স্মৃতি বড় মধুর! এ শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা’র পক্ষেই সম্ভব। ২৪ মার্চ ১৯৯৮, কবি সুফিয়া কামালের বাসভবন “সাঝের মায়া’য় এসে থামল প্রধানমন্ত্রীর গাড়ী বহর।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ১৯৯৭ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অসুস্থতার জন্য অনুষ্ঠানস্থলে এসে পুরস্কার নিতে পারেননি কবি সুফিয়া কামাল। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে পুরস্কারপ্রাপ্তাদের গ্রুপ ছবি তোলার সময় প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব বাহাউদ্দিন নাছিম ভাই জানালেন, প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ কবি সুফিয়া কামালকে দেখতে কবির বাসায় যাবেন।
আমি তখন দৈনিক জনকন্ঠর সিনিয়র ফটো সাংবাদিক, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদিনের অনুষ্ঠান কভার করি। অনুষ্ঠান শেষে আমিও নাসিম ভাইয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহরে উঠে রওয়ানা দিই ধানমন্ডিতে কবির বাড়ীর উদ্দেশ্যে। এমন দুর্লভ ঘটনার কোনো মুহুর্ত ‘মিস’ করতে চাইনি। তাই ‘সাঝের মায়া’য় গাড়ির বহর থামার সঙ্গে সঙ্গেই তারাতারি করে মমতাময়ী আপার আগেই সুফিয়া খালাম্মার ঘরে যেয়ে ক্যামেরা নিয়ে রেডি থাকি।
হতাশ হতে হয়নি । দেখতে পেলাম এক অভূতপুর্ব ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী ঘরে ঢুকে খাটে বসা অসুস্থ কবিকে জড়িয়ে ধরলেন।খোঁজ নিলেন কবির শারীরীক অবস্থার।
প্রধানমন্ত্রী বললেন ফুপূ আমাকে দোয়া করেন । কবি সুফিয়া কামাল প্রধানমন্ত্রীর মুখ নিজের দিকে দু’হাতে টেনে নিয়ে পরম মমতায় কপালে চুমু দিলেন।
বর্ষীয়ান কবির অসংখ্য ভাজ তার ফুলে ওঠা শিরায় পূর্ন হাত দিয়েই যেন আর্শীবাদ করলেন ১৯৭৫ এ স্বজন হারানো বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। প্রধানমন্ত্রীর আসার খবর জানতেন না কবির পরিবার, তাই কোনো রকম প্রস্তুতিও ছিল না। কবির শয়ন কক্ষ ছিল একটু এলোমেলো। প্রধানমন্ত্রী ঘরে ঢোকার পর ব্যস্ত হয়ে পড়েন কবির দ্বিতীয় কন্যা সাঈদা কামাল টুলু আপা।
সুফিয়া খালাম্মার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাপচারিতার সময় টুলু আপা খাটের উপর থাকা কাপড়-চোপড় সরিয়ে নিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেন । প্রধানমন্ত্রী কবিকে বললেন, ফুপু আমি আপনাকে স্বাধীনতা পদক পরাতে এসেছি। তিনি এডিসির কাছ থেকে পদকটি নিয়ে প্রখ্যাত কবি সুফিয়া কামালকে পরিয়ে দিলেন।
প্রধানমন্ত্রী হয়েও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একজন কৃতি মানুষকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন। যে নজির তিনি তৈরি করলেন, আমি তার সাক্ষী হয়ে রইলাম।