বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করতে চায়। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? আওয়ামী লীগ কোথায় ব্যর্থ হয়েছে?
নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে ৫টায় এ বৈঠক শুরু হয়। করোনাকালের দীর্ঘ আড়াই বছর পর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ এই বৈঠকে প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত রয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও ভোটে পেছনে ছিল না। ভোটপ্রাপ্তির পারসেন্টেজও বেশি ছিল। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্র করে ভোটে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যেও আওয়ামী লীগ এগিয়েছে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই এ দেশের নির্বাচনে প্রহসন ও ভোট কারচুপির কালচার শুরু করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছে। কখনও পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি।
বারবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনার জন্য দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগকে বারবার ভোট দিয়েছে। ভোট দিয়ে টানা তিনবার ক্ষমতায় রেখেছে। এই কারণে এই সরকারের সময় দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে।
তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক। অনেকেই আছেন, যারা অতিজ্ঞানী হলেও কম বোঝেন। তারা তাকিয়ে থাকেন কখন তারা ক্ষমতায় যেতে পারবেন, বসে থাকেন কখন সিগন্যাল আসবে। তারা বিদেশে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করেন। যেন বিদেশ থেকে এসে তাদের ক্ষমতায় বসাবে। কিন্তু এখনকার বাংলাদেশ সেটা নয়।
এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হওয়ায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীসহ সংশ্নিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ এবার ঈদে নির্বিঘ্নে বাড়ি গেছে ও ফিরছে। মানুষ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঈদ করে, উৎসব করে। এতে গ্রামে অর্থ সরবরাহ বাড়ে।
তিনি বলেন, আমার সরকারের সময় গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হচ্ছে। সরকার তৃণমূল থেকে উন্নয়ন করছে। গ্রামের অর্থনীতি শক্তিশালী করছে।
পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসকদের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, জিয়া-এরশাদ-খালেদা-তারেক সবাই মানুষ হত্যা করেছেন। জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় ক্ষমতা ছিল ক্যান্টনমেন্টে। পাকিস্তানি স্টাইলে মিলিটারি ডিকটেটটরশিপ চালু করেছিলেন তারা।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়? এই দলের দুজন নেতাই দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। আর এদের সঙ্গে ডান বাম ও অতিবাম এসে যুক্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি ও মানুষের দল। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দল পরিচালনা করে। এই দলের নিয়মিত সম্মেলন হয়। ঘোষণাপত্রের অনেক কিছু বাস্তবায়ন করেছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় এগিয়ে এসেছে জানিয়ে এখন থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই কিছু কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের কুকর্ম মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে।
টানা তিন মেয়াদে নিজের সরকার আমলে দেশ ও মানুষের কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে একটা মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঈদের আগে ৩৩ হাজার ঘর দিয়েছি, জুলাই মাসে আরও ৩৪ হাজার দেব। বাকি থাকবে আরও ৪৫ হাজার গৃহহীন পরিবার। এদেরও ঘর দিয়ে দিলে দেশে ভূমিহীন কেউ থাকবে না।
দৃঢ়কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পরাধীনদের অনুসরণ করব না। নিজস্বভাবে দেশের উন্নয়ন করব। মাথা উঁচু করে চলব।
প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শুরু হয়। শুরুতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
শনিবারের বৈঠকে সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলের জাতীয় কাউন্সিল, জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল সম্মেলন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের সম্মেলনের বিষয়েও আলোচনার কথা রয়েছে। এছাড়া আগামী ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২৫ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী, ৭ জুন ঐতিহাসিক ৬ দফ দিবস, ১১ জুন শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী এবং ১৫ আগস্ট জাতির পিতার শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে দলের কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কথাও রয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়ে রাজনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসার পর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দু-একটি বৈঠক করেছে। তবে করোনার স্বাস্থ্যবিধির কারণে সেগুলোতে নির্দিষ্ট ও কমসংখ্যক নেতার অংশগ্রহণের অনুমতি ছিল। এবারই প্রথম বৈঠকে পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী সংসদের সব নেতারই অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।