দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছয় ঘন্টা অপেক্ষার পর টিসিবির ১০ টাকা দরের তিন কেজি চাল কিনতে আপত্তি কেন? সাংবাদিক নেতারা তো আরো অনেক আগেই দু:স্থ সাংবাদিক হয়ে আছেন। তারা সরকারি টাকায় হজ্ব করেন, লাইনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দু:স্থ সাংবাদিক হিসেবে দান সহায়তার চেক নেন…সেই ভিক্ষুক নেতাদের কর্মি-সমর্থক-ভোটার হিসেবে শুধু টিসিবি’র পণ্য কেন-যেসব জায়গায় ত্রাণের নিউজ করতে যাবো সেখানেও লাইনে দাঁড়িয়ে দুই প্যাকেট খাদ্য সহায়তা নিয়ে আসাটাই এখন সাংবাদিকতা।
হায় দুর্ভাগ্য! হায় সাংবাদিকতা!! আজ থেকে মাত্র আড়াই যুগ তিন যুগ আগেও সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের যোগ্যতা, মেধা, কারিশমা দেখুন-জানুন। তারও আগের নেতারা প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের সংবাদ সম্মেলনে গিয়েও কঠিন ভাষায় বলতেন- ‘জেনারেল দয়া করে আপনার মর্যাদার লাঠিখানা টেবিল থেকে নামিয়ে সংবাদ সম্মেলন করুন।’ আর আজ সাংবাদিক নেতারা তথ্যমন্ত্রীর সামনে গিয়েও কাচুমাচু করেন- রিলিফের জন্য, টিসিবি চালের জন্য, নগদ টাকা পয়সার জন্য আবেদন জানান।
আমরা ভদ্র সাংবাদিক সদস্য, বিতর্ক পছন্দ করি না, নেতাদের বিব্রত করতে চাই না। এ কারণেই প্রশ্ন তুলি না- সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী যে বিশ কোটি টাকা প্রদান করলেন সেই টাকা কোথায় গেল? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ কোটি টাকা সিডমানি দিয়ে ২০১৪ সালে ট্রাস্ট তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেন। পরে বিগত চার বছরে বিভিন্ন বেসরকারি মিডিয়া থেকে দেয়া টাকায় তহবিল ১৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো ২০ কোটি টাকা অনুদান ঘোষণা করেন। অর্থাত সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিলে ৩৫ কোটি টাকা রয়েছে। এর আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকেও অনুদান দেয়ার কথা শোনা গিয়েছিল।
এই বিপদে সেসব টাকা কেন সাংবাদিকদের জীবন রক্ষায় কাজে লাগছে না? সাংবাদিকদের টিসিবি‘র পণ্য কেনার লাইনে দাঁড় করানোর আগে কেন এসব টাকা সংগঠনগুলো থেকে বিতরণ করে দেয়া হচ্ছে না? সাংবাদিক বেঁচে থাকলে পরে সংগঠনের কথা ভাবা যাবে, ট্রাস্টকে মোটাতাজা করা যাবে। একদিকে সংগঠনের একাউন্টে একাউন্টে অনুদানের কোটি কোটি টাকা ফেলে রাখা হবে আর অন্যদিকে সাংবাদিকদের কবরে পাঠানোর মধ্যে সংগঠনগুলো কিসের কল্যাণ খুঁজে?