শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের সাথে আমাদের সংযোগ বাড়াতে চাই-পার্বত্য উপদেষ্টা সকল টেলিভিশন চ্যানেল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ‘জুলাই অনির্বাণ’-শীর্ষক ভিডিওচিত্র প্রচারের উদ্যোগ আ.লীগ নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে : জামায়াত আমির ব্রেক ফেল হয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে ২ কিঃমিঃ দূরে গিয়ে থামলো ট্রেন গণমাধ্যমের অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় সভা আয়োজনসহ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন জনাব বাহারুল আলম নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের পরিচয় কালিগঞ্জে আছিয়া লুতফর প্রিপারেটরি স্কুলে মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত সলেমান মামুন ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে ডিএমপির ৩৮তম পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন শেখ মোঃ সাজ্জাত আলী

পঞ্চাশে পা : তৌফিক জহুর

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩, ১২.১৮ পিএম
  • ১২০ বার পঠিত
একজন মানুষ পঞ্চাশ বছর ধরে পৃথিবীর আলো হাওয়ায় পথ চলছেন। ভাবতেই ভালো লাগে, আনন্দের আতিশয্যে বেলীফুলের সৌরভের মতো সৃজনের সৌরভ বিকিয়ে চলেছেন। আমি কথা বলছি কবি ওবায়েদ আকাশ কে নিয়ে। হয়তো কোনো এক বসন্ত বাতাসে, কিংবা বর্ষণমুখর সাঁঝবেলায়, কিংবা কনকনে শীতের সকালে এ পৃথিবীর সুলতানপুরে তাঁর আম্মার কোলজুড়ে তিনি এসেছেন। বেড়ে উঠেছেন সুলতানপুরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য মোড়ানো প্রকৃতির কোলে। হৃদয় যাঁর নরম মাটির মতো। পৃথিবীর সকল কবিই অকস্মাৎ একদিন কোনো এক ঘটনা, অনুঘটনা,প্রতিঘটনার মধ্যে দিয়ে নিজের কবিতার সোনালী রোদ মাখা পথে যাত্রা শুরু করেন। কবি ওবায়েদ আকাশও গত শতাব্দীর অস্তমিত সূর্যের শেষ দশকে আবির্ভাব। তিনি নব্বই দশকের একজন কবি। সমসাময়িক অনেক কবিই একটি দশকে পথযাত্রা শুরু করেন। কিন্তু চূড়ান্ত অধ্যবসায়ের মধ্যে দিয়ে পথ চলে অল্প কয়েকজন টিকে থাকেন। কেউ কেউ আশ্রয় নেন ইতিহাসের ফুটনোটে। কেউ বা টিকা, টিপ্পনীতে। আর কেউ কেউ অবস্থান পরিস্কার করে হেডলাইনে। ওবায়েদ আকাশ নব্বই দশকের কবিতার হেডলাইনে আছেন। সমসাময়িক সময়ের কবি হওয়ার সুবাদে খুব কাছাকাছি থেকে তাঁর কবিতার গতিপথ অনুসরণ করে অত্যন্ত এটুকু উপলব্ধি করেছি, তিনি একটা জীবন সাহিত্যের জন্য দান করেছেন। কবি আল মাহমুদ একদিন আমাকে বলেছিলেন, ” সাহিত্য পুরো জীবন চায়। যে লেগে থাকবে তাঁকে সাহিত্য ফেরাবে না খালিহাতে”…। কথাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। নব্বই দশকের কবিতার আলো বাতাস প্রেক্ষাপট অন্য দশক থেকে আলাদা, স্বকীয়তার মাধুর্যে বিকশিত। অধিকাংশ নব্বই দশকের কবি সমাজ একই স্টাইলে কবিতা চর্চা করেননি। নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে ক্রমাগত সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন অনেক কবি। সেজন্যই তাঁরা আজ বিশিষ্ট। কবি ওবায়েদ আকাশের কবিতার মধ্যে নিরীক্ষার প্রবণতা প্রবল। একই জায়গায় ঘুরপাক খায়নি তাঁর কবিতা। খরস্রোতা নদীর মতো তাঁর কবিতা চারপাশের সৌন্দর্য জগতকে অবলোকন করে এগিয়ে গেছে নতুন কোনো মোহনায়। একাধারে কবি, লিটল ম্যাগাজিন ” শালুক ” সম্পাদক, অধুনাবাদী আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় পুরুষ এবং পেশাগত জীবনে একটি জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য সম্পাদক…… অর্থাৎ একজন ওবায়েদ আকাশ চারটি সত্তা ধারণ করে পথ চলেন। লক্ষ্য করুন, সুবহে সাদেক থেকে শাম পর্যন্ত তিনি কবিতার মধ্যেই আকন্ঠ ডুবে থাকেন। কবিতাই যেন তাঁর ঘরবাড়ি, সংসার ও কাঙ্ক্ষিত প্রেম। এমন একজন মানুষ বহুমুখী পথচলাতে স্টিয়ারিং ধরে রেখেছেন কবিতার দিকে। কবিতার জন্যই সকালে বাজার করা, দুপুরে খাওয়া, রাতের খাওয়া, সকালের নাস্তা করা কিংবা সমুদ্র বিলাস, পাহাড় দর্শন, নদী ভ্রমণ, প্রকৃতির কোলে বসে থাকা কিংবা সুলতানপুরের মেঠোপথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে আনন্দ বিলাস সঙ্গে জীবন সাথীকে পাশে রাখা….. এসব কিছুই তার কবিতার জন্য।
পঞ্চাশের আঙিনায় স্বাগতম জানাই কবি ওবায়েদ আকাশ কে। পরিপূর্ণ যুবকের খাতায় নাম লেখালেন তিনি। তাঁর হাত বেয়ে বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় আরো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য বৃক্ষ জন্মাবে এটা আমি আশা করতেই পারি। যে কবি যত বেশি স্বতন্ত্র ও অভিনব তিনি তত বেশি নিঃসঙ্গ থাকেন। কাব্যের চলতি অভিধানের সাহায্যে তাঁকে বোঝার চেষ্টা না করে যদি তাঁর কাব্যজগতের অভিধা অনুসরণ করি, তাহলে তাঁকে বুঝতে সুবিধা হবে। আনন্দ ও দুঃখের অভিজ্ঞতায় কবির অন্তরে চেতনার জন্ম হচ্ছে। সেই চেতনা দিয়েই কবি জীবনের স্বরূপ উপলব্ধি করবেন। সময় তো গড়িয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের ঢেউ এর মতো। কবি ওবায়েদ আকাশ এই চেতনার জগতেই জীবন ও মৃত্যুকে, আনন্দ ও বেদনাকে, সৃষ্টি ও ধ্বংস কে, বাস্তব ও স্বপ্নকে অনুভব করেছেন। সে জন্যই নব্বই দশকের এই কবি ব্যতিক্রম। যে কবি সৌন্দর্যের আরাধনা করেন কবিতার দেহে তাঁকে কবিতা ফেরায় না। নব্বই দশকের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কবির ক্ষেত্রে একটি কথা আমি প্রায়শ বলে থাকি। সেকথা কবি ওবায়েদ আকাশ এর জন্যও প্রযোজ্য, ” যথার্থ নতুন কবির সঙ্গে তাঁর পূর্ববর্তী কবিদের, বিশেষত অব্যবহিতপূর্ব পূর্বসূরীর তুলনা না করে তাঁর স্বাতন্ত্র্যটুকু আলোচনা করলেই তাঁর বিশিষ্টতা ও মহত্ব পরিস্ফুট হয়”। আমরা তাঁর কবিতার সৌন্দর্যে ফিরে যাই। যেখানে উপমা, উৎপ্রেক্ষা, উৎপ্রাস, উৎপ্রাসন, রূপক লালিত্যের সঙ্গে আভাসিত। চিরকালের সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক ও মানবিক পরিবেশ কে গ্রহণ করে তিনি নিজেই নিজের ঐতিহ্য গড়ে তুলেছেন। এভাবেই ব্যক্তি চেতনা আর সমাজ চেতনার মধ্যে কবি সমন্বয় সাধন করেছেন।
কবি ওবায়েদ আকাশ এর একটি কাব্য গ্রন্থের আমি বিশদ আলোচনা করেছি।যা পাঠে তাঁর কবিতার বিশিষ্ট দিক জানা যাবে। ” নির্জনতা শুয়ে আছে সমুদ্র প্রহরায়” কাব্য গ্রন্থের আলোচনাটি সন্নিবেশিত করছি, একজন কবি ওবায়েদ আকাশ প্রসঙ্গে উপরে যে বয়ান করেছি তার যথার্থতা বুঝতে।
“নির্জনতা শুয়ে আছে সমুদ্র প্রহরায়”: পাঠ পরবর্তী ভাবনা
ব্যক্তিগত বয়ান:
সমসাময়িক দশকের কবিকে নিয়ে আলোচনায় কিছুটা মুশকিল আছে। একই সময়ের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা। নব্বই দশকের কবিরা সবাই বয়সে পঞ্চাশের কাছাকাছি। কেউ-কেউ পঞ্চাশ পাড়ি দিয়েছেন। তিন দশক যাঁরা কবিতার ভূমিতে বিচরণ করছেন তাঁদের কবিতা একটা পথ নির্মাণ করছে বৈকি। নব্বই দশকে এমন বেশ ক’জন কবি ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র একটা রাজপথ নির্মাণ করে ফেলেছেন। আমরা কথা বলতে চাইছি ওবায়েদ আকাশের সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ “নির্জনতা শুয়ে আছে সমুদ্র প্রহরায়” নিয়ে। কবির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত দূরত্ব হলো একটি নদীর এপার আর ওপার। কবির পৈত্রিক নিবাস রাজবাড়ি আর আমার পৈত্রিক নিবাস মানিকগঞ্জ। মাঝখানে বিশাল নদী। কবির জন্ম ১৯৭৩ সালের ১৩ জুন, আমি ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর। অদ্ভুত মিল হলো তিনি লিটলম্যাগ, ‘শালুক’ সম্পাদনা করছেন ২৪ বছর আর আমিও লিটলম্যাগ ‘উদ্যান’ সম্পাদনা করছি ২৪ বছর। লিটল ম্যাগাজিন শালুক ইতোমধ্যে তুমুল আলোচিত। ” শালুক” এর ইতোমধ্যে বেশ কটি আলোচিত সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদক হিসেবে যথেষ্ট একটা দাগ রেখেছেন বাংলা সাহিত্যের আঙিনায়।
তাঁর কবিতার ভাষায় একটা বৈচিত্র্য আমরা লক্ষ্য করি। একটা বড়ো ক্যানভাস জুড়ে কোনো শিল্পী ছবি আঁকতে গেলে যেমন অনেক দিক ও বিষয় খেয়াল রাখেন তেমনি কবি ওবায়েদ আকাশের কবিতার শরীরে আমরা বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর কিছু চিত্রায়ন খুঁজে পাই। আমাদের অনুসন্ধিৎসু হৃদয় আলোড়িত হয়। আমরা তাঁর কবিতার গভীরে প্রবেশ করে একটা অদ্ভুত সুখ অনুভব করি। সে বিষয় নিয়ে আমরা বয়ান করতে যাচ্ছি।
ওবায়েদ আকাশের কবিতার ভাষা:
তাঁর কবিতা পাঠে প্রথমেই চোখ স্থির হয়ে যায়। কোনো একটা নির্দিষ্ট অভিধায় শনাক্তকরা যায়না। প্রতিবাদের, বিদ্রোহের, সংশয়ের, ক্লান্তির, সন্ধানের, বিস্ময়ের, আনন্দের, অর্ন্তমুখিতা, সামাজিক জীবনের সংগ্রাম, আত্মিক জীবনের তৃষ্ণা, এই সবগুলো ধারাই তাঁর ভিন্ন ভিন্ন কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতি যুগেই নতুন কবিকে নতুন ঐতিহ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হয়। নতুন-নতুন উপাদান সংযোজিত করতে হয়। উপাদান বলতে আমরা বিষয়বস্তু ও দৃষ্টিভঙ্গি, দুয়েরই কথা বলছি। বিষয়বস্তু চিরন্তন অথবা প্রাচীনও হতে পারে, কিন্তু দৃষ্টিভঙি যুগোপযোগী হলে পুরোনোকেই নতুন বলে মনে হবে। কাজেই বিষয়বস্তু তুলনায় দৃষ্টিভঙির মাহাত্ম্য অনেক বেশি। ওবায়েদ আকাশের কবিতায় জীবনভঙি ও মূল্যবোধের চিন্তা জাগানিয়া আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। শুধু আত্মপ্রকাশ নয় আত্মবিকাশও বটে।
প্রত্যেক দশকেই নতুন চিন্তা নিয়ে একদল কবিতা কর্মীর আবির্ভব হয়। দশকের শুরুতেই একজন কবির নতুন বৈশিষ্ট্যগুলি চোখে ধরা পড়েনা। কিছুদিন পর্যন্ত অগ্রজদের ঘোরলাগা কবিতাগুলো কুয়াশার মতো চারপাশ ঘিরে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে নিজস্ব পথ ও মত তৈরি হয়। নব্বই দশকে বাংলা কবিতার আকাশ শুরু থেকেই বেশ উজ্জ্বল। সেখানে ওবায়েদ আকাশ কবিতা নিয়ে নিরীক্ষায় মেতে ওঠেন। শুরু থেকেই যেন জানতেন, নিজস্ব স্বর ও পথ নির্মাণ করতে হবে। পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতি নব্বইয়ের কবিদের ব্যাপক পরিবর্তন আনে মনোভঙির। নতুন সামাজিক পরিবেশে নতুন চিন্তাধারার জন্ম হয়। ওবায়েদ আকাশের কবিতা নির্মাণ আমাদের বোধের দরোজায় কড়া নাড়ে। আমরা আশ্চর্য্য হয়ে লক্ষ্য করি, তাঁর কবিতা বলার ঢঙ আমাদের নতুন কিছু শোনাতে চাচ্ছে। তাঁর কবিতা যেন গভীর রহস্যে প্রবেশের অধিকার দিলো আমাদপর। আমরা লক্ষ্য করি,
“আমাদের পুত্র শস্য আবহমান দুটো ছেঁড়া বাঁশের কাঠি
জোড়া দিতে গিয়ে কতোই না কসরত করে যাচ্ছে।
আমি দূর থেকে দেখছি আর মনে মনে লোহা লক্কর
হাতুড়ি বাটালি, সুচ তুরপুনের অদ্ভূত প্রয়াশ শব্দ শুনতে পাচ্ছি
অথচ শব্দগুলোয় আমুন্ডু বনেদিপনা আর আভিজাত্যের ধ্বনি প্রতিধ্বনি
যারা কার্যত আমার হৃদয়ের গভীর থেকে গভীরে বসে
অসহ্য বিপন্ন ক্রোধে আমাকে ছিটকে ফেলেছে নির্জনতম দ্বীপে।”
[নির্জনতা শুয়ে আছে সমুদ্র প্রহরায়, পৃষ্ঠা-১৫]
নতুন জ্ঞানের তরিকায় জগৎ, জীবন, বিজ্ঞান ও মানুষকে দেখাতে চাচ্ছেন একটা ঘোর তৈরি করে। এই ঘোর সচরাচর সব কবির কলমে থাকেনা। নব্বই দশকের শুরুতে জীবনানন্দ দাশ, বিনয় মজুমদার, আল মাহমুদ দ্বারা অনেকেই প্রভাবিত ছিলেন। কিন্তু স্বল্প সময়ের ব্যবধানে প্রভাবিত কবিরা দ্রুত নিজের পথে হাঁটতে শুরু করেন। ওবায়েদ আকাশ এই প্রভাব থেকে মুক্ত। জীবনানন্দ দাশের সময়ে তাঁর সমসাময়িক তাঁর কবিতার ভাব, ভাষা, চিন্তুা বুঝতে না পেরে ভুল সমালোচনা করতেন। তিনি তাঁর সময় থেকে শত বছর এগিয়ে কবিতা লিখছেন এটা সে সময়ের কবি, সমালোচক অনেকেই বুঝতেই পারেননি। নব্বই দশকের কবিতায় জাদুবাস্তবতা, অস্তিত্ববাদ, রোমান্টিকতা, আধুনিকতা, উত্তরাধুনিকতা অনেক বিষয় এসেছে। ওবায়েদ আকাশ একটি দর্শনকে সামনে নিয়ে কাজ করছেন। তার নাম ‘অধুনাবাদ’। জীবনানন্দ দাশ একটা নতুন প্যাটার্নে কবিতা লিখেছেন। যার আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে বাংলা সাহিত্যের সর্বত্র। ওবায়েদ আকাশ সে দর্শনকে লালন করে কবিতায় নিমগ্ন তা দেশ কাল ঐতিহ্য লালিত।
“এঘর থেকে ওঘর ছোটাছুটির কথা ভাবতে ভাবতে প্রায়ান্ধ একটি রাত
অনুভব অনুভূতিহীন একটুকরো দুষ্প্রাপ্য নিশ্বাসের আসা যাওয়া ঘিরে ব্যক্তিগত বিছানায় পড়ে থাকি
ভোর হতে না হতেই আমার জন্য তৈরি হতে থাকে সুস্বাদু ঝোলের ব্যঞ্জন
নওয়াবী-বাদশাহী শত শত লোভনীয় অন্নের কদর, যথা প্রকার”
[নির্জনতা শুয়ে আছে সমুদ্র প্রহরায়, পৃষ্ঠা-১৫]
আমরা চমকে উঠি ‘প্রায়ান্ধ একটি রাত’, ‘দুষ্প্রাপ্য নিশ্বাস, ‘ব্যক্তিগত বিছানা’ শব্দগুলো পাঠ করে। রাত যখন প্রায়ান্ধ কী সীমাহীন কল্পনা। নিশ্বাস অতি মূল্যবান। নিশ্বাস না থাকলে এ দেহের কোনো মূল্য নেই। নিশ্বাস দুষ্প্রাপ্য। কথাটা কবি এমন অবলীলায় বললেন, আমরা শিহরিত হলাম। প্রত্যেক মানুষ কোথাও না কোথাও ঘুমায় কিন্তু ওবায়েদ আকাশ যখন ‘ব্যক্তিগত বিছানা’ শব্দটি প্রয়োগ করেন স্বতস্ফূর্তভাবে তখন কবিতা পাঠে আমরা নড়েচড়ে বসি। কৌতূহলভরে আমরা পাঠ করতে থাকি তাঁর কবিতার ডালি। কবি মাত্রেই স্বতন্ত্র কাব্যবঙি থাকে। যাঁর থাকেনা তিনি কবি নন, অনুকারক। যুগ এগিয়ে যায়। যুগের মানসিকতা ক্রমেই জটিল হয়, প্রসারিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশের জামানায় সেলফোন ছিলোনা। ফেসবুক ছিলোনা। তাঁরা তাঁদের যুগের মানসিকতাকে ব্যক্ত করবার কাজ সার্থকভাবে করেছেন। তেমনি নব্বই দশকের কবিরা যুগের মানসিকতা কে উপলব্ধি করে নিজের পথ নির্মাণে কাজ করে চলেছেন। শব্দ ব্যবহারের ক্ষমতার উপর ভাষা তৈরির কাজ নির্ভর করে। ভাষার অন্তর্গত শব্দ- অন্যভাষা থেকে শব্দ এনে ব্যবহারের কথা নয়। শব্দ নিয়ে যারা বিব্রত ও বিপন্ন, কবিতাচর্চা তাঁদের কর্ম নয়। ওবায়েদ আকাশ শব্দে বিপন্ন নন, দারুণ দক্ষ। তাঁর শব্দ চয়ন লক্ষ্য করলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হয়। আমরা তিনটি উদাহরণ লক্ষ্য করি:
* ম্যাকডোনাল্ডসে খেতে বসে
ভাতের অর্ডার দিতেই একজন
তেড়ে এসে অসহ্য ইংরেজিতে বললো:
“আপনি কি এখনো আগুনেই ঘুমান আর উত্তাপে জাগেন?
আমি তিরস্কার টের পেয়ে- কিছু না বোঝার ভান করেই আবার বলি:
“ভাত, সাদা ভাত, সঙ্গে ইলিশ মাছের ঝোল দেন
মুহূর্তে সমস্ত রেস্তোরাঁয় মনোযোগ আমার দিকে হামলে পড়েছে
বলিভিয়ান মেয়েটি কচ্ছপের পিঠের মতো বড়ো চোখ করে দেখলো
জ্যামাইকান ছেলেটি তার আইরিশ বান্ধবীর দিকে এমন করে তাকালো যে
এমন কথা তারা জীবনে শোনেনি।
[বাণিজ্য ঘুমিয়ে গেলে তুমি বাংলাদেশ, পৃ-২২]
* সমস্ত দিনের নিবিড় তাড়না ভাঁজ করে
সন্ধ্যার আপেক্ষিকতায় শামসুল আমাকে বসতে দিয়েছে নকশিকাঁথায়
আমি গুড়ের পট ধরে কালো পিপঁড়েদের উপরে ওঠার দৃশ্যে
নিজেকে মিলিয়ে নিয়ে যেই শামসুলকে হারিয়ে ফেললাম-
সে আমার সম্মুখে চার পা ওয়ালা এক টেবিলের
জড় জীবনের উপর দেয়াল ঘড়িটি খুলে এলোমেলো ছড়িয়ে দিলো
বললো, ঘড়িটির যন্ত্র-যন্ত্রাংশের ধুলায় হাত পড়লেই
ব্যথায় ককিয়ে ওঠে আমাদের মার্বেল খেলার দিন।
প্রতিটি কাঁটার তীক্ষèতায় হাত পড়লেই রক্তাক্ত হয় কুয়াশাকূজন
[শামসুল, হেমন্ত ও প্রাচীন জীর্ন ঘড়ি, পৃষ্ঠা- ২৪]
* কেউ একজন ঘাসের ওপর বিছিয়ে রেখেছে
বিধবা নারীর সিথি
আমি তাতে আঙুল স্পর্শ করতেই
তার তুমুল দাম্পত্য
হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল, বৃষ্টি…
যখন থেকে বৃষ্টির চাষবাস হচ্ছে
প্রভূত কারণে বাংলার বধূরা
বিধবা হতে শুরু করেছে-
তোমাদের খাঁচায় পোষা বৃষ্টি
আপন গৃহে আশ্রয় খুঁজে পেলে
বিধবা হতে আর
প্রেম থেকে পরিণয়ের প্রয়োজন পড়বে না
[বিধবা নারীর সিঁথি, পৃষ্ঠা- ৩৩]
তিনটি কবিতার উদাহরণ দিয়েছি আমরা। তিনটি কবিতায় অপরূপ চিত্রকল্পের যে বয়ান কবি করেছেন তা আমাদের মোহময় করে দেয়। জীবনান্দ দাশ ‘কবিতার কথা’ প্রবন্ধে বলছেন, “সৃষ্টির ভিতর মাঝে মাঝে এমন শব্দ শোনা যায়, এমন বর্ণ দেখা যায়, এমন আঘ্রাণ পাওয়া যায়, এমন মানুষের বা এমন অমানবীয় সংঘাত লাভ করা যায়- কিংবা প্রভূত বেদনার সঙ্গে পরিচয় হয়, যে মনে হয় এই সমস্ত জিনিসই অনেকদিন থেকে প্রতিফলিত হয়ে আরো অনেকদিন পর্যন্ত হয়তো মানুষের সভ্যতার শেষ জাফরান রৌদ্রালোক পর্যন্ত কোথাও যেন রয়ে যাবে, এই সবের অপরূপ উদগিরণের ভিতরে এসে হৃদয়ে অনুভূতির জন্ম হয়, নীহারিকা যেমন নক্ষত্রের আকার ধারণ করতে থাকে তেমনি বস্তুসঙ্গতির প্রসব হতে থাকে যেন হৃদয়ের ভিতর। [পৃ-১৪-১৫]
ওবায়েদ আকাশের হৃদয় সৃষ্টি বর্ণনায় মুখর থাকে। তাঁর দীর্ঘ বর্ণনামূলক কবিতা পাঠে এমনটাই মনে হয়। “আধুনিক কবির মানসলোকের গঠনে পূর্বজ কবিমন কিছু সংহত হয়েছে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে’। (কবিতার কথা, পৃ- ৪৩)। বাক্যটি এজন্য সংযুক্ত করলাম, নব্বই দশকের কবিদের শুরুটা ত্রিশ, পঞ্চাশের দশকের অগ্রজ দ্বারা কিছুটা সময় আচ্ছন্ন ছিলো। ওবায়েদ আকাশের ‘নির্জনতা শুয়ে আছে সমুদ্র প্রহরায়’ কাব্যগ্রন্থ পাঠে মনে হয়েছে তিনি শুরু থেকেই স্বতন্ত্র আধুনিক চেতনাকে কবিতায় প্রকাশ করতে সচেষ্ট হয়েছেন।” ভালো কবিতা কখনো ফ্যাশনদুস্ত হতে পারেনা। যা সত্যিকারের নতুন তা নিশ্চয়ই পুরনো। যে কবিতা তার আদিতম রূপ না পেল সে কবিতায় কবি তার কাজ শেষ করেননি বুঝতে হবে। কোনো কবিতা যতই প্রাচীনতার দিকে যাবে ততই আধুনিক হয়ে উঠবে। আপাত- আধুনিকতা চলে যাবে, এই কবিতা তখনও নবীন থাকবে”। [কবি জীবনানন্দ দাশ: সঞ্জয় ভট্টাাচার্য, পৃ-১৯]
“শালিক তাড়াতে গিয়ে উঠোন ভর্তি ধানে
আকণ্ঠ তলিয়ে গেছি
আর আমাকে টেনে তুলছে
হালটের ঢালে এলায়িত অশান্ত দুপুর
ছোট্ট পুকুরের কাঁধে কচুরিপানার বনে মাছেদের অন্তিম খলবল
গরু চরাতে গিয়ে ঘাসফুলের আদরে
পালানে লুটিয়ে পড়েছি-
আমাকে মাতাল করেছে
রসের হাড়িতে গর্ভবতী খেজুরের প্রকান্ড গাছ
পলো নিয়ে কাঁধে পাড়ার লোকেদের হৈ হুল্লোড়, হাঁক”।
[শালিক তাড়াতে গিয়ে, পৃষ্ঠা-৫০]
“রসের হাড়িতে গর্ভবতী খেজুরের প্রকান্ড গাছ”- এই একটি পংক্তিতে ওবায়েদ আকাশ উপমার ভাবাবেগের যে চিত্র এঁকেছেন তা তাঁর কাব্যভাষাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এমন কল্পনা আর শব্দ প্রয়োগে আমাদের হৃদয় আনন্দের আতিশয্যে দুলতে থাকে। হৃদয়ের আলোতে, কল্পনার আলোতে কবি যে পংক্তি সৃষ্টি করেছেন তা কাল পেরিয়ে মহাকালের পথে যাত্রা শুরু করেছে। আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ধারণ করে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র একটা পথ কবি নির্মাণ করেছেন, জীবনানন্দ দাশ ‘কবিতার কথা’ প্রবন্ধে যখন লিখছেন, “সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি; কবি- কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্য বিকিরণ তাদের সাহায্য করছে।” কল্পনার ভিতরে চিন্তা, ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতার ত্রিমুখী মিশেল স্রোত যখন প্রবাহিত হয় তখন সেই কবি ধারণ করেন কল্পনামনীষা। কল্পনার সহায়তাতেই হৃদয়ের ভিতর একটা চিত্র অঙ্কিত হতে থাকে। তা প্রসরিত হয় শব্দের কারুকাজময় নকশায়। ওবায়েদ আকাশ নতুন সৃষ্টির এক অভিজ্ঞতার ডালি পাঠকের সামনে হাজির করেছেন। যা একান্ত নিজস্ব স্টাইল। তাঁর কবিতাগুলো জীবনের কাছাকাছি শিল্পশুদ্ধ কোনো বস্তু। কবিতা হলো প্রতিবার এক নতুন অভিজ্ঞতা। একটি কবিতা পড়ার সময় এই অভিজ্ঞতা হয় এবং এটাই কবিতা। কবিতার মধ্যে মানুষ চিরকাল সৌন্দর্য খুঁজে ফেরেন। তাই শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা কবিতা। নব্বই দশকের কবি ওবায়েদ আকাশের “নির্জনতা শুয়ে আছে সমুদ্রে প্রহরায়” কাব্যগ্রন্থের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে আছে। অসংখ্য নজরকাড়া পংক্তি হাতছানি দেয়। কবি মালার্মের অবিস্মরণীয় সেই উক্তি মনে পড়ে গেল, কবিতা শব্দের দ্বারা সৃষ্টি হয়, ভাবের দ্বারা নয়।আমরা ওবায়েদ আকাশের কবিতায় শব্দের কিছু ক্যারিশমাটিক বিষয় তুলে ধরছি।
* আর সেই চান্সে একা একা তুমি মনের মতো গাছে গাছে পোষ্টার ঝুলাবা জানি
‘আহা কী নিঃসঙ্গতা’। ‘ও পরম একাকীত্ব’! ‘হে কবিতা।”
[ভাঙা টুল, সিংহাসন ও স্ত্রী বিষয়ক, পৃ:-৯]
* আর আমি পাখিদের মুখরতা ধরে ঝুলে ঝুলে
ঘুরে আসি উজান পৃথিবী, প্রতিস্রোতা নদী, শতস্পর্ধী বৃক্ষময়তা
বুকে ধরে রাখি মাছেদের সন্তরণ ভাষা, পাহাড়ের বেবাক ঋদ্ধতা
[সারমেয় ধুলা, পৃ- ২৭]
* আমার আড়াই বছরের কন্যা
ফ্রিজ থেকে একটি পুরনো সেভেন-আপের বোতল বের করে
তার মায়ের হাতে দিয়ে বলল:
“মা দেখো এটা বাবার গন্ধ”
শুনে আমরা বিস্মিত হলাম। এবং বোতল শুঁকে বুঝলাম
কোনোদিন তাতে বিশেষ ধরণের পানীয় জমা রাখা ছিলো।
[বাবার গন্ধ, পৃ- ২৮]
* ঋতুমতী কুয়াশার সর্ষেফুলে
হাত ভেজাতে ভেজাতে তোমার কাছে পৌঁছানোর আগেই
মুখস্থ করি আবহাওয়া সংবাদ
‘অকাল ঝড়ে উড়ে যেতে পারে গর্ভবতী ফসলের ডগা’
[শীতঋতু হে, পৃ- ৪২]
* হাওয়া হাওয়া এখন নিশ্চুপ বসন্ত ঋতু
এখন ইলিশের কাঁটায় শৃঙ্খলিত গুগল সত্যতা
সবুজ দ্যুতিময় তোমার পোশাকের আঁশ
প্রান্তধরে টান দিতেই ধূপসাদা মেঘফুল ঘিরে
প্রিয়তমার অবিশ্বাস্য বিরহযাপন
ষড়ঋতুর প্রসঙ্গ বিন্যাসে ধানগাছের পোয়াতি কাহন
তুমিও তো চেয়েছিলে
শ্যামল সন্ধেরা ঘাটে বাঁধা খেয়া পারাপারকালে
এই প্রথম শিশিরস্নাত হবে, আর
কাশফুলের স্বাস্থ্যকর হাটে তুমি আমি ফিরে যাবো
বিহঙ্গ যৌবনে
[ধানগাছের পোয়াতি কাহন, পৃ- ৫৭]
আমরা পাঁচটি কবিতার উদাহরণ দিলাম। রবার্ট লুই স্টিভেনশনের একটি কথা স্মরণযোগ্য। তিনি বলছেন, “শব্দ মূলত প্রাত্যহিক জীবনের কর্মকান্ডের জন্যই, আর কবি সেই শব্দ দিয়ে এক ধরনের জাদু সৃষ্টি করে”। ওবায়েদ আকাশ যখন বলছেন, ‘উজান পৃথিবী’, ‘প্রতিস্রোতা নদী’, ‘শতস্পর্ধী বৃক্ষময়তা’, ‘বোতল শুঁকে’, ‘গর্ভবতী ফসলের ডগা’, ‘ধানগাছের পোয়াতি কাহন’, ‘পোশাকের আঁশ’, ‘কাশফুলের স্বাস্থ্যকর হাট’, ‘পরাগের পাঁয়তারা’, ‘মাতাল করা ভোর’- এমন শব্দগুলো পাঠে চোখ স্থির হয়ে যায়। অত্যন্ত সহজ, সরল, প্রাঞ্জল উপমার শব্দগুলো আমাদের চিত্তে দোলা দেয়। সমসাময়িকের কলমের ডগায় যখন এমন অসংখ্য শব্দ মিছিল করে তখন সেই কবিকে অভিবাদন জানাতেই হয়। সমস্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিজ্ঞতার টানাপোড়েনে যে ব্যক্তিসত্তার সৃষ্টি হয়, তা যেমন ব্যাপক তেমনি গভীর। নাগরিক জীবনের হৃদয়হীন যান্ত্রিকতায় ক্লান্ত হয়েও কবি যেমন তার চলমান জীবনের মধ্যে জনতার যাপিত বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতি দেখতে পেয়েছেন, তেমনি আবার গ্রামীন পটভূমির ভগ্নদশায় আশাহত না হয়ে নির্জনতায় প্রশান্তি খুঁজেছেন। তাঁর কবিতায় প্রেম, ভালোবাসা, দর্শন, সমাজ, ঐতিহ্যের পাশাপাশি করোনা, ধু-ধু করা দিক ছোঁয়া মাঠ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু উপস্থিত হন। “বঙ্গবন্ধু, বড় হচ্ছে আপনাকে না-দেখার মিছিল”- কবিতাটি ব্যক্তিচেতনা ও চিন্তার সমন্বয়ে সৃষ্টি এক বলিষ্ঠ- জীবনবোধ। কবিতাটির প্রতি লাইন ভাবনার খোরাক উদ্রেক করে।
ওবায়েদ আকাশ নিরীক্ষা প্রবণ কবি। বাস্তবের প্রতি গভীর আসক্তি শব্দচেতনার মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে। আশির দশক পর্যন্ত বাংলা কবিতার ভাষার একটা প্যাটার্ন ছিলো। নব্বই দশকে এসে সে প্যাটার্ন পাল্টে যেতে থাকে। বিবর্ণ ও স্বাদহীন শব্দের মধ্যে নব্বই দশকের কোনো কোনো কবি নতুন রক্তের সঞ্চার করেন। ফলে কবিতায় দেশ, কাল, ঐতিহ্যের গৌরব ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি হয়। ওবায়েদ আকাশ এই নতুন ভাষা নির্মাণের একজন সবিশেষ যত্নবান কবি। তাঁর “নির্জনতা শুয়ে আছে সমুদ্র প্রহরায়” কাব্যগ্রন্থটির অধিকাংশ কবিতাই দীর্ঘ। কিন্তু পাঠ করতে আমাদের আলসেমি পায়না। আমাদের চিত্তে দোলা দেয় আনন্দ। আমরা তাঁর কবিতার অন্দরমহলে প্রবেশ করে পেয়ে যাই হীরে, মনি, জহরত। জয়তু বাংলা কবিতা। জয়তু নব্বই দশক।
আশা ও ইচ্ছার শেষ বয়ানঃ
পঞ্চাশে পা দিলেন কবি ওবায়েদ আকাশ। শতায়ু হোক কবির জীবন। জীবনের আশ্চর্য সাক্ষাৎ লাভ করে হৃদয়ে কবিতা চেতনার বর্তিকাটি জ্বালিয়ে অদ্ভুত আঁধার সময়ে উজ্জ্বল প্রহর হাত ধরে আসতে থাকুক ওবায়েদ আকাশের মাধ্যমে। সৎকবির কাব্যের অনুভূতির ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থাকুক তাঁর কবিতার শরীরে, চিরটাকাল। সমস্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিজ্ঞতার আলো ও ব্যক্তিসত্তার সৃষ্টিতে ওবায়েদ আকাশ পরিণত হোন এক নতুন স্বরে। একটা বিশাল বৃক্ষে। যাঁর ছায়ায় আশ্রয় নেবে পরবর্তী প্রজন্মের কবি বংশধর।
তৌফিক জহুর
কবি ও সম্পাদক
উদ্যান

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
      1
23242526272829
30      
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com