(১)
সাংবাদিক নামধারী ১৩টি ভূইফোঁড় সংগঠন, অখ্যাত-অনিয়মিত ২২টি প্রিন্ট পত্রিকা ও অনুমোদনহীন তিন শতাধিক অনলাইন পোর্টাল মিলেমিশে ৩৫ হাজারেরও বেশি ভূয়া ও ভন্ড সাংবাদিকের জন্ম দিয়েছে। এ পরিসংখ্যাণের বাইরেও আছে অগণিত।
বেপরোয়া গতিতে ‘উৎপাদন ও সরবরাহ’ স্টাইলেই বেড়ে চলেছে ভূয়া সাংবাদিকদের সংখ্যা, বিস্তার ঘটছে ভন্ড সাংবাদিকতার।
মূলধারার প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকরা বরাবরই ‘অনুমোদনহীন কথিত সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে অবৈধ সাংবাদিক উৎপাদনের খামার’ বলে অভিহীত করেন। আর ‘ভূয়া সাংবাদিক তৈরির কারখানা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় অখ্যাত নিম্নমানের পত্রিকা ও অনুমোদনহীন অনলাইন মিডিয়াকে
তবে তথাকথিত সাংবাদিক সংগঠনের ব্যানারেই ভয়ঙ্কর জঙ্গী থেকে শুরু করে পেশাদার অপরাধী, মাদক ব্যবসায়িসহ দেহ বাণিজ্য ও নারী পাচার চক্রের হোতারাও নির্বিঘ্নে গা ঢাকা দেয়।
দেশে ১৩টি ভূইফোঁড় সংগঠন, অখ্যাত, অনিয়মিত ২২টি প্রিন্ট পত্রিকা ও অনুমোদনহীন তিন শতাধিক অনলাইন পোর্টাল মিলেমিশে ৩৫ হাজারেরও বেশি ভূয়া ও ভন্ড সাংবাদিকের জন্ম দিয়েছে।
তবে স্যাটেলাইট চ্যানেল, অনলাইন ও আইপি টিভি চ্যানেলগুলোও যত্রতত্র কথিত সাংবাদিক বানানোর দৌড়ে মোটেও পিছিয়ে থাকেনি। ক্ষমতাসীন দলের সপ্তম অষ্টম সারির স্বঘোষিত এক নেতা ও নেত্রীর দুটি অনলাইন টিভি’র পক্ষ থেকে ইদানিং ইউনিয়ন পর্যায়েও ‘সাংবাদিক ও ভিডিও রিপোর্টার’ নিয়োগ দেয়ার কাজ চলছে পুরোদমে। ইউনিয়নগুলোর সাংবাদিক ও ক্যামেরা সাংবাদিকদের দেখভালের জন্য প্রতি উপজেলা পর্যায়ে নেওয়া হচ্ছে ‘রিপোর্টার্স কো-অর্ডিনেটর।’ এই কো-অর্ডিনেটর তো রাত দিন ইউনিয়ন পর্যায়ের সাংবাদিকদের দেখভাল করতেই ব্যস্ত থাকবেন, এ কারণে উপজেলা সদরে সিনিয়র লেভেলের (!) আলাদা ‘রিপোর্টার ও ভিডিওম্যানও’ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আরেকটি অখ্যাত আইপি টিভি’র পক্ষ থেকে গাজীপুরের একটি থানা এলাকায় একই সময়সীমায় এ পর্যন্ত ১৬ জন রিপোর্টার নিয়োগ দেয়ার খবর মিলেছে।
রাজধানীর অখ্যাত এক পত্রিকার পক্ষ থেকে একই স্টাইলে শুধু উত্তরায় রিপোর্টার আইডি দিয়েছে ১৩ জনকে। সেখানে আরো দুই জন স্টাফ রিপোর্টার, একজন সিনিয়র রিপোর্টার এবং আরো একজন অনলাইন এডিটরও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এভাবেই বেপরোয়া গতিতে ‘উৎপাদন ও সরবরাহ’ দেয়ার আদলে বেড়ে চলেছে সাংবাদিকদের সংখ্যা, বিস্তার ঘটছে ভূয়া ও ভন্ড সাংবাদিকতার।
(২)
মূলধারার প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকরা বরাবরই ‘অনুমোদনহীন কথিত সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে অবৈধ সাংবাদিক উৎপাদনের খামার’ বলে অভিহীত করে থাকেন। ভূয়া সাংবাদিকতার বিস্তারকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি আবার সরকারি অনুমোদনও জুটিয়ে নিয়েছে। তবে অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা বেশিরভাগ সাংবাদিক সংগঠনের ব্যানারেই চলছে ভয়ঙ্কর সব অপরাধ, সংঘবদ্ধ অপকর্ম। বিশেষ করে সাংবাদিক না হয়েও ‘সাংবাদিক নেতা’ বনে যাওয়া বাটপারদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যে সরকার ও প্রশাসন যেমন বিব্রত হচ্ছে- তেমনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কথিত সাংবাদিক সংগঠনের ভন্ড নেতারা মুখে মুখে আওয়ামী আদর্শের বুলি আউড়ালেও বাস্তবে তারা জঙ্গী-জামাতসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন চক্রের নেপথ্য আশ্রয়দাতার ভূমিকা পালন করে থাকে। তাদের তথাকথিত সাংবাদিক সংগঠনের ব্যানারে ভয়ঙ্কর জঙ্গী থেকে শুরু করে পেশাদার অপরাধী, মাদক ব্যবসায়িসহ দেহ বাণিজ্য ও নারী পাচার চক্রের হোতারাও নির্বিঘ্ন আশ্রয়ে গা ঢাকা দেয়। তাছাড়া দখলবাজ দুর্বৃত্ত, চোর, ছিনতাইকারী, টেন্ডারবাজরা রাতারাতি সাংবাদিক সংগঠনের নেতা সেজে উল্টো দল, প্রশাসন, থানা পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
লেখকঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলএর ইনচার্জ জনাব সাইদুর রহমান রিমন ।