় সরকার গেয়েছেন-যেমন আছে এই পৃথিবী / তেমনিই ঠিক রবে/ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে…। প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে লিখেছেন-‘তুমি জানো নারে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা’…। ‘নবী নামের নৌকা গড়/ আল্লাহ নামের পাল খাটাও/ বিসমিল্লাহ বলিয়া মোমিন/ কূলের তরী খুলে দাও…।’ কিংবা ‘আল্লাহ রসূল বল মোমিন/ আল্লাহ রসূল বল/ এবার দূরে ফেলে মায়ার বোঝা/ সোজা পথে চল…।’ স্ত্রী বীনাপাণির মৃত্যুর খবরে গানের আসরেই গেয়েছেন-‘পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/ ওরে একদিন ভাবি নাই মনে/ সে আমারে ভুলবে কেমনে…। উল্লেখ্য, বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতে পরলোকগমন করেন কবিয়াল বিজয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। তার দুই ছেলে কাজল অধিকারী, বাদল অধিকারী ও মেয়ে বুলবুলি অধিকারী ভারতে বসবাস করেন।