বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
গণমাধ্যমের অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় সভা আয়োজনসহ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন জনাব বাহারুল আলম নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের পরিচয় কালিগঞ্জে আছিয়া লুতফর প্রিপারেটরি স্কুলে মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত সলেমান মামুন ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে ডিএমপির ৩৮তম পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন শেখ মোঃ সাজ্জাত আলী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা আলেমরাই এক দিন এদেশে নেতৃত্ব দেবেন।।ধর্ম উপদেষ্টা কে এই নতুন ডিএমপি কমিশনার? দৌলতপুরে বসতবাড়িতে ডাকাতির সময় মা-ছেলেকে হত্যার দায়ে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ

সাংবাদিকরা যেমন আছি – সাঈদুর রহমান রিমন

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩, ৯.০৪ পিএম
  • ৭৬ বার পঠিত

 

দেশের ৯ জেলার ১৬টি পয়েন্ট সাংবাদিকদের জন্য ‘ভয়ঙ্কর’ হয়ে উঠেছে। এসব স্থানে দফায় দফায় সাংবাদিক নীপিড়ন, নির্যাতন, মামলা হয়রানি এমনকি হত্যাকান্ডও ঘটেছে। বিপজ্জনক স্থানসমূহে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, চিহ্নিত অপরাধী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমনকি বিরোধী দলের নেতা কর্মিরাও সাংবাদিকদের উপর হামলা চালাতে দ্বিধা করছেন না। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দলীয় চরম কোন্দলে জর্জরিত নেতারা সাংবাদিকদেরও পক্ষে বিপক্ষে ঠেলে দেন এবং পরস্পর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করেন। সারাদেশেই কমবেশি সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা ঘটলেও সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে হুমকিপূর্ণ এলাকাগুলো হচ্ছে, পাবনা, জামালপুর, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ঢাকার সাভার ও ধামরাই, গাজীপুর সদর ও টঙ্গী, নারায়নগঞ্জের সদর, সোনারগাঁও ও রুপগঞ্জ, ঝালকাঠি জেলার সদর ও রাজাপুর। এছাড়া খোদ রাজধানীতেও উত্তরা, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী এলাকা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গত পাঁচ বছরে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণসহ এক অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সাংবাদিক নির্যাতনের অভয়াশ্রম খ্যাত এ জনপদগুলোতে সামাজিক বিদ্বেষ, হানাহানি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আর দখলবাজ-লুটেরা শ্রেণীর একচ্ছত্র আধিপত্য। পেশাদার অপরাধীরাই দন্ডমুন্ডের কর্তা হওয়ায় সর্বত্র অসম পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। এ পরিবেশে সকল শ্রেণী পেশার মানুষজন জিম্মিদশায় থাকলেও মাঝে মধ্যে সংবাদকর্মিরা প্রতিবাদী হওয়ার চেষ্টা করে, ঠিক তখনই তাদের উপর নেমে আসে নানা নির্মমতার খড়গ। তবে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার পেছনেই প্রতিদ্বন্দ্বী সাংবাদিক গ্রুপের নেপথ্য ইন্ধন থাকে। এক্ষেত্রে চিহ্নিত অপরাধী ও দলীয় নেতা কর্মিদের সাংবাদিকতায় অনুপ্রবেশ, অশিক্ষিত শ্রেণীর অপেশাদারিত্ব, অপসাংবাদিকতা, ভূঁইফোড় নানা সংগঠন গড়ে ওঠা, সংবাদের পরিবর্তে টুপাইস কামানোর ধান্ধাবাজিতে বেশি উৎসাহ থাকার কারণেও সাংবাদিকরা হুমকি ও হামলার শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

বিচারহীনতায় বেড়েই চলে বর্বরতা
———-
সাংবাদিকদের উপর সংঘটিত নীপিড়ন নির্যাতনের কোনো কোনো ঘটনা শুনলেই গা শিউরে উঠে। কারো কারো হাত পা গুড়িয়ে দেয়ার বর্বরতায় কেউ চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অথচ সাংবাদিক নির্যাতনের সেসব ঘটনায় এমনকি সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় আজ পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি। ফলে সাংবাদিকদের উপর হামলা, নির্যাতন, বর্বরতার ঘটনা মোটেও কমেনি, বরং দিন দিনই তা আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েই চলেছে। সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর রুনির নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে গত নয়টি বছর ধরে সাংবাদিকরা রাজপথে আন্দোলন করছে, বাদ-প্রতিবাদ, মানববন্ধন বহু হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি, খুনিদের চিহ্নিত পর্যন্ত করা যায়নি। তারচেয়েও পুরনো ঘটনা ঘটেছে রাঙ্গামাটিতে। ২০০৭ সালের ৫ মার্চ নিখোঁজ হন রাঙামাটির সাংবাদিক মো. জামাল উদ্দিন। পরদিন রাঙ্গামাটি পর্যটন এলাকার হেডম্যান পাড়ার বন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে বিগত ১৪ বছর ধরেই তার অপহরণ ও হত্যার বিচার চেয়ে মাসববন্ধন, স্মারকলিপি পেশসহ নানা আন্দোলন চলছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, বের করা যাচ্ছে না জামাল উদ্দিনের খুনিদেরও।
নিকট অতীতের একটি নির্মম ঘটনা সাংবাদিকদের তটস্থ করে তুলেছে। ওই ঘটনায় শিকার সাংবাদিক খুন হননি বটে তাদের গোটা পরিবারকে হত্যার মতোই নির্লিপ্ত করে দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ১০ মার্চ নিখোঁজ হয়েছিলেন কাজল। ৫৩ দিন পর বেনাপোল সীমান্তের কাছে থেকে তাকে ‘আটকে’র তথ্য জানায় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। মামলা তিনটি দায়ের করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর এবং যুব মহিলা লীগের দুইজন নেতা। এরপর সাত মাস ধরে বারবার জামিনের আবেদন করা হলেও তা নাকচ করে দেয় নিম্ন আদালত। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট থেকে তিনটি মামলায় জামিন পান তিনি। অজ্ঞাত অপহরণকারীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পরই গণমাধ্যমকে শফিকুল ইসলাম কাজল বলেছেন, বেনাপোলে ছেড়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত ৫৩ দিন আমার চোখ বাঁধা ছিল, মুখ আটকানো ছিল আর হাতে ছিল হ্যান্ডকাফ। মনে হচ্ছিল যেন একটি কবরের ভেতরে আছি, খুব ছোট একটা জায়গা, একটা জানালা পর্যন্ত ছিল না। আমি শুধু মৃত্যুর প্রহর গুণতাম। সেই অবস্থাটা বর্ণনা করার মতো না। আমি আমার পরিবারের কথা চিন্তা করে সময় কাটিয়েছি। খালি মনে হতো ওদের আর দেখতে পাবো না। মনে হচ্ছিল মারা গেছি আর কোনোদিন ফিরতে পারবো না।” কিন্তু কারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, কেন বা কোথায় তাকে আটকে রেখেছিল, তা তিনি প্রকাশ করতে চাননি। জানাতে চাননি তার অপহরণকারীরা কী চেয়েছিল বা কিসের বিনিময়ে তাকে মুক্তি দিয়েছে।

“আঙ্কেল আমার বাবা সাংবাদিক; বাবাকে মারবেন না”
——————–
আঙ্কেল আমার বাবা সাংবাদিক; বাবাকে মারবেন না। ছোট্ট শিশুটি এই কথাগুলো বলার পরেও ওই পাষন্ডের হৃদয় কাঁপেনি। পিতার হাত ধরা শিশুটির সামনেই এলোপাতারী কুপিয়ে সাংবাদিক লেভিনকে রক্তাক্ত করে দেয়া হলো। কি ছিলো তার অপরাধ? জানতে চেয়েছিলাম গাইবান্ধার প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কাছে। এসব ঘটনা কখনো কখনো নির্বাক বানিয়ে দেয়। তবু আবার ঘুরে দাঁড়াতে হয়; প্রতিবাদে বারবার জেগে উঠতে হয়। ঘুমন্ত বিবেকগুলো বরাবরই চোখ মেলে ঘুমায়। আর হতাশায় ভোর ডেকে আনে। আমি নির্বাক, আমি স্তব্ধ; তবুও হতাশ নই। বেঁচে থাকা লেভিনের রক্তের সঙ্গে জীবন দেয়া নাদিমের রক্তের কোন পার্থক্য নেই। সারা বাংলার সাংবাদিকের একই রক্ত। এভাবে আর কোন সাংবাদিকের রক্ত ঝড়াতে চাইনা। চাই শোষন, নিপিড়ন আর সাংবাদিক নির্যাতনমুক্ত একটি আগামির বাংলাদেশ।

কোনো প্রস্তুতি নেই
——————–
আমরা যারা মাঠ পর্যায়ে সংবাদকর্মি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি নানা কারণেই বহুলোক আমাদের শত্রুতে পরিনত হয়। কখনও অপরাধ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ লেখার কারণে প্রভাবশালী মহলগুলো আমাদের শত্রু হয়, আবার কখনো নিজেদের অনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে আমরা ভালো, স্বজ্জন মানুষজনকেও আমাদের শত্রুতে পরিনত করে ফেলি। তবে যেভাবেই শত্রু হোক সাংবাদিকতায় কেবলই আমার অর্জিত শত্রুকুল তৈরি হয়। অর্জিত শত্রুরা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়, তার উপরেই হামলা চালায়, তাকেই একের পর এক মিথ্যা মামলায় হয়রানি করে সেসবই আমাদের জানা। কিন্তু এসব শত্রু আমার স্ত্রী-সন্তানকে টার্গেট করে প্রতিশোধ নেয়ার পাঁয়তারা চালাবে-তা মেনে নেয়ার মতো প্রস্তুতি কি আমরা রাখি? মোটেও না।

সাংবাদিকরাই যখন ঘোর শত্রু
————সাংবাদিকরাই যখন সাংবাদিকদের ঘোর শত্রু তখন তাদের রক্ষা করে সাধ্য আছে কার? দেশে সাংবাদিক নীপিড়ন, নির্যাতন, হয়রানির যে কোনো ঘটনার খোঁজ নিলেই দেখা যায়, এর নেপথ্যে কোনো না কোনো সাংবাদিক মূল ক্রীড়নকের ভূমিকায় রয়েছেন। কোনো সাংবাদিক দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সংবাদ লিখলেই একদল সাংবাদিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লেখক সাংবাদিককে নানাভাবে হেনস্তা করে থাকে। সাংবাদিক নামধারী ওই দালালদের কারণেই সংবাদ প্রকাশকারী সাংবাদিককে হামলা, মামলার শিকার হতে হয়।সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে অপসাংবাদিকতা করে বেড়ানো সংঘবদ্ধ চক্রের দৌরাত্ম্যের কারণেই প্রকৃত সাংবাদিকদের ঝুঁকির মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। অনেকটা নিজ গৃহে শত্রু বিভীষণ…এটাই সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাংবাদিকতাকে ঝুঁকিমুক্ত করতে, সাংবাদিককে নিরাপদ রাখতে কত শত পেশাজীবী সংগঠন গড়ে উঠেছে, সরকারি ভাবেও নানা পরিকল্পনা আঁকায় ও দৌড়ঝাপের ক্ষেত্রে কোনই কমতি নেই। কিন্তু তারপরও কী সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা নিরাপদ করা যাচ্ছে? হামলা, মামলা, হয়রানির অন্তহীন আক্রমণে পেশাদার সাংবাদিকগণ বারবারই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।

বেঁচে থাকারা যেন জীবন্ত লাশ
——-
যারা দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ হারালেন তাদের জন্য কায়মন বাক্যে প্রার্থনা করি-আপনারা ওপারে ভাল থাকুন। অবিরাম হুমকি, ধমকি, প্রাণ বাঁচানোর আকুতি নিয়ে আপনাদের আর অন্তত দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না। কিন্তু যারা এখনো দেহে প্রাণ নিয়ে ঘুরছে ফিরছে, শহরের এগলি এড়িয়ে, অন্য গলি পালিয়ে জীবন নিয়ে লুকোচুরি খেলতে বাধ্য হচ্ছে। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে একের পর এক মামলা হয়রানিতে দিশেহারা অবস্থায় ফেলা হয়েছে। ঘরে যে সংবাদ কর্মির বাজার নেই, দুমুঠো খাবার যার অনিশ্চিত-মামলার হাজিরা দেয়ার যোগান তার কতোটা কষ্ট তা চেহারা পরখ করলেই টের পাওয়া যায়। জামালপুরের গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকান্ডের পর নিজের টাইমলাইনে জানতে চেয়েছিলাম এই মুহূর্তে কারা কারা চরম হুমকিতে আছেন! জবাব যা মিলেছে তা ধারণাতীত। প্রকাশ্য মন্তব্য ঘরে জনা দশেক সাংবাদিক হুমকির কথা তুলে ধরলেও ইনবক্সে সে সংখ্যা চারশ‘ ছুঁই ছুঁই করছে। তার মানে কি দাঁড়ালো? হুমকিতে থাকার কথাটিও প্রকাশ্যে বলা বিপজ্জনক! এবার বুঝে নিন কেমন আছি, কেমন থাকছি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
      1
23242526272829
30      
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com