মুহাম্মাদ শোরাফ উদ্দিন:বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা গুলোর মধ্য থেকে লক্ষ্মীপুর জেলা অন্যতম। লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলায় নদীর তীরে অবস্থিত! তারমধ্যে রামগতি কমলনগর সবচেয়ে বেশি নদীমাতৃক।
কমলনগর উপজেলা মোট নয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত! তারমধ্যে চর কালকিনি ইউনিয়ন সাহেবেরহাট ইউনিয়ন চর ফলকন ও পাটোয়ারীর হাট নদীর সাথে লাগোয়া। কালকিনির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ একাংশ আজ নদীতে বীলিন হয়ে গেল। সাহেবের হাট ইউনিয়ন এর একটি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি আটটি নদীতে ভেঙে গেল।কাদির পন্ডিতের হাট সহ প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল।আর কিছু দিনের মধ্যেই লরেঞ্চ বাজার ও হাজির হাটের মাতাব্বরহাট এবং স্বয়ং হাজির হাট বাজার ও হুমকির মুখে।যে কোন সময় পুরো কমলনগর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে।
বিগত কয়েক বছরে হাজার হাজার ঘর বাড়ি নদীতে বীলিন হয়ে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকেই আজকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের পাশে কুড়ে ঘরের মধ্যে বসবাস করছে। যে কোন সময় কোন যানবাহন দুর্ঘটনা ঘটে তাদের জীবন চলে যেতে পারে। তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত আজ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে! এরা আজ শিক্ষা দীক্ষা থেকেও রয়েছে অনেক পিছিয়ে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি 2008 সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন রামগতি-কমলনগরের এমপি ছিলেন বিএনপির আশ্রাফ উদ্দিন নিজান সাহেব! তিনি বিরোধী দলের এমপি তাই এই নদীভাঙ্গা নিয়ে তিনি কোন কাজ করতে পারেন নাই!এই অজুহাতে উন্নয়ন এর কিছু আমাদের কপালে জুটে নাই।
কিন্তু 2014 সালে যখন আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসে তৎকালীন আওয়ামী লীগ এমপি আব্দুল্লাহ আল মামুন সাহেব এর মাধ্যমে রামগতি-কমলনগরে নদী বাঁধ নির্মাণ করার জন্য কয়েক শ কোটি টাকা বাজেট দেওয়া হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বাজেট গুলো দিয়েছেন সেই বাজেটের টাকা দিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন সাহেব তিনি রামগতির অধিবাসী হওয়ার কারণে কিছুটা বাঁধ নির্মাণ করা হলেও কমলনগরে বিন্দু পরিমাণ করা হয়নি! প্রতিটি বাজেটে আমরা শুনেছি আমাদের নদী বাঁধ নির্মাণ করার জন্য সরকার বাজেট দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কমলনগর এর মানুষের কপালে আর জুটলো না সেই বাজেটের সুফল।
এরপরে জনাব মেজর মান্নান সাহেব রাতের আঁধারের ভোটে যখন তিনি এমপি হলেন !আমরা দেখলাম তিনি বিশাল এক দুর্নীতির খতিয়ান প্রকাশ করলেন যার মধ্য প্রায় শত কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে আব্দুল্লাহ আল মামুনের অনুসারীরা। নদী বাঁধ নির্মাণ করার কথা বলে একপ্রকার হরিলুট হলো জনগণের টাকা!শুধু কি তাই এই নদীভাঙ্গা অসহায় মানুষদের জন্য যতগুলো বাজেট সরকার দিয়েছে প্রতিটি বাজেটের টাকা ক্ষমতাসীনরা লুটেপুটে খেয়েছে। আজ পুরো কমলনগরে নদীর ভাঙ্গনে হুমকির সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু একের পর এক বাজেটে হয়েছে কোনো কাজ হয়নি।
আজকে মানুষ তাদের বসত ভিটা হারানোর শঙ্কায় প্রতিনিয়তই আতংকের মধ্যে নদীর পাড়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে যেকোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে অনাথ শিশুটি ও। কিন্তু দেখার মত কেউ নেই বোঝার মতো কেউ নেই কিন্তু দুর্নীতি করার মতো লোকের অভাব নেই।
আমাদের আজকে রামগতি-কমলনগরে রাজনৈতিক নেতাদের এবং ক্ষমতাসীনদের কাছে প্রশ্ন একে একে যে এতগুলো সময় ধরে যে বাজেট হয়েছে যে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য- নদীতে বাঁধ দেওয়ার জন্য- ব্লক ফেলানোর জন্য! এই বাজেটের টাকাগুলো কৈ গেল? অসহায় মানুষ গুলো কে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে কারা কোটিপতি হয়েছে করেছে বাড়ি গাড়ি?? আজকে আমরা কমলনগরের একজন অধিবাসী হিসেবে জানতে চাই?!
কোটি কোটি টাকা যারা লুটেপুটে খাইলো এবং খাচ্ছে এদের হাত থেকে প্রিয় কমলনগর কে রক্ষা করতে হবে।
এদের দুর্নীতি আর চুরির কারণেই নদী বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে না।তাই সময় থাকতে সচেতন হতে হবে আমাদের কে।
লিখছেন: একেএম আব্দুজজাহের আরেফী