রেজিয়া বেগম (৬৪) দশ কিলো রাস্তা পাড়ি দিয়ে আজ বুধবার সকাল পৌনে ৮টায় আসেন গোপালপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিস কার্যালয়ে। সাথে স্বামী হারুনুর রশীদ (৭২)। গত মঙ্গলবার রেডিও টেলিভিশনের খবরে জানতে পারেন, সরকার বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে অফিস সময় নির্ধারণ করেছেন সকাল ৮টা থেকে ৩টা। বয়সজনিত কারণে হাটাচলায় সমস্যা। এর উপর গলগন্ডরোগে কাহিল তিনি। প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার দরখাস্ত নিয়ে অফিসের বাইরে ভ্যানে বসেছিলেন তিনি। সকাল নয়টা পর্যন্ত বসে থেকেও সমাজসেবা অফিসার এখলাস মিয়ার নাগাল পাননি তিনি।
আজ বুধবার সকাল ৮টায় স্থানীয় সংবাদকর্মীরা গিয়ে দেখতে পান, সমাজসেবা অফিসারের কক্ষ তালাবদ্ধ। সোয়া নয়টায় সমাজসেবা কর্মকর্তা অফিসে আসেন। এ সময় এখলাস হোসেন জানান, অন্য একটি কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি যথাসময়ে অফিসে আসতে পারেননি।
একইভাবে উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিস, উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন অফিস, উপজেলা কৃষি অফিস, উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস, উপজেলা পাট সম্প্রসারণ অফিস, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিস, উপজেলা পল্লী দারিদ্র বিমোচন অফিস, উপজেলা মৎস্য অফিস, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস, উপজেলা একাডেমিক শিক্ষা সুপারভাইজার অফিস, উপজেলা সদর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং উপজেলা পোস্ট অফিস সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তালাবদ্ধ ছিল। এদের কেউ কেউ নয়টা এমনকি দশটার পর অফিসে আসেন। ফলে এসব অফিসে আসা সেবা গ্রহীতারা দীর্ঘক্ষণ সংশ্লিষ্ট অফিসারকে না পেয়ে ফিরে যান। আবার কেউ কেউ দেড়টায় লাঞ্চের কথা বলে অফিস ছাড়েন। কিন্তু অফিসে আর ফিরে আসেননি।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শরীফ আব্দুল বাসেত জানান, তিনি ভূঞাপুরে অবস্থান করেন। মোটরসাইকেলে গোপালপুর আসার পথে ঘাটাইল উপজেলার পাঁচটিকরী নামক স্থানে এসে দেখেন ষাঁড়ের গুতায় একটি গর্ভবতী গাভী গুরুতর আহত। সেটির চিকিৎসা দিয়ে অফিসে আসতে দেরি হয়।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. শহীদুজ্জামান জানান, তিনি একজন পশু চিকিৎসক। কৃষককে সর্বক্ষণ সেবা দিতে হয় তাকে। তাই অফিসে আসতে একটু দেরি হতেই পারে। এটি দোষের কিছু নয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার শামীমা আক্তার জানান, তিনি একটি প্রশিক্ষণে টাঙ্গাইল রয়েছেন। সঠিক সময়ে তার অফিস খোলা হয়েছে বলে দাবি তার।
উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার মো. হাবিবুর রহমান জানান, তিনি আশপাশেই ছিলেন। অফিসে প্রবেশ করতে একটু দেরি হয়েছে।
উপজেলা পাট সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবুল বাশার জানান, অফিসার্স ক্লাব ভবন নির্মাণ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় নয়টার পর তিনি অফিসে আসেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার মাহমুদা খাতুন জানান, আসার পথে রাস্তায় বাস বিকল হওয়ায় অফিসে আসতে দেরি হয়ে যায়।
উপজেলা দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল কনক জানান, তিনি বিভাগীয় মামলায় টাঙ্গাইল জেলা জজ আদালতে গিয়েছিলেন।
উপজেলা মৎস্য অফিসার সুদীপ ভট্রাচার্য জানান, যানবাহনের কারণে অফিসে আসতে কিছু দেরি হয়।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল্লাহ ইবনে হুসাইন জানান, তিনি অন্যত্র ব্যস্ত থাকায় নয়টার পর অফিসে যান।
পরিসংখ্যান অফিসার আব্দুল আলীম জানান, উপজেলা পরিষদের গেটে আসার পর এক মামাতো বোন চা পানের জন্য টানাটানি শুরু করেন। তাই অফিসে আসতে বিলম্ব হয়।
উপজেলা রিসোর্স ইন্সট্রাকটর মো. আব্দুস সেলিম জানান, তিনি অফিসিয়াল কাজে টাঙ্গাইল এসেছেন। তার অফিস সময়মতো খোলা হয়।
উপজেলা সদর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারি কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার কমল চন্দ্র দেবনাথ জানান, সকাল ৮টা থেকে অফিস করতে হবে এমন নির্দেশনার কথা তিনি জানতেন না। তাই অফিসে আসতে দেরি হয়।
গোপালপুর উপজেলা পোস্ট মাস্টার আব্দুল মোমেন জানান, তিনি নয়টায় অফিসে এসেছেন। পেট খারাপ থাকায় আধাঘন্টা বাথরুমে ছিলেন। তাই মিডিয়াকর্মীরা হয়তো তাকে অফিসে পায়নি।
পৌরশহরের সূতীর আবুল হোসেন অভিযোগ করেন, সরকারের নতুন অফিসের সময়সূচি পাবলিক জানে। কিন্তু পাবলিক সার্ভেন্টরা জানেনা। এটি সত্যিই বিস্ময়কর।
গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং আলমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মোমেন জানান, সরকারের নির্দেশনা সরকারি কর্মকর্তা না মানার খবর উদ্বেগজনক।
গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ নিয়ে তিনি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ছোট মনির জানান, সরকারি সুযোগ সুবিধা পেয়ে যেসব সরকারি কর্মকর্তা সরকারের এ ওয়েল সার্কুলেটেড নির্দেশনা মানতে চাননি তাদের সরকারি চাকুরী করার যোগ্যতা নেই। তিনি বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিবেন বলে জানান।
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ মল্লিক ছুটিতে রয়েছেন। গোপালপুরে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহান জানান, যারা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তাদের বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এমন অবহেলা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবেনা।