লিয়াকত হোসনে রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজশাহী কোর্ট কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিক্ষানবিশ আইনজীবী শাহীন আলম ওরফে শাহেন শাহ হত্যা রায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে ঘোষনা করা হয়। রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ও.এইচ.এম ইলিয়াস হোসাইন এই রায় ঘোষনা করেন। এই মামলায় মোট ৩১ জন আসামী ছিলেন।
এরমধ্যে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় ৯ জনকে ফাঁসি ও এক লক্ষ করে টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও একই ধারায় ২২জনকে যাবজ্জীবন এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা করে প্রতিজনকে জরিমানা করেন তিনি। আদায়কৃত অর্থ ভিকটিমের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন বিচারক।
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা আসামীরা হলেন- মেহের চান কশাইয়ের ছেলে রাসিক ১নং ওয়ার্ড সাবেক কাউন্সিলর মুনসুর রহমান। তাকে ৩০২/১১১৪/৩৪ ধারায় মৃত্যুদন্ড এবং জরিমানা করা হয়। মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে হাসানুজ্জামান হিমেল ও তৗফিকুল ইসলাম চঁাদ, গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মহাসীন, মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে সাইরুল, নুহু শেখের ছেলে রজব, মৃত আক্কাস আলীর ছেলে বিপ্লব, গোলসের কসাই এর ছেলে মমিন ও আব্দুস সালামের ছেলে আরিফুল ইসলাম।
এদিকে যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন- গিয়াস উদ্দিন ওরফে গেসুর ছেলে মাহাবুল, মৃত তাজু শেখ এর ছেলে সাত্তার, মৃত আজিম আলীর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন, মৃত ঝড়– শেখের ছেলে বখতিয়ার আলম রানা ওরফে রংলাল ও হাসান আলী, মৃত লিয়াকত মন্ডল ওরফে লেক মন্ডলের ছেলে মাসুদ, মৃত তাইদ এর ছেলে রাসেল, ইমদাদুল হকের ছেলে রাজা, মজিবর রহমানের ছেলে মুর্তুজ, মোস্তফার ছেলে সুমন, মহাসীন এর ছেলে আসাদুল ও আখতারুল, মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে জইদুর রহমান, মৃত গোলাপ শেখ এর ছেলে ফরমান আলী, মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে জয়নাল আবেদীন, রেজাউল করিম এর ছেলে রাজু আহম্মেদ, মৃত মাজদার আলীর ছেলে আকবর আলী, মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে সম্রাট হোসেন, মৃত ওয়াজেদ আলী ওরফে ওজার ছেলে লাল মোহাম্মদ ওরফে লালু ও টিয়া আলম, আজিম আলীর ছেলে আজাদ হোসেন ও মৃত ওয়াহেদ কসাইয়ের ছেলে মাসুম।
উল্লেখ্য দীর্ঘি আট বছর পরে এবং তের বার রায়ের তারিখ পিছানোর পরে এই রায় ঘোষনা গতকাল করা হয়েছে। মামলার বিবরনী থেকে জানা যায় ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট রাসিকের ১নং ওয়ার্ডের তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা মনসুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জনের সন্ত্রাসী দল ক্লাব মোড়ের পুকুরপাড়ে চক্রাকারে ঘিরে সশস্ত্র অবস্থান নেয়। এ সময় শাহেনশাহ মটরসাইকেল যোগে ক্লাব মোড় অতিক্রম করার সময় আসামীরা চারদিক থেকে তার ওপর ঝঁাপিয়ে পড়ে। তারা চাইনিজ কুড়াল, রামদা ও চাপাতির কোপে শাহেন শাহর দেহ ক্ষত-বিক্ষত করে তাকে পুকুরে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
নিহত শাহেন শাহর ছোট ভাই ও মামলার বাদী রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আকতার নাহান বলেন, ২০১৩ সালের ১৫ জুন) রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হয়। আমার আরেক ভাই রজব আলী কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। তবে তিনি নির্বাচনে হেরে যান। প্রধান ঘাতক মনসুর রহমান কাউন্সিলর হন। ঘটনার সূত্রপাত নির্বাচন নিয়ে। সন্ত্রাসীরা পরিকল্পনা মাফিক আমার ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। দেরীতে হলেও এই রায়ে তারা খুশি বলে জানান তিনি।
শাহেন শাহ হত্যা মামলার আইনজীবি মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম বলেন, বলেন, আসামীদের বিপক্ষে মোট আঠার জন স্বাক্ষ্যদেন। সেইসাথে আসামীদের পক্ষে ছয় জন ছাপাই স্বাক্ষ্য দেন। স্বাক্ষীদের জবানবন্দী এবং মামলার সব দিক বিবেচনা করে বিজ্ঞ বিচারক এই রায় দিয়েছেন বলে জানান তিনি। সেইসাথে জরিমানাকৃত অর্থ আদায় করে ভিকটিমের পরিবারের হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
এদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবি এ্যাডভোকেট হামিদুল হক বলেন স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য অনুযায়ী মামলায় আসামীদের বিপক্ষে কোন প্রমান দেখাতে পারেননি। ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান তিনি।