না, কোন হইচই নেই, বিশৃঙ্খলা নেই। একদম ছিমছাম পবিত্র ও স্নিগ্ধ পরিবেশ! রমজান মাসজুড়ে রোজ দশ হাজার রোজাদার একসাথে ইফতার করছেন। সাতক্ষীরার নলতা শরীফে ‘নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনে’র আয়োজনে প্রায় শতবছরের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন এটি। মাসজুড়ে এটিই দেশের বৃহত্তম ইফতার আয়োজন।
প্রতিদিন দশহাজার মানুষের প্লেটে থাকে ফিরনী, কলা, খেজুর, ছোলা, চিড়া, সিংড়া, ডিম, ক্ষিরাই এবং ক্ষেত্রবিশেষ আরো বেশি আইটেম। সাথে পানির বোতল। পেশাদার বাবুর্চির পাশাপাশি রোজ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিরবে-নিভৃতে কাজ করছেন। প্যান্ডেলে ঘেরা বিশাল চত্ত্বরে দুপুরের পর থেকেই জড়ো হয় স্থানীয় কিশোর-তরুনরা। মূলত প্লেটে ইফতার সাজিয়ে মাঠে সারিবদ্ধভাবে ইফতার বন্টন করে এরা। ইফতার শেষে আবার গুছিয়ে রাখে। পুরো আয়োজন তত্ত্বাবধান করেন আহ্ছানিয়া মিশনের কর্মকর্তারা।
এই ইফতারের সূচনা হয় অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের পরিচালক, আহ্ছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা, ছুফি-সাধক খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এর হাতে। ১৯৩৫ সালে আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকেই নলতা শরীফে এই পবিত্র আয়োজনের সূচনা। সে সময় থেকে স্বল্প পরিসরে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন তিনি। তাঁর বেছালের পর এই দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন দরবার শরীফের খাদেম ও পরবর্তীতে আহ্ছানিয়া মিশনের অভিভাবক মৌলবি আনছারউদ্দীন আহমদ (র.)। ধীরে ধীরে বাড়ে এই আয়োজনের ব্যাপ্তি। এখন শুধু স্থানীয়রাই নন, দূর-দূরান্ত থেকে রোজাদাররা ছুটে আসেন এ ইফতার মাহফিলে শামিল হতে। এখানে ইফতার করে প্রশান্তি পান তাঁরা।
আগত রোজাদারদের যানবাহন- সাইকেল, ভ্যান, মোটরসাইকেল পাহারা দেয়ার জন্য আহ্ছানিয়া মিশন কর্মী নিয়োগ করে রেখেছে। জুতা-স্যান্ডেলও নিরাপদে রাখার কর্মীও রয়েছে। বিনামূল্যেই এসব সুবিধা পান আগতরা। এখানে রয়েছে বেশ কিছু অতিথিশালা। বিভিন্ন সময় দূর-দূরান্ত থেকে আগত মেহমানরা এখানে থাকেন। রমজানের শেষ ভাগে নলতা শরীফ শাহী জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় সুবিশাল এতেকাফ। এতেকাফে আগত মুসল্লীদেরও ইফতার, রাতের খানা ও সেহেরীরও সকল আয়োজন করে কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন।
প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয় ইফতার আয়োজনে। হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এর ভক্ত-অনুরাগী এবং আহ্ছানিয়া মিশনের কর্মকর্তাদের দানে এ খরচ নির্বাহ হয়। প্রতিদিন কয়েক হাজার ইফতার পাঠানো হয় স্থানীয় মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানে। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের বাইরেও বেশ কিছু শাখা আহ্ছানিয়া মিশন একই সময়ে মাসব্যাপী ইফতারের আয়োজন করে। সে সংখ্যাও কয়েক হাজার। হবিগঞ্জ আহ্ছানিয়া মিশন, ঢাকায় বিভিন্ন মিশন, সাতক্ষীরায় আস্কারপুর আহ্ছানিয়া মিশন, সখিপুর আহ্ছানিয়া মিশন কুমিল্লার লাঙলকোর্ট আহ্ছানিয়া মিশন, ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার নোয়াগাও আহ্ছানিয়া মিশনসহ বেশকিছু মিশন নিজেদের পরিসরে এই আয়োজন করে।
স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের সেবায় ব্রতী আহ্ছানিয়া মিশনের এই আয়োজন দিন দিন আরো পরিব্যাপ্ত হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্বব্যাপী আহ্ছানিয়া মিশনের অন্তত ১৮৯ টি শাখা একযোগে আত্মিক উন্নয়ন ও মানব উন্ময়নে কাজ করছে।
মো. মনিরুল ইসলাম
পরিচালক
খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইন্সটিটিউট।