কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার এই পংক্তিটি ধ্রুপদী সত্য। ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাজ সিংহাসন অপেক্ষা সহনীয় পর্যায়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও দুমুঠো ভাত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য ব্যতীত আর সবকিছুই তার কাছে গৌণ। রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধসহ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অস্থিরতা এবং মজুতদার অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে খাদ্য দ্রব্য সহ সবকিছুর দাম এখন মধ্যবিত্ত, শ্রমজীবী নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। গত প্রায় ২ দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরেও বিরোধীদল সরলপ্রাণ জনসাধারণকে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি’ কে সামনে এনে উস্কানি দিয়ে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত। ড. আবুল বারকাত এর “ভোটারের মন” বিশ্লেষণধর্মী লেখাটা পড়লাম। এসব বিশ্লেষণ কাগজে-কলমে, ঘরের চার দেয়ালে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ। এর সাথে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না-এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। জনগণের মনের ভাষা বোঝা এসি রুমে বসে সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। সাধারণ মানুষের কাছে ভোটের চেয়ে ভাত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমলো কিনা তাই বোঝে। রাজনীতিবিদরা সাধারণ জনগণকে নিয়ে রাজনীতির খেলা খেলে। এই মুহূর্তে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে, সাবসিডি দিয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম কমালে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে বিস্ফোরণ ঘটবে। প্রয়োজনে দুই একটা প্রকল্প এই মুহূর্তে বাদ দিয়ে দ্রব্যমূল্যে সাবসিডি দেওয়া প্রয়োজন। এর সাথে বিগত দিনগুলোতে নেওয়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গুলো ভোটের রাজনীতিতে একটা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যেখানে একটা বিড়ি বা সিগারেট, ১টা সফট ডিংকস, ২/১ শ টাকার বিনিময়ে ভোট বিক্রি হয়ে যায় সেখানে কিসের গণতন্ত্র! ড. বারকাত এর মত উচ্চশিক্ষিত লোক কি করে ঘরে বসে জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারেন! জনগণের ভাষা বুঝতে জনগণের কাতারে থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী ৯৫% বন্ধু বান্ধব দের দেখেছি রাজনীতির গতি প্রকৃতি সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই। তারাও ‘হুযুগে মাতাল’। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি ভোট দেওয়ার পূর্বে বিভিন্ন কারণে জনগণের মনের পরিবর্তন হয়। ভোট ব্যাংক ছাড়া সাধারণ জনগণ মুহূর্তে মুহূর্তে মত পরিবর্তন করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে। বারকাত এর মত শিক্ষিত সৎ লোকদের মনোনয়ন দিলেও তিনি যে জিতে আসতে পারবেন তার কোন নিশ্চয়তা নাই। বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ উচ্চশিক্ষিত লোকদের ভোট দিতে চান না, কম শিক্ষিত বা সমশিক্ষিতদের বেছে নেন। এটা শ্রেণী বৈষম্যের প্রভাব। আরও নানাবিধ কারণও রয়েছে। শিক্ষিত লোকেরা অশিক্ষিতরদের চেয়ে বেশি অসৎ ও ধুরান্দার। ঘুষ, দুর্নীতির সাথে শিক্ষকতারাই বেশী জড়িত। শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ নয়। রাজনীতিতে তত্ত্ব কথার, মনগড়া বিচার বিশ্লেষণের কোন দাম নেই। জনগণের সমর্থন আদায় এখানে প্রথম ও শেষ কথা। একজন রাজনীতিবিদের হিরো হতেও সময় লাগে না, আবার জিরো হতেও সময় লাগে না। উদাহরণ তো আমাদের কাছে অনেক রয়েছে । সম্প্রতি দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ল’ বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র, তুখোর বক্তা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, এডভোকেট আজমাত উল্লাহ হেরে যায় আর পঞ্চম শ্রেণী পাস এক মহিলা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরল প্রাণ সাধারণ জনগণের মনের ভাষা যিনি পাঠ করতে সক্ষম হন তিনিই প্রকৃত নেতা হতে পারেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবহমান বাংলার মেহনতী মানুষের মনস্তত্ত্ব অনুধাবন করে, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন ও নেতৃত্ব দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান বাস্তবতা উপলব্ধি করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করে আপামর জনসাধারণের অকুন্ঠ সমর্থন ও ভোটে আসন্ন নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হয়ে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন এটি দেশ প্রেমিক জনগণের ঐকান্তিক প্রত্যাশা। ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল রূপকার জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ। শুধু বিরোধিতার কারণে বিরোধিতা প্রত্যাশিত নয়। শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকলে দেশের চিত্র যে কি ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে তা সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দেশপ্রেমিক জনগণকে বিনীত অনুরোধ জানাই। জয় বাংলা। জয় শেখ হাসিনা
লেখকঃ ড. আব্দুল ওয়াদুদ
ফিকামলি তত্ত্বের জনক
প্রেসিডিয়াম সদস্য – বঙ্গবন্ধু পরিষদ
প্রধান পৃষ্ঠপোষক – বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতি