প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন করেছেন। এই টার্মিনাল বিশ্বমানের যাত্রীসেবা এবং নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষে দেশের বিমান চলাচল খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
তিনি আজ সকালে এইচএসআইএ’র ফলক উন্মোচন করে ‘স্বপ্নকে বাস্তবের সাথে সংযুক্ত করা’র শ্লোগানে নির্মিত নতুন মনোরম টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, জাপানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী মাসাহিরো কোমুরা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী সাইতো তেতসু’ও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী পরে টার্মিনাল-৩ পরিদর্শন করেন এবং এর বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন। এ সময় তাঁকে এর সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়।
তিনি তাঁর লাগেজ চেকিংয়ের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন পাস করার একটি ড্রেস রিহার্সেলেও অংশ নেন এবং তাঁকে পরে বোর্ডিং পাসও দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে তৃতীয় টার্মিনালের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের ওপর আরেকটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় টার্মিনাল প্রাঙ্গণে পৌঁছালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানান।
একদল শিশু নৃত্যগীতের মাধ্যমে সরকার প্রধানকে স্বাগত জানায়।
এইচএসআইএ-বাংলাদেশকে বৈশ্বিক এভিয়েশন হাবে পরিণত করার একটি মাইলফলকের উদ্যোগ। এর উদ্বোধন দেশের পর্যটনের বিকাশে সহায়তা করবে এবং একইভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।
প্রক্রিয়াটির সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তৃতীয় টার্মিনালের সম্পূর্ণ কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন বিদেশী এয়ারলাইন্স ঢাকায় এইচএসআইএ থেকে তাদের কার্যক্রম শুরুর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যা দেশের বিমান চলাচল খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন টার্মিনালের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এবং ক্যালিবারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর তৃতীয় টার্মিনালটি আগামী বছরের শেষের দিকে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণভাবে চালু হবে।
তৃতীয় টার্মিনালটিতে অত্যন্ত পরিশীলিত মেঝে, পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলোসহ নজরকাড়া সিলিংয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
তৃতীয় টার্মিনালের ডাবল এন্ট্রি ব্রিজসহ ১২টি বোর্ডিং গেট আগামী বছরের মধ্যে চালু হবে এবং পরবর্তী ১৪টি বোর্ডিং ব্রীজ পরবর্তীতে স্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মোট ২১,৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিল। এতে সরকার ৫,০০০ কোটি টাকা দিয়েছে। অবশিষ্ট জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) অর্থায়ন করেছে।
৫৪২,০০০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে তৃতীয় টার্মিনালে ২৩০,০০০ বর্গ মিটার ফ্লোর স্পেস থাকবে যেখানে হাউজিং ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি আগমন ইমিগ্রেশন এবং ৩টি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক থাকবে।
৩য় টার্মিনাল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার পর ঢাকা বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এইচএসআইএ’র বার্ষিক যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্ষমতা হবে ২৪ মিলিয়ন (পুরানো টার্মিনাল সহ) যা এখন মাত্র ৮ মিলিয়ন এবং বিমানবন্দরটি প্রতি বছর ৫০০,০০০ টন কার্গো হ্যান্ডেল করতে পারবে।
৩৭টি নতুন এয়ারক্রাফট পার্কিং এরিয়া এবং এপ্রোন এলাকায় সংযোগকারী দু’টি ট্যাক্সিওয়ের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
তৃতীয় টার্মিনালটি একটি মাল্টিমডাল ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে যাত্রীরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ এবং প্রস্থান করতে সক্ষম হয়।
নতুন টার্মিনালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভূগর্ভস্থ রেলপথ (এমআরটি-৫, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর অংশ) এবং একটি ভূগর্ভস্থ টানেলের মাধ্যমে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সাথে সংযুক্ত হবে।
এছাড়া, আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলের মাধ্যমে হজযাত্রীরা তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন।
তৃতীয় টার্মিনালটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের অধীনে একটি জাপানি কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।