রাত সাড়ে এগারটার দিকে আমার ওয়াইফ মিলি বাসায় ফিরেছে। ওকে বাসার গেটের সামনে ওর বয়ফ্রেন্ড নামিয়ে দিয়ে গেলো। কোনও কথা বলেনি, জাস্ট চেন্জ করে, ফ্রেস হয়ে বেডে গেছে, প্রায় সাথে সাথেই ঘুম…
ওর সিক্সথ সেন্সটা খুব প্রখর। কেমনে যে সব বুঝে ফেলে, তা বুঝে উঠতে পারি না। মাঝে কিছুদিন অফিস থেকে বেরিয়ে “শ…” এর বাসায় যেতাম। ওর হাসবেন্ড দেশের বাইরে। একা বাসায় সময় কাটেনা তার…তাই একটু সঙ্গ দেয়া। একদিন শার্টটা ধুতে দেবার সময় মিলি কি যেন খুব মনঃযোগ দিয়ে দেখলো, তারপর কান্নাকাটি, কথা বন্ধ… আর কিছুই লুকানো গেলোনা… ভুল স্বীকার করে সংসারে মন দিলাম…
এরপর কিছুদিন ভালোই চললো, তারপর পরিচয় “ই…” এর সাথে। মাঝরাতে ফোনে কথা হতো, হোটেলে যে রুমে উঠতাম, একদিন তার দরজায় মিলি হাজির, কোনরকমে ওকে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে এলাম…
দোষটা কার বুঝিনা, আমার রাশিটাই কি এমন? কেমন করে যেন হয়ে যায়… এরপর আরও কয়েকজন… অনেকেই তাদের চিনে ফেলবেন তাই আজ তাদের কাহিনী প্রকাশ করতে পারছি না…
ওর কাছে বারবার ক্ষমাও পেয়েছি। তবে, বাসায় ঝগড়াঝাঁটিও কম হয়নি, ও আমার হাতটা ধরে অনেক কেঁদেছে। সব বাদ দিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে সুন্দর সময় কাটাতে বলেছে, হয়ে উঠেনি। আমাদের ঝগড়াঝাঁটিতে ছেলে মেয়ে রাও অতিষ্ট..
ছেলেটা চুপচাপ রুমে দরজা বন্ধ করে থাকতো, মাঝে মধ্যে ফ্রেন্ডদের বাসায় রাতে কাটাতো। চারমাস হলো হলে উঠেছে, এখন বাসায় আসতেও চায় না, সেশন ড্রপ দিয়েছে। ওর পড়ার টেবিলে সিগারেটের কতকগুলো খালি প্যাকেট ছাড়া কিছুই চোখে পড়েনা, রুমটা ফাঁকাই পড়ে আছে ।
মেয়েটারও একই অবস্থা, সারাক্ষণ রুমে, খাবারও রুমে নিয়ে খায়, কয়েকটা এডমিশন টেষ্ট দিয়েছে, এখনো কোথাও চান্স হয়নি…!
ইদানিং খুব সাজতে পছন্দ করছে মিলি, বিয়ের পরেও এমন ছিলো, সবসময়ই ফিটফাট। প্রথম কিছুদিন খুব বেড়িয়েছি। তারপর কোথাও যেতে চাইলে, খুব বিরক্ত লাগতো। আজ না কাল নিয়ে যাবো বলে এড়িয়ে যেতাম। এভাবে বহু দিন পার করেছি। এক সময় ও সাঁজাও ছেড়ে দিলো, আমার অপেক্ষায় থাকাও কমে গেলো।এখন আর না খেয়ে আমার অপেক্ষায় থেকে থেকে ঘুমিয়ে পড়ে না..! কখন ফিরলাম, কি খেলাম নাকি খেলাম না এসব নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ নেই। শুধু, গত সপ্তাহে একবার জিজ্ঞেস করলো, বান্ধবীরা ঠিকমত খবর রাখছে কিনা। উত্তর দিতে ইচ্ছে করেনি….
কদিন হলো, ওর অনেক পরিবর্তন, সাজগোজ বেড়েছে। শপিং এ যাচ্ছে, যখন তখন বাইরেও যাচ্ছে, ফিরতে রাত…… প্রশ্ন করার সাহস পাই না..
একদিন তর্কের মাঝে ওকে বলেছিলাম, পারলে তুইও কর, তার শোধ নিচ্ছে না তো?
এখন রাত প্রায় চারটা,, ঘুমাতে পারছি না মোটেও.. খুব নিশ্চিন্তে ও ঘুমাচ্ছে, মুখে চিলতে হাঁসি। খুব বদলে গেছে ও, এ বদলের কারন অন্য কেউ। কি করে বাচ্চাদের বলবো, ওদের মায়ের মুখে হাঁসির কারন এখন অন্য কেউ, ভাবনায় অন্য কেউ, লাইফ স্টাইলে চেন্জ এনেছে অন্য কেউ, যেখানে আমার ঠাঁই নেই…
হালকা আলোয় কেমন যেন মায়াবী লাগছে ওকে। খুব ইচ্ছে করতে ওর আঙ্গুল গুলো ছুঁয়ে দেখতে, শ্যাম্পু করা চুলে হাত বুলাতে… হাতটা এগোতে চাইলেও ফিরে আসছে, কি যেনো এক অদৃশ্য শিকলে বাঁধা পড়েছে, পা দুটো পাথরের মতো নিশ্চল , নড়তে চাইছে না। এই নোংরা হাত দিয়ে কেমন করে ছোঁবো তাকে..
নির্বাক মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছি….
©Hasan Hafizur Rahman
পুনশ্চ: এটি নিছক গল্প,, কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে তা অনিচ্ছাকৃত, সেটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার নিবেদন রইলো
লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান।