একটা লাশ পড়ে আছে
মুখ থুবড়ে, পার্কের এককোণে
নামহীন, গোত্রহীন, পরিচয়হীন
একেবারে খাঁটি বেওয়ারিশ হয়ে।
ভোর থেকে জড়ো হওয়া কৌতূহলী লোকজনের আগ্রহের শেষ নেই,
তব কেউ খুঁজতেও আসেনি
নিখোঁজ লোকটাকে
গণ আলাপচারিতায়ও নামটা
জানা হলো না কারও।
দিনশেষে লাশটা মর্গে চালান হলো
পরিত্যক্ত চটে মুড়িয়ে, ঐ বেওয়ারিশ হিসেবেই
ডোমের আগ্রহও কম, আজ
মরাটার সাথে আসেনি কেউই
জোশ আসছে না কাজে মোটেও
অপয়া মরাটা কাটাছেড়া করার
আগে আজ, গলা ভেজাতে হবে
নিজেরই পকেট হাতড়ে, গোটা কতক
খিস্তী ঝেড়ে আনমনে বিড়ি ফুঁকছে
লাশের ধারে বসে, ভীষণ ত্যক্ত ডোমটা।
পরদিন, ময়না তদন্ত রিপোর্ট লেখা হলো, আপাদমস্তক লাশটার কোথাও কোনও
দৃশ্যমান ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায় নি,
তবে ভেতরটা ভীষনরকম ঝাঁঝরা
অজস্র ব্লক জমেছে অলিন্দ আর
নিলয়ে আশে পাশে,
মিথ্যে আশাগুলো ধমনীতন্ত্রে ব্লক বেঁধেছে আবেগগুলো আড়ষ্ট হয়ে আছে সম্পূর্ণ রুপে,
বুকভরে শ্বাস নিতে না পারায়
শ্বাসতন্ত্রের কপাটও রুদ্ধপ্রায়,
স্বরতন্ত্রে অব্যক্ত কথামালা পাথর
হয়ে আটকে আছে,
ভেতরে অভিমান জমে ইন্দ্রিয়গুলো
কাজ করছিলো না মোটেও
হৃৎপিন্ডের ভেতরের প্রকোষ্ঠে যেখানে
প্রিয় মানুষটার নাম লেখা থাকে,
সেখানটার পাঠোদ্ধার করা যায় নি,
মোটেও, কিছু জমাট ব্যথার কালচে দাগ
মুছে দিয়েছে ভালবাসার শেষ চিহ্নটুকুও।
শেষপর্যন্ত লাশটাকে আপনজন
বলে দাবী করলো না কেউই,
অসনাক্তকৃতই রয়ে গেল তার সবকিছু।
কলমেঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক
Hasan Hafizur Rahman