শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
সাতক্ষীরা জুড়ে ভূয়া এমবিবিএস,ডিএমএফ ও বিভিন্ন ভূয়া চিকিৎসকের ছড়াছড়ি। উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির স্বচ্ছতা ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র বাছাই করা হবে -তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী কালিগঞ্জে জাতীয় পাটির সভাপতি মাহবুবর রহমানের মায়ের কুলখানি অনুষ্ঠিত ভূমিমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্র গণপূর্তমন্ত্রীর সাথে ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধির সৌজন্য সাক্ষাৎ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে সরকার বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠন করবে। – পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন খাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে -তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী নতুন প্রজন্মের মাঝে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরার আহ্বান জানান মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। কালিগঞ্জে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ও সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন আতাউল হক দোলন এমপি

আনোয়ার কামালের প্রবন্ধগ্রন্থ “জীবনানন্দ দাশ ও অন্যান্য” গ্রন্থ পাঠ পরবর্তী কিছুকথা : তৌফিক জহুর

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১ মে, ২০২০, ১০.০৭ পিএম
  • ৩১৯ বার পঠিত

কবিতা বিষয়ক গ্রন্থ আলোচনা বা পাঠ পরবর্তী ভাবনা নিয়ে কথা বলার কিছু সুবিধা আছে।কবির চিন্তা, কবির ছন্দ, কবির, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, রূপক, বিষয় খোঁজার মধ্যে একটা সুখ আছে। হৃদয় আলোড়িত হয় শব্দের ঠাসবুনন আর শব্দের আদরে। কিন্তু গদ্য গ্রন্থ পাঠ পরবর্তী লেখায় এই সুবিধা নেই। এখানে একটা গদ্য শুরু করলে গভীর মনোযোগ সহকারে স্টিয়ারিং ধরে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকার মতো এগোতে হয়। গাড়ি গন্তব্য স্টেশনে পৌছানো পর্যন্ত মনোযোগ বিঘ্নিত করা যায়না যেমন তেমনি একটা গদ্য পাঠ শুরু করলে আদ্যোপান্ত না পাঠ করলে লেখক কি বলতে চেয়েছেন তা বোঝা মুশকিল। আমি কবি, প্রাবন্ধিক আনোয়ার কামাল এর ” জীবনানন্দ দাশ ও অন্যান্য ” প্রবন্ধ গ্রন্থের আলোচনা করতে যেয়ে এই ভূমিকার অবতারণা করলাম।

১.
” সাহিত্যের স্বরূপ” প্রবন্ধ গ্রন্থে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলছেন, ” যেখানে আার্টের উৎকর্ষ, সেখানে গুণী ও গুণজ্ঞদের ভাবের উচ্চশিখর। সেখানে সকলেই অনায়াসে পৌঁছাবে এমন আশা করা যায়না। সেইখানে নানারঙের রসের মেঘ জমে ওঠে- সেই দুর্গম উচ্চতায় মেঘ জমে বলেই তাঁর বর্ষণের দ্বারা নীচের মাটি উর্বরা হয়ে ওঠে।অসাধারণের সঙ্গে সাধারনের যোগ এমনি করেই হয়”(সাহিত্য ও সর্বসাধারণ, পৃষ্ঠা ৬১)। এই বিষয় টি রেফারেন্স হিসেবে এখানে উল্লেখ করলাম কারণ কবি আনোয়ার কামালের প্রবন্ধগ্রন্থে নানারকম রসের মেঘ জমে আছে। এই গ্রন্থের আঙিনায় যারা বসবেন তাঁদের শরীরে নানান বিষয়ের বিষয় বৃষ্টি হয়ে ঝরবে। তাঁদের হৃদয় হবে আলোড়িত। প্রবন্ধ গ্রন্থের বেশির ভাগ প্রবন্ধ কবির চারপাশ কেন্দ্রিক। আঠারোটি প্রবন্ধ নিয়ে তাঁর এই গ্রন্থ। কবির লেখালেখি শুরু হয় বাবার অনুপ্রেরণায়। বিষয়টা তিনি অত্যন্ত যত্নসহকারে বর্ণনা করেছেন। তাঁর গ্রন্থের২৬ পৃষ্ঠায় “বাবা আমার লেখালেখির প্রেরণার উৎস ” শিরোনামে জানাচ্ছেন, ” বাবা আমার খুব বই পড়ুয়া ছিলেন। হাতের কাছে যেসব বই পত্র-পত্রিকা পেতেন সবই পড়তেন।আমাদের পরিবারে দৈন্যদশা থাকলেও বাসায় অনেক বই ছিলো। যা বাবা কিনে সংগ্রহ করতেন। আমি সেভেন এইটে পড়ার সময় বাসার বইয়ের তাকে থরে থরে সাজানো রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, কাজী নজরুল ইসলাম, সমরেশ মজুমদার, শরৎচন্দ্র, ডেল কার্ণেগী,নীহার রঞ্জন সরকার, জসীমউদ্দিন সহ অনেকের বই দেখতাম। মাঝে মাঝে দু-একটা টেনে নিয়ে পড়ে বোঝার চেষ্টা করতাম।কিন্তু বেশিরভাগ বই খানিক পড়েই আর বেশিদূর আগাতে পারতামনা।কারণ মজা পেতামনা। আমার সেসময় বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেওয়া, ফুটবল খেলা,ক্যারাম খেলা আর সিনেমা দেখার দারুণ নেশা চেপে বসে।নেশা তো আছেই। তবে এই নেশা মেটানোর পয়সা কোথায়? পয়সা তো নেই। কি করা। বাবার থরে থরে জমানো বই থেকে মোটা মোটা দেখে কয়েকটা বাছাই করে পুরাতন বইখাতার দোকানে সের দরে বিক্রি করা শুরু করলাম।বই সের দরে বেচি,এটা ওটা খাই আর সিনেমা দেখি।…. এভাবে ভালোই চলছিল।এদিকে দেখতে দেখতে অনেক বই সাবাড় করেছি আর সিনেমা দেখার তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।…. ঠিক এ সময় একদিন আব্বা তাঁর কোনো একটি বই খুঁজতে গিয়ে তাকে হাত দেয়।তাক প্রায় খালি দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়। এবার আমাকে প্রশ্নের পালা।…… আব্বা আম্মা বই গোছাতে লাগলেন। আর পেয়ে গেলেন আমার ঐতিহাসিক সিনেমা দেখার তালিকা। বাবার হাতে চরম মার খেলাম।…… বই বেচে সিনেমা দেখেছিস?? আবার মার খেলাম। এমন মার খাওয়ার পরে আমার ভেতরে একটা প্রশ্ন জন্ম নিলো। কি আছে এসব বইয়ে? জানার অধিক আগ্রহ আমাকে পেয়ে বসলো।বইয়ের তাকের বাকি বইগুলো পড়া শুরু করলাম।একের পর এক বই পড়া শুরু করলাম,নিজের ভেতর একটা আগ্রহ জন্ম নিলো।…… একদিন আব্বা তার পুরনো ট্রান্ক থেকে ইত্তেফাকের দুটো সাহিত্য পাতা বের করে আমাকে পড়তে দিলেন।সে সংখ্যায় কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে উপরে লেখা ছিলো,আর পেপারটি ছিলো প্রায় ছয় বছর আগের।আব্বা বললেন এটা তোমার জন্য রেখেছি।আমি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলাম,আব্বা প্রায় ছয় বছর আগে এ কাগজটি তুলে রেখেছেন,শুধু আমি বড়ো হয়ে যেনো পড়ি এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে নিয়ে ধারণা নিতে পারি।সেই থেকে আমার পড়া আর লেখার আগ্রহ বেড়ে গেলো”(পৃষ্ঠা ২৭,২৮)। এভাবেই লেখক হয়ে উঠেছেন আনোয়ার কামাল। কবিতায়, প্রবন্ধে তিনি নিজস্ব চিন্তার ছাপ রাখছেন। এগ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ ” জীবনানন্দ দাশঃ ফিরে আসে একবার বারবার”।

২.
জীবনানন্দ দাশ কে নিয়ে আনোয়ার কামাল এর প্রবন্ধটি অনেক প্রশ্ন ও বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে ক্রমাগত সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন আনোয়ার কামাল। জীবনানন্দ দাশ তাঁর সময়ে নির্জনতার কবি ছিলেন। মানুষের সঙ্গে মিশতেননা খুব একটা। এ নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে ইতোপূর্বে। আনোয়ার কামাল তাঁর জীবনানন্দ দাশ কে নিয়ে প্রবন্ধে লিখেছেন, ” সারাটা জীবন ছিলেন নিজের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে রাখা ভিষণ রকমের মুখচোরা মানুষ। তাঁকে উপেক্ষার পর উপেক্ষা করেছে সেই সময়ের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমনকি কাজী নজরুল ইসলাম পর্যন্ত। কাজী নজরুল, জীবনানন্দ সমবয়সী,একই সঙ্গে কবিতা লিখেছেন তারা। তবে নজরুল জীবনানন্দ কে খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বলে জানা যায়না।বরং অবজ্ঞার দৃষ্টিতেই দেখেছেন। আর সজনীকান্ত তো আদাজল খেয়ে তাঁর যে কোনো লেখা প্রকাশিত হলেই ব্যবচ্ছেদ করেছেন যাচ্ছেতাই বিশ্রীভাবে। কবির কবিতার আধুনিকতার ধারার সাথে প্রতিষ্ঠিত অনেক কবিই সে সময় সহমত পোষণ করতে পারেননি।”( জীবনানন্দ দাশঃফিরে আসে একবার বারবার,পৃষ্ঠা ১৬)। এখানে প্রাবন্ধিক আনোয়ার কামাল রবীন্দ্রনাথ থেকে সজনীকান্ত পর্যন্ত লিখেছেন একটানে। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলাম জীবনানন্দ দাশ কে অবজ্ঞা করেছেন, এ তথ্যের উৎস উল্লেখ করেননি। সজনীকান্ত সহ ত্রিশের দশকের অনেকেই সেসময় জীবনানন্দ দাশের কবিতার ভাষার টিউন বুঝতে পারেননি, এটা বোঝা যায় এ সময়ে। সে কারণে জীবনানন্দ দাশ কাল পেরিয়ে মহাকালের আঙিনায়ও আধুনিকতম কবি। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত জীবনানন্দ দাশ কে কবি বলে স্বীকার করতেন না, হায়াৎ মামুদের উক্তি কোড করে একই প্রবন্ধের ২০ পৃষ্ঠায় তিনি জানাচ্ছেন। এখানে কবিতার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পাশাপাশি লেখক উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন বেশ কিছু। যা প্রবন্ধের গতি ও বেগ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। শুধু জাতীয় কবির ক্ষেত্রে লেখক উদ্ধৃতি ব্যবহার করলে আরো চমৎকার হতো।

৩.
“ও বন্ধু আমার, আজো ভুলিনি”… একটি চমৎকার স্মৃতিচারণ মূলক গদ্য। এ গদ্যের মাধ্যমে কবির বেড়ে ওঠা, কবির স্কুল জীবন, কলেজ জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিত্র আমরা খুঁজে পাই। পিতার চাকরিসূত্রে বিভিন্ন জেলায় বদলি লেখকের অভিজ্ঞতার ভান্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ। আনোয়ার কামালের এই প্রবন্ধ গ্রন্থ কে একাধারে গবেষণা, নিরীক্ষা আবার স্মৃতিচারণ গ্রন্থ হিসেবে আখ্যা দেয়া যায়।


০৪.
একজন লেখক কে চিরটাকাল একাই পথ চলতে হয়। লেখকের অভিজ্ঞতা ও পঠন-পাঠনের গভীরতা লেখক কে অনন্য মর্যাদায় নিয়ে যায়। আনোয়ার কামালের গদ্য লেখার প্যাটার্ন চমৎকার। ঝরঝরে বাংলায় সহজকথায় তিনি লিখেছেন গদ্যগুলো। ভাষার জটিলতা পরিহার করে দুর্বোধ্য শব্দ প্রয়োগ না করে যে প্রবন্ধ লেখা হয়, সেই প্রবন্ধগুলো পাঠকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। পাঠক সেই ভাষার শব্দবুননের প্রেমে পড়ে যায়। বারবার পড়তে চায় সেই শব্দের ঠাসবুনন। ” মনজু রহমান’র কবিতায় প্রেমের মিথস্ক্রিয়া শিস কাটে”… এই প্রবন্ধটি সেরকম। এই প্রবন্ধের রস আস্বাদন করার জন্য একজন পাঠক বারবার এই গ্রন্থের দুয়ারে কড়া নাড়বে। ” সৌমিত বসুর কবিতা মিথস্ক্রিয়ায় খাপখোলা তলোয়ার” প্রবন্ধটি সুখপাঠ্য। কবি সৌমিত বসু কে নতুনভাবে চেনা যায় এ প্রবন্ধে। আনোয়ার কামাল নিজেও কবি।কবি বলেই অন্য কবির কবিতার গভীরে দারুণভাবে প্রবেশ করেছেন। মহৎ কবিতা ভুরি ভুরি সৃষ্টি হয়না। তেমনি সহজ সাবলীল গদ্য লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। কবি আনোয়ার কামাল সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন। মানুষের বুদ্ধি সাধনার ভাষা আপন পূর্ণতা দেখিয়েছে দর্শনে, বিজ্ঞানে।হৃদয়বৃত্তির চূড়ান্ত প্রকাশ কাব্যে। দুইয়ের ভাষায় অনেক তফাৎ। আর এই সৃজনশীলতার চর্চার মধ্যে গদ্য চর্চায় ভাবের সাজসজ্জা অলংকার তত বেশি থাকে, যিনি যতবেশি পড়াশোনা করেন। আনোয়ার কামালের প্রবন্ধ গ্রন্থ পাঠ করে মনে হয়েছে, তিনি পঠনপাঠনে রস আস্বাদনে কোনো ছাড় দেননা। এখানেই আনোয়ার কামালের মৌলিকত্ব প্রমাণিত হয়েছে জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে গভীর ও ব্যাপক ধারণার উপর।

তৌফিক জহুর
কবি ও সম্পাদক,
উদ্যান

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
  12345
20212223242526
27282930   
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com