শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে সংসদ সদস্য মো. আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত পবিপ্রবিতে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৪ উদযাপন নুসরাতের বুকে কার নাম লেখা – চলছে কানাঘুষা দশ টাকায় টিকেট কেটে চোখ পরীক্ষা করলেন প্রধানমন্ত্রী “ওরাল ক্যান্সার সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে ” –মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অপতথ্য রোধে সরকার, পেশাদার গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজ একসঙ্গে কাজ করতে পারে – তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী শেখ হাসিনার লড়াইয়ে পরস্পরের সাথী হবো: গণপূর্তমন্ত্রী কালিগঞ্জে অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তির কঙ্কাল উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ ধান উৎপাদনে গিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হবে। – পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী। শ্রমিক দিবস উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তৃষ্ণার্ত মানুষদের আখের রস বিতরণ

‘দড়াটানা ঘাট: সাহিত্যের ইশারা কিংবা হাতছানি’ থেকে একটি লেখা।

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ১০.৪০ এএম
  • ২৬ বার পঠিত

ফিয়োদর দস্তইয়েভস্কির প্রয়াণদিবসে প্রকাশিতব্য ‘দড়াটানা ঘাট: সাহিত্যের ইশারা কিংবা হাতছানি’ থেকে একটি লেখা।

কাফকার একটি চিঠি

আপনার ‘দ্য স্টোকার’ গল্পটা অনুবাদ করার অনুমতি চাইছি। পেলে বাধিত হব। ফানৎস কাফকাকে লিখেছিলেন মিলেনা ইয়েজেনস্কা। সাগ্রহে অনুমতি দিলেন কাফকা। সম্ভবত এই থেকে কাফকা-মিলেনার পত্রালাপের সূচনা। যদিও মিলেনার লেখা কোনও চিঠির খোঁজ মেলেনি। কাফকার মিলেনাকে লেখা চিঠির বিখ্যাত সংকলন লেটার্স টু মিলেনার ভূমিকায় পাওয়া যায় এ তথ্য।
কাফকার অনুমতির দেওয়া কারণেই পরবর্তীকালে তাঁদের চিঠি লেখার সূত্রপাত। মিলেনা সাংবাদিক ও অনুবাদক। তাই অন্য নারীদের কাছে লেখা কাফকার চিঠির ভাষা আর বিষয়ের সঙ্গে তাঁকে লেখা চিঠির ভাষার তফাৎ সহজে চোখে পড়ে। এখানে ভাষা বলতে বিষয়, জার্মান ভাষার কারিগরি দিক ভাবা যাবে না। আমাদের কাছে এই চিঠিপত্রের যে উপস্থিতি, তা সবই যথারীতি ইংরেজিতে। সেখানে জার্মান থেকে অনুবাদের কল্যাণে ভিতরকার স্বর ও ধ্বনি কতখানি বদলে পালটে গেছে, তা জানার মুরোদ আমার নেই। শুধু বলতে চাইছি, কাফকার ফেলিৎসে বাউয়ার কিংবা গ্রেটা ব্লখের কাছে লেখা চিঠির যা বিষয়, মিলেনার কাছে লেখা চিঠির বিষয়, অন্তত ভাষিক দ্যোতনার দিক থেকে, কিছুটা হলেও আলাদা!
যেমন, দুই দিন আর এক রাত ধরে হওয়া বৃষ্টি এইমাত্র ধরে এসেছে, আর অবশ্যই তা সাময়িক (কিছুক্ষণের জন্য), কিন্তু এই মুহূর্তটা উদযাপনের একটাই সুযোগ এখন : সেটা হল, আমি আপনাকে চিঠি লিখছি। [এপ্রিল ১৯২০]
পড়ামাত্রই মনে হবে, কাফফার চোখ কী রোমান্টিক! কলমও তো তাই। তরজমার অক্ষমতায় এর চেয়ে কাছাকাছি পৌঁছানো গেল না। শুরুর কয়েকখানি চিঠিতে কাফকার স্বর প্রায় একই। হয়তো, ওদিক থেকে মিলেনার জবাব অনুযায়ী কাফকা নিজের সম্পর্কে জানাচ্ছিলেন! জানিয়েছেন, নিজের অতীত সম্পর্কে। ইতিপূর্বে দুইজন নারীর সঙ্গে তার তিনবার বাগদান সম্পন্ন হয়েছিল, তাও আছে। কাফফা সবসময়েই কথা বলেছেন নিজের সব অর্গল খুলে। নির্ঘুম এক একটি রাত কাটানোর কথা আছে সেখানে, অনিদ্রার রোগী তিনি। আর এমন কথাও আছে এই চিঠি লেখার শুরুতেই যে মিলেনার সঙ্গে পথহাঁটতে ভীষণ ভালো লাগে, ওই সময়টুকু দারুণ কাটে তাঁর! অমর কথাসাহিত্যিকের কলমের মোচড় ধরাও পড়ে : এই কথাগুলো যত সহজে তিনি লিখলেন, ততটা তো সহজ নয় মিলেনার সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়া আর পথহাঁটা। মিলেনার দাম্পত্যজীবন তখন অস্থির। এরপরে কাফকা একসময়ে চেয়েছিলেন মিলেনার সঙ্গে থাকতে, তাতে সায় ছিল না মিলেনারই। বার দুয়েক দেখা হয়েছিল তাঁদের।
যাক, এ সবই এই সম্পর্কের পরের দিককার বিষয়। শুরুতে কাফকা একজন অনিদ্রার রোগী হিসাবে মিলেনাকে তাঁর দিনযাপনের কথা জানাচ্ছেন। জানতে চাইছেন, কী-এক অদ্ভুত লোকের কথা শুনছেন আপনি? এই চতুর্থ চিঠিতে হঠাৎই কাফকা মিলেনার কাছে লিখতে শুরু করলেন একেবারেই ভিন্ন একটি প্রসঙ্গ।
লিখেছেন : আপনি জানেন ফিয়োদর দস্তইয়েভস্কির প্রথম সাফল্যের গল্প? (—এই দিয়ে শুরু।) এর সঙ্গে অনেক বড়ো একটি বিষয় জড়িয়ে আছে। কী সেটা? এই জন্যে বলছি যে, ওই মহান নামটি নিলে বুঝতে একটু সুবিধা হবে। যদিও এই কাহিনি আজ সবারই জানা। কিন্তু, গল্পটা আমার মাথায় গেঁথে আছে এক্কেবারে খোলনলচে-সমেত। দস্তইয়েভ্স্কি যখন তাঁর প্রথম উপন্যাস অভাজন [ইংরেজি অনুবাদে পুত্তর ফোক] লিখছিলেন, তখন থাকতেন তাঁর বিদ্যান বন্ধু গ্রিগোরিভের সঙ্গে। গ্রিগোরিভ দেখছেন, মাসখানেক ধরে টেবিলের উপরে দস্তইয়েভ্স্কির লেখা কাগজের স্তূপ। কিন্তু পাণ্ডুলিপি শেষ হবার আগে অবধি তিনি [গ্রি] তাতে হাত দিলেন না।
লেখা শেষ হতে গ্রিগোরিভ পড়লেন সেই পাণ্ডুলিপি। বিস্মিত! তখনই চলে গেলেন বিখ্যাত সাহিত্যসমালোচক নেক্রাসোভের কাছে, কিন্তু ফিয়োদরকে বললেন না কিছুই। (সেদিন) রাত তিনটেয় দোরঘণ্টি বাজল। দস্তইয়েভস্কি দরজা খুলে দেখলেন, গ্রিগোরিভ আর নেক্রাসোভ! তারা তাকে রা-কারার সুযোগ না দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। চুমু খেলেন। দস্তইয়েভস্কির কাছে পুরোপুরি অচেনা নেক্রাসোভ তাকে সম্বোধন করলেন রাশিয়ার আশা বলে। তাঁরা প্রায় দু-ঘণ্টা কাটালেন অভাজন নিয়ে কথা বলে। এমনকি ভোরের আলো ফোটার আগে পর্যন্ত নড়লেন না সেখান থেকে।
পরে, ফিয়োদর দস্তইয়েভস্কি এটিকেই তাঁর জীবনে সবচেয়ে সুখকর রাত হিসেবে বর্ণনা করেছে। সেদিন তিনি জানালায় দাঁড়িয়ে রইলেন, যতক্ষণ তাঁদের দেখা যায়। এরপর আর আবেগ সামলে রাখতে পারলেন না, নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণও হারালেন। তিনি কাঁদতে শুরু করলেন।
কাফফা মিলেনাকে লিখছেন, ওই মুহূর্তে দস্তইয়েভস্কির যা হয়েছিল, তা তিনি জীবনে অনেকবার বলেছেন, ইতিপূর্বে কোথাও পড়েওছেন, যদিও তা মনে নেই। কিন্তু ফিওদরের অনুভূতিটা ছিল এমন : এই বিস্ময়কর মানুষগুলো! তাঁরা খুব ভালো আর মহৎ। আর আমি কত নীচ! যদি তাঁরা আমার ভিতরটা দেখতে পেতেন! অথবা, যদি আমি তাঁদের বলতে পারতাম, তারা তা বিশ্বাসও করতেন না। কাফকার মনে হল : বিষয়টা এই— ফিওদর তখন তাঁদের সমকক্ষ হওয়ার কথা ভাবছিলেন, সেটিই যেন হতে পারে তাঁর ভূষণ! তাই ওই ক্রন্দন। কাফকার বলতে চাওয়ার বিষয় এটুকুই।
এরপরে গোটা বিষয়টা নিয়ে কাফকার মিলেনার উদ্দেশে মন্তব্য : প্রিয় শ্রীমতি মিলেনা, বুঝলেন, এই কাহিনির অন্তর্গত রহস্য? বিষয়টা কেন ধরা পড়ছে না বা অধরাই থেকে যাচ্ছে? আমার মনে বিষয়টা এই : যদি বিষয়টা আমরা সরলীকরণ করি, গ্রিগোরিভ আর নেক্রাসোভ কোনওভাবেই দস্তয়েইভস্কির চেয়ে মহৎ নন। এখন এই সাধারণীকরণ পাশে সরিয়ে রাখছি। ওই রাতে দস্তইয়েভস্কি যা কোনওভাবেই দাবি করেননি, এবং যা দস্তইয়েভস্কির সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে গেছে আর তাই আপনি বিবেচনা করতে পারেন যে, গ্রিগোরিভ ও নেক্রাসোভ সত্যি বিস্ময়কর আর দস্তইয়েভস্কির মনের দিক থেকে পঙ্কিলতাপূর্ণ, চূড়ান্ত নিচু মানসিকতার মানুষ, যিনি কখনও গ্রিগোরিভ ও নেক্রাসোভ-এর ভালোত্ব ছুঁতে পারবেন না, তাই একান্ত নিভৃতে চোখের জল ফেলে দাম চোকাচ্ছেন তাঁদের অপরিসীম মহত্বের অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তিতে। চাইলে ওই জানালা থেকে দেখা যায়, তাঁরা হেঁটে যাচ্ছেন, ধীরে ধীরে তাঁরা দৃষ্টির বাইরে চলে যাচ্ছেন;— দুর্ভাগ্যক্রমে, এই কাহিনির অর্থটাই অনর্থ হয়েছে মহান ফিয়োদর দস্তইয়েভস্কির নামটির জন্যে।
এ চিঠি এখানেই শেষ হতে পারত। হয়েছেও প্রায় তাই। এরপর কাফকা লিখছেন আর মাত্র দুটো বাক্য। যা আসলে চিঠির শুরুর কথাগুলোর সঙ্গে শুধু সঙ্গতি রক্ষা। অমন ক্ষমতাবান কথাসাহিত্যিক, গল্পের কাহিনির ক্রম বৃত্তটি শেষ হতে হবে তো। লিখলেন : আমার ইনসোমিনিয়া আমাকে ঘায়েল করতে পারল কই? যদিও এর কোনওকিছুই আমার জন্যে ভালো হচ্ছে না।
সাহিত্যিকে কেন্দ্রে রেখে মিলেনাকে আরও চিঠি লিখেছেন কাফকা। খুব স্বাভাবিক। মিলেনার দিক থেকে আবেদনই তো এসেছিল তিনি তাঁর একটি গল্প চেক ভাষায় তরজমা করতে চান। কিন্তু নিজের নির্ঘুমতার কথার ভিতর দিয়ে, রোগগ্রস্ত কাফকা দস্তইয়েভস্কির যে কাহিনি বললেন, তার সঙ্গে নিজের সাফল্য, আর, অথবা পুরোপুরি ব্যর্থতার কোনও মিল আছে? এই চিঠি পড়তে পড়তে সে কথা বারবার উঁকি দেয়। মিলেনার সঙ্গে এই সম্পর্কের সময়ে লিখেছিলেন দুর্গ [ক্যাসেল] উপন্যাসটি। এরপরে আর বেশিদিন বাঁচেননি তিনি। বন্ধু ম্যাক্স ব্রডকে বলেছিলেন, সব লেখা পুড়িয়ে ফেলতে! দস্তইয়েভস্কির মহৎ নামের ভিতরে ফ্রানৎস কাফকা আসলে সবসময়েই নিজের সফলতাকে খুঁজতে চেয়েছেন। মহত্তম প্রতিভা তাঁর ব্যর্থতাকেও জানে, সেও কোনও মহত্তমের কাছেই কোনও সুতোয় বাঁধা।
হিটলারের কনসেনট্রেশন শিবিরে চিরতরে হারিয়ে গেছেন মিলেনা, কাফকার লেখা চিঠিগুলো হারায়নি বলে দুজনের চিঠি চালাচালিতে এমন একটি প্রসঙ্গ জানা হল।[২০২০]
#books #অর্ডার #করুন Jolpore.com

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com