হাফিজুর রহমান শিমুলঃএখন চলছে পাখির প্রজনন মৌসুম। অর্থাৎ তাদের বংশবৃদ্ধির কার্যক্রম। বাসার স্থান নির্বাচন, বাসা তৈরি, ডিম দিয়ে তাতে তা দেওয়া এবং সবশেষে ডিম ফুটে ছানা বের হওয়া। এভাবে নির্ধারিত হয় পাখিদের জীবনচক্র।
কিন্তু কালবৈশাখীসহ ঝড়বৃষ্টির এই মৌসুমটি পাখির জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। বিশেষ করে পাখির ছানাদের ক্ষেত্রে। এই সময়ের বিরামহীন ঝড়বৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রে পাখির ছানাগুলো তাদের বাসা থেকে মাটিতে পড়ে যায়।
এই দৃশ্য দেখে কারো কারো হৃদয়ে মায়া-মমতার জন্ম হয়। ঝড়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া কোনো পাখির ছানাকে পুনরায় গাছের তুলে দেওয়া কিংবা পাশের গাছের পাখির বাসায় রেখে দেওয়ার আনন্দ সীমাহীন।
মাটিতে পড়ে যাওয়া পাখির ছানাকে গাছে তুলে এমন ভালোলাগার আশ্চর্য অনুভূতির সঙ্গে আমরা অনেকেই জড়িয়ে পড়তে পারি। শুধু ইচ্ছেটাই এখনে প্রধান। তারই ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর নামক স্থানে মঙ্গলবার রাত আটটায় ধেয়ে আসা ঝড়-বৃষ্টিতে মাটিতে পড়ে যাওয়া শতাধিক চরাই পাখির প্রাণ বাঁচালো একদল যুবক। তারা হলো ফরহাদ হোসেন, মাসুদ পারভেজ, ডা: ছবির আলী, মিঠু সরদার, আরিফুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
ঝড়-বৃষ্টিতে মাটিতে পড়ে যাওয়া পাখি প্রাণ বাঁচানো যুবক কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী তথ্য প্রযুক্তি লীগ এর সভাপতি সাংবাদিক মাসুদ পারভেজ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জীবেপ্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” ঝড়ে পড়ে যাওয়া এই শতাধিক পাখির জীবন বাঁচাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত, উল্লোসিত। আর শুধু তাই নয় পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকরে। সবুজ এই পৃথিবীর সবুজ কোন প্রান্তর পাখি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। পাখির মিষ্টি কিচির মিচির ডাক ছাড়া সবুজ এই প্রকৃতিকেও উপভোক করা সম্ভব না। সৃষ্টিকর্তার অপরুপ সৃষ্টি পাখি শুধুমাত্র প্রকৃতির সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং পরিবেশ ও জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। পৃথিবীতে অসংখ বিষাক্ত পোকা-মাকড় রয়েছে, পাখিরা এসব পোকা-মাকড় খায়। প্রতিবছর সারাবিশ্বের পাখিরা ৪০ থেকে ৫০ কোটি মেট্রিকটন ক্ষতিকর পোকামাকড় খায়।
ঝড়-বৃষ্টিতে মাটিতে পড়ে যাওয়া পাখির প্রধান বাঁচানো আরো এক ব্যক্তি ডা: ছবির আলী বলেন, বনে থাকা পাখিরা ৭০ শতাংশ পোকামাকড় খেয়ে ফেলে।তৃণভূমি, ফসলি জমি, মরুভূমিতে থাকা পাখিরা বনে থাকা পাখিদের তুলনায় কম পরিমাণ পোকামাকড় খায়। পোকামকড় খেকো পাখিদের দলে রয়েছে মাকড়সাও। তবে পাখিদের বিপন্ন হওয়ার আংশকা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। পাখিরা বিপন্ন হুমকির মধ্যে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ বনের সংখ্যা কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিতে রাসায়নিক তীব্রতা বৃদ্ধি, মানুষসৃষ্ট কিছু দুর্যোগ প্রভৃতি। তাই আসুন আমরা পশু-পাখির জীবনকে রক্ষা করি সেই সাথে সাথে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করি।