সংবাদ হলো মানবিক ও মনের কুপ্রবৃত্তির বশীভূত না হয়ে মানবকল্যাণে সত্য সংবাদ পৌঁছে দেওয়া।সঠিক সাংবাদিকতা হচ্ছে যেকোনো তথ্য ও সংবাদ অবিকৃত অবস্থায় গণমাধ্যমে তুলে ধরা।সংবাদের তথ্য যাচাই ও সত্যতা নিরূপণ করা সাংবাদিকের অপরিহার্য কর্তব্য। অনেক সাংবাদিক আছে তারা ব্যক্তিস্বার্থ, দলীয় স্বার্থ কিংবা নিজস্ব চিন্তাচেতনাবিরোধী হওয়ায় অনেক প্রাপ্ত তথ্য গোপন করে থাকে।আমার দৃষ্টিতে এটা উচিত নয়।ব্যক্তিগত আক্রোশে কাউকে হেয় করার মানসে কারো একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা আমার দৃষ্টিতে খুবই গর্হিত কাজ।কোনো বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনের আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা সাংবাদিকতার অন্যতম শর্ত। সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা সম্ভব নয়। তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে সংবাদ প্রচার করা সাংবাদিকের অপরিহার্য কর্তব্য।সাংবাদিকতা পেশাকে মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখে। এ পেশার লোকজনকে অনেকেই জাতির বিবেক বলে থাকেন। প্রকৃত সাংবাদিকের কোন দেশ কাল পাত্র নেই। তারা জগৎ সভার এক একজন পরীক্ষক ও নিরীক্ষক। সামাজিক অনাচার ও বৈপরিত্যের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা, মানবতার অতন্দ্র প্রহরী সাংবাদিকরা দেশ ও জাতির শেষ ভরসা। আমি মনে করি,সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিকরা এসব কিছু মোকাবিলা করেই তাদের পেশার সম্মানকে অমলিন করে রাখছেন।শুধু দেশ, জাতি নয়, বিশ্ব উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা দেশে দেশে স্বীকৃত। সাধারণ জনগণের এ মহান পেশার প্রতি প্রগাঢ় আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। কারণ এ সমাজের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরবারির ন্যায় কলমের শানিত অস্ত্র একমাত্র সাংবাদিকরাই ধরে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের ঘটনা প্রবাহের সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি পত্রিকার মাধ্যমে দেশের বর্তমান অবস্থা ও করণীয় বিষয়ও অহরহ দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত হই তখন, যখন দেখি কোন সাংবাদিক ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বিবেচনায়, অহংকার কিংবা প্রলোভনের কারণে সাংবাদিকতার নীতিমালা এবং কর্তব্যবোধ বিসর্জন দিচ্ছে।একজন সাংবাদিকের লেখার স্বাধীনতা মানে অন্যের অধিকার, সামাজিক অবস্থান, মান-সম্মানকে উপেক্ষা করা নয়। লেখার স্বাধীনতার সুবাদে এরা ন্যূনতম বিধি-বিধান আর নীতি-জ্ঞানকে তোয়াক্কা না করে সত্যকে গোপন করে মিথ্যাকে ফুলিয়ে রং লাগিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা নয়।মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের আগে তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হয়। যে খবরটি মিডিয়ায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তা আদৌ সত্য কিনা তা যাচাইয়ের নিয়ম আছে সংবাদপত্র জগতে। সংবাদকর্মীরা যদি কোনো তথ্য সঠিকভাবে যাচাই না করে মিডিয়ায় প্রচার করে দেন, তাহলে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে। যার মাসুল ঐ সংবাদকর্মী দিতে পারবেন না। যাচাই বাছাই ছাড়াই সংবাদ প্রকাশের অনেকগুলো মাধ্যমের মধ্যে একটি মাধ্যমের নাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বর্তমানে এধরনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে শুরু করে সবখানে বিদ্যমান।অনেক সংবাদকর্মী লোকমুখে যা শুনেন তাই মিডিয়ায় প্রচার করে দেন।তাই ‘সত্য প্রকাশে আপসহীন’ এটিই হোক সাংবাদিক সমাজের প্রতিশ্রুতি আর এই প্রতিশ্রুতি কে সামনে রেখে মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন এগিয়ে যাওয়া উচিত।বতর্মানে সাংবাদিকতা পেশাটি অনেক কঠিন। কারণ সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব যখনই যার বিপক্ষে গেছে বা ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দলীয় ও এলিট শ্রেণির স্বার্থে আঘাত লেগেছ তখনই তাদের ওপর নেমে এসেছে বর্ণনীয় নির্যাতন ও নিগ্রহের ঘটনা। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের জীবন দিয়েও প্রায়শ্চিত্য করতে হয়েছে।আর এই সমস্যার মূল সমাধান হলো সকল সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া। তাই আমি মনে করি বর্তমানে সাংবাদিকদেরকে সমাজে টিকে থাকতে হলে ঐক্যের বিকল্প নাই।মূলত সত্য প্রকাশে আপসহীনতা একজন আদর্শ সাংবাদিকের অন্যতম কর্তব্য। সাংবাদিকরা নতজানু হয়ে কাজ করলে গণমাধ্যমের কার্যকারিতাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।সংবাদ ও সাংবাদিকতায় স্বচ্ছতা, ন্যায়পরায়নতা, সাবলীল ভাষা ব্যবহার ও সাংবাদিকদের সকল লোভ লালসা ত্যাগ করে সকলের নিকট সত্য প্রকাশ করা সকল সাংবাদিকদের নৈতিক দায়িত্ব।গুজব ও মিডিয়া সন্ত্রাস কাম্য নয় সংবাদ কখনো গুজবের জন্য হতে পারেনা, এবং তা হতে পারেনা কাউকে বিভ্রান্ত বা প্রতারণা করার জন্য।আমরা সকলে জানি গুজব ও মিডিয়া সন্ত্রাসের কারণে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে , সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এবং দেশ জুড়ে দেখা দেয় বিশৃংখলা। তাই এটা সম্পূর্ণ আমাদের বর্জন করতে হবে।আমি একজন ক্ষুদ্র কলামিষ্ট হিসেবে আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি সংবাদের তথ্য যাচাই ও সত্যতা নিরূপণ করা প্রত্যেক সাংবাদিকের অপরিহার্য কর্তব্য।
মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ
সম্পাদক,
মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন।