হাফিজুর রহমান শিমুলঃ আশাশুনি উপজেলার ১১ ইউনিয়নে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ স্বতঃস্ফুর্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে ভোট গ্রহন করা হয়। নির্বাচনে উপজেলার ১১ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আ’লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ৫ জন, বিদ্রোহী প্রার্থী ৩ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩ জন বিজয়ী হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে।
মঙ্গলবার থেকে উপজেলা জুড়ে বিপুল সংখ্যক আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। সাথে সাথে আইন শৃংখলা রক্ষা ও কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির মোবইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স সকল ইউনিয়নে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত ছিল। প্রশাসন ছিল কঠোর অবস্থানে। প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্রে সকাল থেকেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষ্যনীয়। সকল কেন্দ্রে আলাদা সারিতে দাড়িয়ে নারী—পুরুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট প্রদান করেন। ভোট কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীর সমর্থকরা ভোটারদের কাছে ভোটার স্লিপ বিতরণ, প্রার্থীর সমর্থকরা স্ব স্ব প্রার্থীর প্রতীক নিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করেন।
নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নৌকা, লাঙ্গল, হাতপাখা ও মশালের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আ’লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। অপরদিকে জামায়াত—বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে না আসলেও কোথাও কোথাও তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন করেছেন। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক উপজেলার ১১ ইউপিতে বিজয়ী ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন, শোভনালীতে জামায়াত সমর্থিত মাওঃ আবু বক্কর সিদ্দিক (চশমা প্রতীক) ৭২৬১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শম্ভুচরণ মন্ডল পেয়েছেন ৫৩৭০ ভোট। বুধহাটায় উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম—সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক ডাবলু (নৌকা প্রতীক) ৮৯৬০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী (বিএনপি) প্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুল হান্নান (ঘোড়া প্রতীক) পেয়েছেন ৬৫২৫ ভোট। কুল্যায় আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ওমর ছাকী ফেরদৌস (পলাশ) আনারস প্রতীক নিয়ে ১১৩৬৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ’লীগ মনোনীত আব্দুল বাছেত আল হারুন চৌধুরী (নৌকা প্রতীক) পেয়েছেন ৪৩৩১ ভোট। দরগাহপুরে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ মিরাজ আলি ৫৪৫৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মোটর সাইকেল প্রতীকের স এ এম জমির উদ্দিন পেয়েছেন ২৩৫৬ ভোট। বড়দল ইউনিয়নে নির্বাচিত হয়েছেন । আশাশুনি সদর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম হোসেনুজ্জামান হোসেন ৮৮৮৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রার্থী চশমা প্রতীকের প্রার্থী স ম সেলিম রেজা মিলন পেয়েছেন ৪৫৮৩ ভোট। শ্রীউলা ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী প্রভাষক দিপংকর বাছাড় দিপু (আনারস) ৮৯৮৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি নৌকা প্রতীকের আবু হেনা সাকিল পেয়েছেন ৫০১৮ ভোট। খাজরা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব শাহ নেওয়াজ ডালিম ৭৬২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আনারস প্রতীকের অহিদুল ইসলাম পেয়েছেন ৭২১৭ ভোট। আনুলিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রাথী রুহুল কুদ্দুছ বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাহাবুদ্দিন সানা। প্রতাপনগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী দাউদ হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বি আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ জাকির হেসেন। কাদাকাটি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দিপংকর কুমার সরকার দিপ ৩৯৮৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী চশমা প্রতীকের প্রার্থী মফিজুল হক পেয়েছেন ৩১৪২ ভোট।
উল্লেখ্য, উপজেলার ১১ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যার মধ্যে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক ১১ জন, জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীক ২ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীক ৪ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ মনোনীত মশাল প্রতীক ১ জন ও বাকী ৩৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা, ঘোড়া, আনারস, মোটরসাইকেল, টেবিল ফ্যান, টেলিফোনসহ বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।