তাজুলের কী হয়েছিল? লাবণ্য কি প্লান করে তাজুলকে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল নাকি শাহনাজ পারভীন নেপথ্যে থেকে লাবণ্যকে দিয়ে এই কাজ করিয়ে নিয়েছিলেন? লাবণ্য কিংবা শাহনাজ পারভীন যেভাবে তাজুলকে ধরিয়ে দিলেন, তাতে করে তাজুল কি লাবণ্য বা শাহনাজ পারভীনের ষড়যন্ত্রের শিকার নন? প্রশ্ন উঠতেই পারে তাজুল তো অপরাধী। তার অপরাধের শাস্তি হওয়া দরকার। কিন্তু কোন মাপকাঠিতে তাজুল অপরাধী। কারণ পুরো গল্পে তাজুলকে কোথাও ধর্ষকের রূপে দেখা যায়নি।
কামে রূপান্তরিত হওয়া তাজুলের সম্পর্কে প্রেম ছিল, সেই প্রেমের পরিণতিই তাজুলকে কামের চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে বার বার, তার সঙ্গীকেও। সেই যাত্রায় তাজুলের দুর্বলতাকে পুঁজি করে লাবণ্য অভিনয়ের জাল পাতলেন। সেই জালে ধরা পড়লেন তাজুল একা। অপরাধ যদি তাজুলের হয়, তাহলে একই অপরাধে লাবণ্য বা শাহনাজ পারভীন অপরাধী নন কেন?
প্রথমদৃষ্টিতে তাজুলকে অপরাধী মনে হলেও চূড়ান্তদৃষ্টিতে পাঠক ঠিকই ধরতে পারেন- গোয়েন্দাগিরি করে তাজুলের দুর্বল জায়গা বের করে, ঠিক সেখানে ছদ্মবেশ ধারণ করে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হলো। এখানে তো লাবণ্য বা শাহনাজ পারভীনই বড় অপরাধী হওয়ার কথা। কিন্তু শাহনাজ পারভীন সেটাকে উল্টে দিলেন তার হাতে থাকা কলমের শক্তি দিয়ে। তিনি দেখালেন ‘মানুষখেকো মানুষ’ হলেন তাজুল!
একটা বিষয় নিয়ে আর কত প্রশ্ন করা যায়? উপরের প্রশ্নগুলো থেকে সম্পূরক নানা প্রশ্ন হয়তো পাঠকের মনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে। সুতরাং বলে নেওয়া ভালো, তাজুল হলেন গল্পের সেই হতভাগ্য প্রেমিক যাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হলো, আর লাবণ্য হলেন সেই (খল) নায়িকা, যাকে গল্পের সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন লেখক। বাকি থাকলেন শাহনাজ পারভীন। তিনিই হলেন সেই আসল চরিত্র যিনি বাকি চরিত্রগুলোর জন্ম দিয়েছেন এবং একই সাথে সেসব চরিত্রের চূড়ান্ত পরিণতি নিজ হাতে নির্মাণ করেছেন। গল্পের নাম ‘মানুষখেকো মানুষ।’ এই গল্পের নামানুসারে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে প্রকাশ হয়েছে শাহনাজ পারভীনের গল্পগ্রন্থ ‘মানুষখেকো মানুষ।’ ১৮টি গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। প্রকাশ করেছে জলধি।
মানুষখেকো মানুষ গল্পের প্রথম পৃষ্ঠায়, ‘‘কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না কারো’’ পড়তে গিয়ে খটকা লাগে। বিশেষ করে আগের লাইনগুলোর সাথে এ লাইনটা যায় না। খুব সম্ভবত এখানে ‘কাউকে’র স্থলে কারো লেখা হয়েছে। এছাড়া সন্তর্পণে, ছেঁড়ে, এক্সট্রা, গুঁজে, ঝাঁকড়া, বাবরি, ফার্স্ট ইয়ার, গাঁয়ের প্রভৃতি বাবান বিভ্রাট এবং ‘ও’ এর স্থলে ২বার ‘ঔ’ এর ব্যবহার পাঠকের কাছে বিরক্তির কারণ হতে পারে।
তবে গল্পের নাটকীয় গতির কারণে ছোটখাটো এসব ভুলকে অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত পাঠক পৌঁছে যাবেন শেষ লাইন অবধি। এখানেই শাহনাজ পারভীনের শক্তি টের পাওয়া যায়।
তাজুলকে ‘মানুষখেকো মানুষ’ প্রমাণ করতে গিয়ে রাকিবের জন্য বাড়তি সাজগোজ আর প্রেজেন্টেশনে ব্যস্ত করে রাখা জেসমিনকে আর সামনে আনেননি লেখক। এখানেও তার হাত আছে। এই যে জেসমিনকে ছাড় দেওয়া এবং তাজুলকে অপরাধী প্রমাণ করা কি নারীবাদী মনোভাবের কারণেই ঘটল? অন্যদিক আমি তাজুলকে নিয়ে কথা বলছি এবং জেসমিনের প্রসঙ্গ তুলছি মানেই কি আপনি আমাকে পুরুষবাদী বলবেন? বরং এসবের বাইরে এসে গল্পের চরিত্রগুলোকে বিশ্লেষণ করুন। তাহলেই প্রমাণ হবে ‘মানুষখেকো মানুষ’ কি শাহনাজ পারভীনের দেখানো তাজুল নাকি লাবণ্য? এবং লাবণ্যের নির্মাতা হিসেবে শাহনাজ পারভীন?