পারভীন সুলতানা মৃত্যু বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা
যিনি দিতি নামে বেশি পরিচিত
জন্ম: ৩১ মার্চ, ১৯৬৫
মৃত্যু: ২০ মার্চ ২০১৬
অভিনেত্রী। তার জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। ৩১ বছরের অভিনয় জীবনে দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন দিতি। ১৯৮৭ সালে স্বামী স্ত্রী (১৯৮৭) ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
সিনেমার পাশাপাশি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন দিতি। নাটক পরিচালনাও করেছেন। এ ছাড়া রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন। অভিনয়ের বাইরে মাঝেমধ্যে গান গাইতেও দেখা গেছে তাকে। প্রকাশিত হয়েছে তার একক গানের অ্যালবামও। বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেলও হন তিনি।
দিতি ১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তার গায়িকা হওয়ার ইচ্ছা ছিল এবং তিনি গানের চর্চাও করতেন। জাতীয় শিশু একাডেমি থেকে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় তিনি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।
বিটিভিতে গান করার সুবাদে তিনি অভিনেতা আল মনসুরের নজরে আসেন এবং মনসুর তাকে লাইলি মজনু নাটকে অভিনয়ের সুযোগ দেন। এতে দিতির বিপরীতে অভিনয় করেন মানস বন্দ্যোপাধ্যায়। নাটকটি জনপ্রিয়তা লাভ করলেও দিতির পরিবার থেকে তাকে অভিনয় করতে বাধা দেওয়া হয়। কিছুদিন বিরতির পর তিনি ইমিটেশন নাটকে অভিনয় করেন। এটি প্রযোজনা করেন ফখরুল আরেফীন।
১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে দিতির সম্পৃক্ততা ঘটে। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ডাক দিয়ে যাই। কিন্তু ছবিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল আমিই ওস্তাদ। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন আজমল হুদা মিঠু।
জনপ্রিয়তা ও পুরস্কারপ্রাপ্তি সম্পাদনা
সুভাষ দত্ত পরিচালিত স্বামী স্ত্রী (১৯৮৭) ছবিতে দিতি আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতেই অভিনয় করে দিতি প্রথম বারের মতো শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[৪] পরবর্তীতে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে হীরামতি, দুই জীবন, ভাই বন্ধু, স্নেহের প্রতিদান, শেষ উপহার, কাল সকালে, মেঘের কোলে রোদ।
ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা
দিতি অভিনেতা সোহেল চৌধুরীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। ১৯৮৭ সালে জন্ম হয় দিতি-সোহেল দম্পতির প্রথম সন্তান লামিয়া চৌধুরীর। ১৯৮৯ সালে এ দম্পতির ছেলে দীপ্ত চৌধুরীর জন্ম হয়। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে দিতি ও সোহেল চৌধুরীর বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন সোহেল চৌধুরী। সোহেল চৌধুরী মারা যাওয়ার পর চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিয়ে করেন। সে সংসার টেকেনি। কাঞ্চনের সাথেও তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
মস্তিষ্কে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ায় ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই থেকে ভারতের চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজি (এমআইওটি) হাসপাতালে নেয়া হয়। মাঝে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে সেই বছরের নভেম্বরে আবারও একই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৮ জানুয়ারি তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার পরপরই তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে থাকাকালীন ২০১৬ সালের ২০ মার্চ বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যগ করেন।
আমিই ওস্তাদ
স্বামী-স্ত্রী (১৯৮৭)
হীরামতি (১৯৮৮)
দুই জীবন (১৯৮৮)
বীরঙ্গনা সখিনা (১৯৮৯)
আপন ঘর (১৯৯০)
ভাই বন্ধু
উছিলা
লেডি ইন্সপেক্টর
খুনের বদলা
আজকের হাঙ্গামা
স্ত্রীর পাওনা (১৯৯১)
শ্বশুর বাড়ি (১৯৯১)
চাকর (১৯৯২)
বেপরোয়া (১৯৯২)
লক্ষ্মীর সংসার (১৯৯২)
ভয়ংকর সাত দিন (১৯৯৩)
পাপী শত্রু (১৯৯৫)
আজকের সন্ত্রাসী (১৯৯৬)
দূর্জয় (১৯৯৬)
লুটতরাজ (১৯৯৭)
গুন্ডা পুলিশ (১৯৯৭)
স্নেহের প্রতিদান (১৯৯৯)
শেষ উপহার
চরম আঘাত
অপরাধী
কালিয়া
কাল সকালে (২০০৫)
চার সতীনের ঘর (২০০৫)
নয় নম্বর বিপদ সংকেত (২০০৭)
আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা (২০০৮)
মেঘের কোলে রোদ (২০০৮)
প্রিয়তমেষু (২০০৯)
মাটির ঠিকানা (২০১১)
হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ (২০১১)
দ্য স্পিড (২০১২)
তবুও ভালোবাসি (২০১৩)
পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী (২০১৩)
কঠিন প্রতিশোধ (২০১৪)
জোনাকির আলো (২০১৪)
মুক্তি (২০১৪)
অন্তরঙ্গ (২০১৫)
দুই পৃথিবী (২০১৫)
রাজাবাবু (২০১৫)
আইসক্রিম (২০১৬)
সুইটহার্ট (২০১৬)
ধূমকেতু (২০১৬)
যে গল্পে ভালবাসা নেই (২০১৭)