মাজহারুল রাসেল : পিঠাপুলির ঋতু হিসেবে পরিচিত শীতের মৌসুমে সোনারগাঁয়ের বাজারে বেড়েছে নারিকেল ও খেজুরের গুড়ের কদর। শীতের আমেজের সঙ্গে সঙ্গে দোকানগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড় ও বিক্রেতাদের ব্যস্ততা।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়,অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতের এ মৌসুমে গুড়ের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো।
উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তার কাঁচাবাজারে সরজমিনে দেখা যায়, ক্রেতারা রীতিমতো নাকে শুকে, কিছুটা খেয়ে,পরখ করে কিনছেন খেজুরের গুড়। প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ২২০-৪০০ টাকায়। তবে ঝোলা গুড়ের দাম আকাশচুম্বী। কেজিপ্রতি ঝোলা গুড় বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৬০০ টাকায়।
বাজারে গুড় কিনতে আসা ক্রেতা মারুফ মিয়া বলেন, বাচ্চারা বায়না ধরেছে পিঠা খাবে। রাস্তায় বিক্রি করা ভাপা পিঠায় ঘরের স্বাদ নেই। আবার ছোট বেলায় চিতই পিঠা রসে ভিজিয়ে খেতাম,যেটা না বানিয়ে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। তাই ভাবলাম গুড়-নারিকেল কিনে নিয়ে যাই।
গুড়ের দাম এত কেন জানতে চাইলে মোগরাপাড়া চৌরাস্তার কাঁচাবাজারের গুড় বিক্রেতা ইসমাইল বলেন,আমরা অনেক কমেই বেচি। এখানে যে গুড়ের দাম ২২০ টাকা, ওইটা অন্য জায়গায় ৩৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাবে না। আবার ফরিদপুর থেকে যেই ঝোলা গুড় আসছে ওইটা অন্য বড় দোকানগুলোতে ৬৫০-৮০০ টাকা কেজি। আমার বাড়ি ওই খানে বইলা কমে দিতে পারতেছি।
বাজারে গুড়ের পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে নারিকেল। জোড়াপ্রতি নারিকেল বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা দরে।সোনারগাঁও উপজেলার বাজারগুলোতে মূলত ফরিদপুর, মাদারীপুর ও বরিশালের মতো দক্ষিণাঞ্চল থেকে নারকেল আসে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,বরিশাল সহ স্থানীয় বাজারে জোড়াপ্রতি নারিকেল বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা, যা সোনারগাঁও উপজেলার বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।
গুড়-নারিকেলের পাশাপাশি বেড়েছে আতপ চালের চাহিদাও। অনেকে চাল কিনে বাসায় নিয়ে নিজেরা গুঁড়া করছেন, অনেকে আবার বাজার থেকেই গুঁড়া করে নিয়ে যাচ্ছেন। বাজারে গুঁড়া করা আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা কেজিতে। চাল গুঁড়া করার দোকানের সামনে দেখা দিয়েছে ব্যাগ হাতে মানুষের ছোটখাট জটলা- যা বছরের অন্যান্য সময়ে খুব একটা চোখে পড়ে না।
শীতকালে বাঙালির এক অনন্য ঐতিহ্য ঘরে ঘরে পিঠা তৈরির ধুম। কেবল ঘরে নয় শীত আসতেই রাস্তা থেকে অলিগলিতেও বিক্রি হচ্ছে ভাপা,চিতই,পাটিসাপটার মতো লোভনীয় সব পিঠা। বাজারে নিত্য পণ্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য জীবিকা নির্বাহ কষ্টকর তারপরও তারা তাদের নিজেদের পুরনো ঐতিহ্যকে ভোলেনি পৌষ-মাঘের ঘরে ঘরে পিঠা উৎসব তারই প্রমাণ দেয়।