উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ বামন অবতার শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে বামনদেবের আবির্ভাব। ভগবান বিষ্ণু এই বামন দ্বাদশী তিথিতে বামন অবতার রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, হিরণ্যকশিপু বধের পর প্রহ্লাদ অসুরকূলের রাজা হয়েছিলেন। এরপর তাঁর পুত্র বিরোচন ও তারপর বিরোচনের পুত্র বলি অসুর সম্রাট হন। বলি রাজা হিসাবে খুবুই ধার্মিক, প্রজাহিতৈষী, দাতা ছিলেন। কিন্তু জাতের স্বভাব ও অসুর গুরু শুক্রাচার্য্যের কুমন্ত্রণার কারণে তিনি বারংবার দেবতাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন।
অপরদিকে দেবতাদিগের মাতা তথা কশ্যপপত্নী অদিতি দেবতাদের দুর্দশা দেখে ভগবান হরির আরাধনা করেন। ভগবান হরি দেবমাতা অদিতির পুত্র রূপে আবির্ভূত হন। পাঁচ বছর বয়সে মহর্ষি কশ্যপ তাঁর এই পুত্রের মেধা দেখে গায়ত্রী মন্ত্রে দীক্ষা দান করলেন। সেই শিশু বয়ঃপ্রাপ্ত হলেও তাঁর দেহ খর্ব ও পাঁচ বছরের শিশুর মতোই হয়ে থাকলো। তাই তিনি ‘বামন’ নামে পরিচিত হলেন। নর্মদা নদীর তীরে ভৃগুকচ্ছ নামক এক স্থানে মহারাজ বলি দেবতাদের সম্পূর্ণ রূপে পরাজিত করবার জন্য এক যজ্ঞের আয়োজন করেন। দৈত্যগুরু শুক্র ছিলেন সেই যজ্ঞের পরিচালক। সেখানে বেদজ্ঞ, শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ, দরিদ্র সকলেই এসে স্বীয় ইচ্ছা মতো দান নিয়ে বলিকে আশীর্বাদ দিতে লাগলেন। মহারাজ বলি কার্পণ্য না করে সকলের ইস্পিত বস্তু দান করতে লাগলেন। সেই সময় হরির অবতার ভগবান বামনদেব একটি ছাতা মাথায় উপস্থিত হলেন। মহারাজ বলি সাদরে স্বাগত জানালেন, চরণ ধুয়ে আসন, ভোজোন দিলেন। ভগবান বামনদেবকে বন্দনা পূর্বক বলি মহারাজ দান নিতে অনুরোধ জানালেন। অপরদিকে শুক্র বুঝতে পারলো যে ভগবান হরি বামন রূপে এসেছেন। তিনি বলিকে দান দিতে নিষেধ করলেন। বামন দেব কেবল ত্রিপাদ ভূমি চাইলেন। দান দেওয়ার সঙ্কল্পের সময় অসুর গুরু শুক্র যোগবলে ক্ষুদ্র তনু ধারন করে কুমণ্ডলের ছিদ্র রোধ করলে বামনদেব অঙ্কুশ দ্বারা ছিদ্রমুখ পরিষ্কার করার সময় শুক্রের এক চোখ নষ্ট হয়। বলি রাজা ত্রিপাদ ভূমি দান দিলেন। বলির গুরুদেব শুক্র তাকে অভিশাপ দিয়ে প্রস্থান করলেন। এরপর খর্ব ভগবান বামনদেবের শরীরের পরিবর্তন হলো। এক চরণ দ্বারা তিনি সমস্ত আকাশ ব্যাপ্ত করলেন। প্রজাপতি ব্রহ্মা পবিত্র বারিধারা দ্বারা সেই চরণ অভিষেক করলেন, অপর চরণ দ্বারা পৃথিবী আবৃত্ত করলেন। আর এক চরণ কোথায় রাখবেন ? বলি মহারাজ ভগবান বামনদেবের সামনে করজোড়ে বসে নিজ মস্তকে এক চরণ রাখতে বললেন। ভগবান বামনদেব তাঁর তৃতীয় চরণ বলি মহারাজের মস্তকে রাখলেন। বলি মহারাজকে বরপ্রদান করলেন তুমি অসুরদের নিকেতনপাতালপুরীতে আজ থেকে থাকবে। আজ থেকে তুমি অমর হবে। আজ হইতে আমি তোমার রাজ্যের দ্বার রক্ষা করবো।” বলি মহারাজ তাঁর শরণাগতি ভক্তি দ্বারা ভগবান শ্রীহরির পরম দুর্লভ শ্রীচরণ লাভ করেছিলেন। বলির দর্প হরণ করে ভগবান বামনদেব শান্তি ও ধর্ম বাণী প্রচার করলেন। এর ফলে অসুরেরা তাদের আসুরিক প্রবৃত্তি ত্যাগ করে ধর্ম পথ গ্রহণ করলো।