উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জন্ম থেকেই জনমুখী সংগঠন। জন মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য লড়াাই সংগ্রামে আত্মত্যাগ ও প্রতিশ্রুতিশীল থাকার কারণে সাধারণ মানুষের সমর্থনে এ সংগঠন আজ পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিস্ময়কর সংগ্রামী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক সংগঠনের মর্যাদা অর্জন করেছে। উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, ৪৭’এ ধর্মভিত্তিক ভৌগোলিক বন্টন বা দ্বিজাতিতত্ত্বে দেশভাগ হবার পর যখন এ অঞ্চলের মানুষের পরিচয়ের মুখ্য বিষয়টি হয়ে উঠে ছিল কেউ মুসলিম কেউবা হিন্দু এমনই সামাজিক পেক্ষাপটে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুবিধাজনক অবস্থানে না থেকে ১৯৪৯ এর ২৩ জুন সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলার বড় চ্যালেঞ্জটি নিয়ে যে সংগঠনটির জন্ম নিয়েছিল সেটাই ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতার রক্তাক্ত সংগ্রামে বাংলা ও বাঙালীর মহাকাব্যিক ইতিহাসের নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপোষহীন নির্লোভ দৃঢ়নেতৃত্ব এবং মানুষের মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার অতল আত্মত্যাে সে সময়ের বাংলার সাত কোটি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও সমর্থন অর্জন করেই, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর ৪৯ থেকে ৭১ বিশ বছরে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর একের পর এক কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৪ এর দাঙ্গা মোকাবেলা ও ১৯৬৬ এর ছয় দফা,১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক বিজয়ের পর ১৯৭১ এ জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন ও আত্মত্যাগের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে একটি শোষিত, নির্যাতিত, পরাধীন জাতির জন্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দেবার বিরল গৌরবময় অর্জন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস ১৯৪৯ থেকে ২০২০, দ্বিধা বিভক্ত ধর্মীয় সমাজ থেকে অসাম্প্রদায়িক সমাজ রাষ্ট্র গড়ে তোলার সংগ্রাম, পরাধীন নির্যাতিত জাতি থেকে স্বাধীন জাতিসত্তা, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার বাংলাদেশ, তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে একুশ শতকের উপযোগী আধুনিক উন্নত প্রযুক্তিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে দেশরতœ শেখ হাসিনার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ বাংলা, বাঙালী ও বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও বিজয়ে সাথে এত নিবিড় ভাবে ইতিহাসের পরতে পরতে মিশে আছে যে জাতির ইতিহাস থেকে তুলে এনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আলাদা করে দেখানোর সক্ষমতা কোন ইতিহাস গবেষকেরই নেই, কারণ বাংলা, বাঙালী ও বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস একই অক্ষরে লিখিত, একই পৃষ্ঠায় মুদ্রিত।
প্রতিষ্ঠা থেকে আজ অব্দি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ ও জীবনের বিনিময় অর্জিত ইতিহাস প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই আদর্শিক সংগ্রাম এক সংকটময় ও দুর্গম যাত্রা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য আজ অব্দি প্রতিটি মুহূর্তই সংকটময় কারণ রাজনৈতিক দল হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, এ সংগঠনকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করবার জন্য জাতীয় ওআন্তর্জাতিকভাবে যতবার ষড়যন্ত্র হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের হত্যা করা হয়েছে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কর্মী বিবেচনায় আওয়ামী লীগের কর্মীদের উপর যতবার হামলা করা হয়েছে, বিনা বিচারে দিনের পর দিন কারারুদ্ধ করা হয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে কোন রাজনৈতিক দল ও তার কর্মী-সমর্থকদের প্রতিটি মুহূর্তে এত প্রতিকূলতার মধ্যে টিকে থাকতে হয়েছে কিনা সেটা গবেষকরাই বলতে পারবেন।
৭৫’এর ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেল বন্দি অবস্থায় হত্যায় এটা স্পষ্ট যে আওয়ামীলীগকে নেতৃত্ব শূন্য করবার জন্য আওয়ামী লীগ বিরোধীরা কতটা নির্মম ও ভয়ঙ্কর। এমনকি শিশু রাসেলকে হত্যায় প্রমাণ হয় যে বঙ্গবন্ধুর রক্তের শেষ চিহ্নকে নিশ্চিহ্ন করবার জন্য তারা কতটা নির্দয় ও নিষ্ঠুর।
১৯৮১ তে অবরুদ্ধ বাংলায় ফিরে এসে পিতাহীন বাংলার দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ান নির্বাসিত রাজকন্যা, এদেশের মানুষের শেষ আশ্রয়স্থান, স্বপ্ন-বিশ্বাস-ভালোবাসার ঠিকানা বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা,দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর। ১৯৮১থেকে ২০২০, ঊনচল্লিশ বছরে তার ইস্পাতকঠিন নির্লোভ দৃঢ় নেতৃত্ব এবং দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তার আত্মত্যাগ ও সীমাহীন মমতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের মাটি ও মানুষের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তার নেতৃত্বেই দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়, সুশাসন ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের বিনিময় অর্জিত বিজয়ের জয় যাতাত্রায় বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ এক বিস্ময়কর রাজনৈতিক সংগঠন।
বঙ্গবন্ধু কন্যার এই সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ফসল হিসাবে দেশের মানুষ যতবার তাদের রায় ও সমর্থন জানাবার সুযোগ পেয়েছেন ততোবারই তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে তাদের রায় ও সমর্থন জানিয়েছেন। আত্মত্যাগী এই লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী এবং দেশরতœ শেখ হাসিনার প্রতি দেশের মানুষের এই অকুণ্ঠ সমর্থনই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই আদর্শিক যাত্রার মূল প্রেরণা।
জাতির জনকের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে এই সংগ্রামের প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্তেই মোকাবেলা করতে হয়েছে ঘাতকের একটির পর একটি ষড়যন্ত্র।৭৫ পরবর্তী সময়ের সামরিক ও ছদ্দবেশী মৌলবাদী সরকার অসংখ্যবার তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে এবং আজও এক মুহূর্তের জন্যও সে চেষ্টা থেমে নেই। ২১শে আগস্ট ২০০৪ বঙ্গবন্ধু এ্যভিনিউ এর ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলা ও জঘন্য হত্যাকান্ড চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় শেখ হাসিনাকে হত্যা করবার জন্য তারা কতটা মরিয়া।
জন্ম থেকেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একদিকে যেমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছে অন্যদিকে দলের অভ্যন্তরে ক্ষমতালোভী বিশ্বাসঘাতকদের দিয়ে দলকে আঘাত করে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। সেটা আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকলে যতটা হয়েছে ঠিক ততটাই আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থাতেও হয়েছে। বরং ইতিহাস এই কাল সত্যটিকে বলে দিয়ে যায় যে, এদেশের সবথেকে জঘন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র পঁচাত্তরের ১৫ ই আগস্টের হত্যাকান্ড আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই সংঘটিত হয়েছে। কাজেই আওয়ামী লীগের জন্য জন্ম থেকে আজ অব্দি প্রতিটি মুহূর্তই যেমন সম্ভাবনাময় ঠিক তেমনি সংকটময়ও বটে।
‘৭১’ সংখ্যাটিই এদেশের মানুষের জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য সর্বোচ্চ সংগ্রাম ও লড়াইয়ের বার্তা নিয়ে আসে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবছর তার
৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন, মুজিব বর্ষের ২৩ জুনে। বরাবরের মতো প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণাঢ্য আয়োজন ও মুজিববর্ষের অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি করোনা সংকটে স্থগিত হলেও বঙ্গবন্ধুর অন্যতম আদর্শ ‘বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানে’’ সেটাকেই ধারণ করে বৈশ্বিক মহামারী করণা সংকট মোকাবেলায় সরকারের সাথে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী সমর্থক নিজের জীবনের বাজি রেখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই মহৎ ও শ্রেষ্ঠ কর্মসূচি আবার প্রমাণ করে যে, এই দেশ ও দেশের মানুষের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
দশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই মানবিক কর্মসূচি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে আধুনিক, উন্নত ও প্রযুক্তিশীল বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার যে নিশানা আজ জেগে উঠেছে তাতে আওয়ামী লীগ দেশের তরুণ সমাজের শতভাগ আস্থা অর্জন করেছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রজন্মের সেতুবন্ধন হয়ে সকল সম্ভাবনা নেতৃত্ব দিতে পারে সেটাই আওয়ামী লীগের সবথেকে বড় সার্থকতা এবং প্রজন্মের সন্তানেরা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে যেকোনো সঙ্কটে রক্ষা করবে এই বিশ্বাসই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব থেকে বড় শক্তি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। মোঃ হাফিজ খান মিলন, সাবেক সহ-সম্পাদক- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটি ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক-বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বলেন, উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জন্ম থেকেই জনমুখী সংগঠন। জন মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য লড়াাই সংগ্রামে আত্মত্যাগ ও প্রতিশ্রুতিশীল দল।