পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ পিরোজপুর জেলার সহকারী জজ হিসেবে যোগদান করেছেন গোলাম রসুল সুইট। মঙ্গলবার (২৮-জানুয়ারি) সহকারী জজ হিসেবে পিরোজপুর জেলায় যোগদান করেন। গোলাম রসুল সুইট সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের মোশারফ হোসেন ও মাহফুজা খাতুন দম্পতির বড় ছেলে।
দরিদ্র ঘরের সন্তান সুইট’র পিতা মো. মোশারফ হোসেন রাজধানীর উত্তরায় একটি বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করছিলেন মা মাহফুজা খাতুন অন্য বাড়ীতে কাজ করতেন। চরম দরিদ্র এই দম্পতি অনেক কষ্টে সংসার চালাতেন। এত কষ্টের মাঝেও তাদের সন্তানকে লেখা পড়া শিখিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন। পরিবারের অভাব তাকে দমাতে পারেনি। ঠিকমতো খেতে না পারা সেই ছেলে গোলাম রসুল সুইট এখন সহকারী জজ।
সহকারী জজ গোলাম রসুল সুইট সাংবাদিকদের জানান, জেলার শাখরা কোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষকরে ভোমরা ইউনিয়ন দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেছেন তিনি। পরে দেবহাটা উপজেলার সখিপুর খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ্ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। কলেজ শেষ করার পর লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
সুইট আরও বলেন, এমন সময় সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমিতে একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। সেখানে এক ভাই আমাকে ঢাকায় গিয়ে কোচিং করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু সেই খরচ বহন করার মতো অবস্থা আমাদের পরিবারের ছিল না। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে দিন চলতো আমাদের। দরিদ্র মায়ের পোষা একটি গরু ছিল। সেই গরুটি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ২০১০ সালের ১৭ মে ঢাকায় গিয়ে একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই। বন্ধুরাও আমার পারিবারিক অবস্থা জেনে আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। বন্ধুদের সহযোগিতার কথাগুলো ভুলে যাওয়ার নয়। মা-বাবা মাঝে মধ্যে এক/দুই হাজার করে টাকা দিত। গত এক মাস আগে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। মাকেও এক বছর আগে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি।
২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে গোলাম রসুল সুইট বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ হয়। বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হই। ভর্তির পর টিউশনির পোস্টার ছাপিয়ে বিতরণ শুরু করি। এভাবে পাঁচটি টিউশনি জোগাড় হয়ে যায়। এভাবেই চলছিল আমার শিক্ষা জীবন। আত্মীয়-স্বজনরা কখনও খোঁজ নেয়নি; তবে আমার বন্ধুরা আমার পাশে থেকেছে সব সময়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ফলাফলে বি-ইউনিটে মেধা তালিকায় ১১ তম হয়েছি। ১২ তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে হয়েছি ৬৭ তম। উত্তীর্ণ হয়েছিল ১০০ জন। ৯৭ জন নিয়োগ পেলেও ৩ জন পুলিশ ভেরিফিকেশনে বাদ পড়েছেন বলে তিনি জানান।
পিরোজপুর জেলার সহকারী জজ হিসেবে যোগদান করবো জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বড় লোক হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। সবসময় ন্যায়ের পথে থেকে মানুষের জন্য কাজ করেযাব। কখনও অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হবো না। আমার কাছে সব মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। অসহায় মানুষরা কখনই ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না বলে তিনি তার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।