সালমা বাণী এবছর কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (যৌথ) পেয়েছেন। তিনি জন্মেছেন ঢাকার সেন্ট্রাল রোডে। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কানাডা পাড়ি জমান ১৯৯২ সালে। প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘নিন্দিত উত্তরণ’, ‘বোবা সময় ও নীল উপ্যাখান’, ‘ভাংগারি’, ‘গোলাপী মঞ্জিল’, ‘ইমিগ্রেশন’ ও ‘জলের ওপরে টিপসই’। পেয়েছেন ‘কাগজ সাহিত্য পুরস্কার’, ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’, ‘বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার’।
এবছর কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (যৌথ) পেয়েছেন সালমা বাণী তাকে নিয়ে আজকের বিশেষ সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন এর সাহিত্য সম্পাদক মাহবুব সেতু:
মাহবুব সেতু : প্রথমেই অভিনন্দন জানাই। তারপর শুনতে চাই, পুরস্কার পাওয়ার খবর শুনে কেমন লাগলো?
সালমা বাণী : খবরটা শোনার পর ভালো তো লাগছেই, ভালো তো লাগেই। আমার মন একটু খারাপ হতো যখন দেখতাম, বাংলাদেশের অনেক কবি-সাহিত্যিক নিজেদের ভেতর আমাকে স্থান দিতে চান না; প্রবাসে থাকি, যেন আমার জন্য দূরত্বই শেষ কথা। এখন মনে হচ্ছে, পুরস্কার মানে আমার কাজের স্বীকৃতি, দীর্ঘদিন নিরলসভাবে সাধনা করার স্বীকৃতি পেলাম।
মাহবুব সেতু : আপনার গল্প-উপন্যাস বড় প্রকাশকরা ছাপলো না; প্রচার পেলেন না এটা আপনি কি ভাবে দেখেন?
সালমা বাণী : এসব আমি গুরুত্বের মধ্যেই রাখি না। তুমি লক্ষ্য করেছো, আমি দেশে আসলে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত চষে বেড়াই, মানুষের স্বর শোনার চেষ্টা করি, এসময়টুকুই আমি প্রাণভরে নিশ্বাস নেই। তুমি নিজেও সেদিন উপস্থিত থেকে লক্ষ্য করেছো, সাধারণ সৌজন্যতাবোধও যেন আমার প্রাপ্য নয়। ওসব কথা থাক, জীবন এমনই, অনেক আঘাত উজিয়ে টিকে থাকতে হয়।
মাহবুব সেতু : আমার যেতো এটুকু আপনার সম্পর্কে জানাশোনা, কিন্তু আপনি নিজে কখনো পুরস্কারের প্রত্যাশা করেননি।
সালমা বাণী : না, আমি এসবের মধ্যে নেই। তুমি জানো, অনেকের কাছেই আমার এক্সেস আছে, যা আমি কখনও বলে বেড়াই না, এমনকি তাদের সঙ্গে দেখা পর্যন্তও করি না। আমি মনে করি, সাহিত্যই আমার জগৎ। ভালো লেখার আনন্দই পুরস্কার।
মাহবুব সেতু : আপনার পরিবারের সবাই নিশ্চয়ই খুব খুশি হয়েছে?
সালমা বাণী : হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমি এত বছর ধরে দেশে আসা-যাওয়া করি, আমার ভাই বলে যে, ‘তুই যত টাকা উড়ালি তা দিয়ে কানাডায় একটা বাড়ি বানাতে পারতি।’ আমি বাড়ি দিয়ে কী করব বলো? আজকের এই প্রাপ্তির আনন্দ বাড়ি বানিয়ে পেতে পারতাম?
মাহবুব সেতু: একটা মজার ব্যাপার যে, আপনি দেশে আসবেন কী আসবেন না, একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব চলছিলো…
সালমা বাণী : আমি জাস্ট পাসর্পোটটা হাতে পেয়ে পরের দিন ফ্লাইটে উঠে বসেছি, আর কিছু ভাবিনি। আমার একা একা ট্রাভেল করা চিকিৎসকের নিষেধ আছে, তাও গ্রাহ্য করিনি।
মাহবুব সেতু : কাকতালীয় ব্যাপার। পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা আগে থেকে জানলে নিশ্চয় একা একা জার্নি করতেন না?
সালমা বাণী : আমার ছেলেমেয়েরা ভয় পায়। আমি ওদেরকে বলি, ‘বাংলাদেশ বিমানে যাচ্ছি, ওখানে অনেক বাংলাদেশি আছে। আমার কিছু হলে তারা আমাকে সাহায্য করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে, তোমরা জানো না বাঙালি অনেক পরোপকারী।
মাহবুব সেতু : আবারও আপনাকে অভিনন্দন জানাই। সালমা বাণী : ধন্যবাদ।
সালমা বাণীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: ‘নিন্দিত উত্তরণ’ (২০০০) উপন্যাস ভাঙ্গারি’ (২০০৪) উপন্যাস গােলাপী মঞ্জিল (২০১২) উপন্যাস পরিসরের মাপজোখ (২০১৩) উপন্যাস ইমিগ্রেশন (২০১৪) উপন্যাস যুবক হয়ে ওঠার সময় (২০১৭) উপন্যাস জলের ওপর টিপ সই (২০১৭) উপন্যাস