তিনবন্ধু, কুকুর, বেড়াল আর বানর। বানরটা খুবই চালাক ও দুষ্টু। বেড়ালটা বোকা-শোকা কিন্তু আদুরে আর কুকুরটা শান্ত ও বুদ্ধিমান। তিনজনই ভীষণ রকমের ঝগড়া করে। আবার কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতেও পারেনা।
ওরা প্রতিদিন সকালে বাচ্চাদের একটা স্কুলে পড়তে যায়। আসলে পড়া তো দূরের কথা টিফিন পিরিয়ডে বাচ্চাদের সাথে টিফিন খাওয়ার সুযোগ পায়। এই টিফিন খাওয়ার লোভেই ওরা প্রতিদিন স্কুলে যায়।
একদিন বানরটা, এক পথচারীর ফেলে দেয়া আধপোড়া একটা সিগারেট পেল। সঙ্গে সঙ্গে বানরটা তুলে নিয়েই আধশোয়া হয়ে পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে সিগারেট খেতে থাকে আর শুন্যে ধোঁয়া ছুড়তে থাকলো। এভাবে বানরের সিগারেট খাওয়া দেখেই কুকুরটা ভীষণ রেগে গেল। আর বললো-তুই জানিস না, সিগারেট খাওয়া ভালো না। কখনো দেখিসনি, সিগারেটের প্যাকেটে লেখা থাকে, সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ধুমধাম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর !
অন্য আরেকদিন বেড়াল, চোখের জলে বুক ভাসিয়ে কেঁদেই চলেছে। কুকুর ও বানর দুজনই জিজ্ঞেস করলো- কী হয়েছে রে তো ! এভাবে মরার মত কাঁদছিস কেন? বেড়াল কিছুইতেই কিছু বলে না, শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। অবশেষে বানর বিরক্ত হয়ে বেড়ালের গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। এরপর বেড়াল চুপ করলো। মাথা নিচু করে আহ্লাদের ঢঙে বললো- আমি কোনদিন হলে গিয়ে সিনেমা দেখিনি। আমি সিনেমা দেখতে চাই। এই কথা শোনার সাথে সাথেই কুকুর বললো- সিনেমা দেখতে তো টিকেট লাগে। আর টিকেট কিনতে টাকা লাগে। আমরা টাকা পাবো কোথায়?
কুকুরের এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বানর বললো- নো প্রবলেম। আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। কুকুর বললো- কী করতে চাস রে তুই !
বানর বললো- দেখ না, কী করি ! আমরা ওই বোকা মানুষগুলোকে খেলা দেখিয়ে টাকা আদায় করবো। আর ওই টাকা দিয়ে আমরা সিনেমা দেখব।
খেলা দেখালেই যে মানুষগুলো টাকা দেবে এমন তো নয় ! আর হ্যাঁ, ওটাকে আদায় বলে না। বল- সম্মানী।
এরপর টাকা যোগাড় করা হলো। বানর সিনেমা হলের কাউন্টার থেকে ফন্দি করে দুটো টিকেট কাটলো। বানর মন খারাপ করে এসে কুকুরের হাতে চিপস, চকোলেট, আর ছোট কোকাকোলার বোতল ধরিয়ে দিয়ে বললো- তুই এগুলো খেতে খেতে বাসায় চলে যা। কুকুর তো রেগে গিয়ে বললো- কেনো রে !
বানর একটু মন খারাপ করে বললো- ওরা না তোকে ঢুকতে দেবে না। তুই মন খারাপ করিস না। আমরা সিনেমা দেখে এসে তোকে সব গল্প বলবো। আর তুই ভেবে নিস তুই সিনেমা দেখেছিস।
অগত্যা, কুকুর রেগে ফুঁসে মন খারাপ করে বাসায় চলে এলো।
দেখতে দেখতে শীত চলে এলো। শীতের সকালে তিনবন্ধু মিলে রোদে বসে গল্প করছিল। এমন সময় হঠাৎ একটা বর্ণিল রিকশা দেখতে পেল। আর তাতে মাইকিং করা হচ্ছে- সার্কাস সার্কাস সার্কাস। দ্যা বুলবুল সার্কাস। আপনারা সবাই আমন্ত্রিত। যথা সময়ে দেখতে চলে আসুন।
এই কথা শোনার সাথে সাথে বেড়াল বললো কুকুরকে বললো- আচ্ছা সার্কাস কী ? কুকুর বললো- গোল বৃত্তাকারের মধ্যে সেখানে বিভিন্ন ধরণের খেলা প্রদর্শন করা হয়। আর তাছাড়া নানানরকমের পশু -পাখিদের দিয়েও খেলা প্রদর্শন করে থাকে।
বেড়াল জিজ্ঞেস করলো- আমাদের মত পশুপাখিও থাকে? কুকুর বললো- হ্যাঁ। বেড়ালের জানার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। সে বললো- কী কী পশুপাখি থাকে?
কুকুর বললো- এই যেমন ধর, বাঘ সিংহ হাতি ঘোড়া। আরও অনেক পশুপাখি বা জীবজন্তু। কুকুর, বেড়ালকে বললো- জানিস তো, সিংহ হলো পশুর রাজা আর হাতি হলো দুনিয়ার সবচাইতে মস্ত বড় স্থল প্রাণী।
বানর, এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বললো- মস্ত বড় প্রাণী। তাহলে তো তোর মস্ত বড় প্রাণীকে তো দেখতেই হয়। তাহলে চল- আমরা সকলে মিলে সার্কাস দেখতে যাই।
এরপর তিনবন্ধু মিলে সার্কাস দেখতে চলে গেল। সেখানকার স্টেজ কেমন যেনো একটু অন্যরকম। এরকম স্টেজ ওরা আগে কখনো দেখেনি। যেসব খেলাগুলো দেখাচ্ছে, তার সবটা দেখেই ওরা খুব মজা পাচ্ছে। এর ফাঁকে বানর তো অস্থির হয়ে আছে, বলছে- কই তোমার দুনিয়ার মস্ত বড় প্রাণী !
তারপর ওরা বহু প্রতিক্ষার পর হাতিকে দেখতে পেল। হাতি এসেই হাঁটু গেড়ে বসে শুড় উঁচু করে সবাইকে কুর্নিশ করলো।
কুকুর, হাতিকে দেখিয়ে বানরকে বললো- এ হচ্ছে দুনিয়ার মস্ত বড় স্থল প্রাণী হাতি।
এদিকে বানর হাতিকে খুব ভালভাবে লক্ষ্য করতে থাকলো এবং দেখলো। এরপর বললো- এটার নাম হাতি ! তালগাছের মত পা। থপাস থপাস করে হাটে। কান দুইটা পদ্মপাতার মত কত্তো বড়। মুখের কাছে কী যেন একটা ঝুলতেছে- এটার নাম নাকি আবার শুড় ! দেখতে কালো, মহিষের মত মোটা। এটার নাম তো গোলডুম হলে ভালো হত।
এই কথা শোনার সাথে সাথে কুকুর রেগে গিয়ে বললো- খবরদার ! বেটা পাঁজি। বাজে কথা বলবি না। জানিস না, হাতি মরলেও লাখ টাকা।
বি.দ্রঃ বর্তমান সময়টা যেমন ভার্চুয়াল উন্মাদনা। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলাটাও জরুরি। তেমনি শিশুদের মনস্তত্ত্ব গঠনে হারিয়ে যাওয়া সার্কাসের মত সুস্থ বিনোদনও ফিরে আসুক।