ঝালকাঠি প্রতিনিধি: একাধারে আইনজীবি ও ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সম্পাদকের দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝালকাঠির ডজনখানেক সাংবাদিককে হেনস্থা, মামলা, হামলা, পত্রিকাচ্যুত করেছেন আককাস সিকদার। বাদ পড়েনি সিনিয়র থেকে জুনিয়র সাংবাদিকরা। তার সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে প্রেসক্লাবের সদস্যপদ হারাতে হয়েছে অনেককে। তার অত্যাচার থেকে সাংবাদিকদের মুক্তি ও ঘটনার বিচার পেতে সোমবার ২০ জুলাই প্রেস কাউন্সিল, বার কাউন্সিল, আইনজীবি সমিতি ও ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। দৈনিক ভোরের সময় ও আমাদের বরিশাল পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি বশির আহম্মেদ খলিফা বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
কে এই আককাস সিকদার: ঝালকাঠি শহরের উপজেলা পরিষদের সামনে বাপের ছোট্ট একটি চায়ের দোকান থেকে তার উৎপত্তি। কখনো বাদাম বিক্রি কখনো টেনিস বল টোকানো এই আককাস এখন ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের দু’বারের সাধারণ সম্পাদক। তার হাতে এখন কুক্ষিগত ঝালকাঠি প্রেসক্লাব। যখন যাকে যে পদে বসাবেন তিনি সেই পদেরই অধিকারী হবেন। যার কারনে প্রেসক্লাবের কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। এমনকি তার মোটর সাইকেল ড্রাইভারকেও প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ প্রদান করে কেউ টু শব্দটিও করতে সাহস পায়নি। আককাস বাসসেরও জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি জিয়াউল হাসান পলাশ ও যমুনা টিভির প্রতিনিধি দুলাল সাহা রোষানলে পড়েন। নিম্মমানের ঠিকাদারী কাজের সংবাদ ও কাজ না করে বিল উঠিয়ে নেয়ার সংবাদ প্রকাশ করায় ওই ঠিকাদারকে পরামর্শ দিয়ে চাঁদাবাজি মামলা করিয়ে জেলহাজত খাটিয়েছেন। দৈনিক যায়যায়দিন প্রতিনিধি ও একুশে টিভির প্রতিনিধি আজমীর তালুকদারকে রাজাপুরে একটি সংবাদ প্রকাশের ঘটনা সাজিয়ে তার নিকটাত্মীয় একব্যক্তিকে বাদী সাজিয়ে ৩০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মামলা দায়ের করায়। এ ঘটনায় আসামি করা হয় আজমীর তালুকদারের বউকেও। আককাস উকিল হওয়ায় আদালতকে ভুল বুঝিয়ে বউকে ৭দিন এবং আজমীরকে ১৫দিন হাজতবাস করাতে সক্ষম হন।
সংবাদ প্রকাশের কারনে যেভাবে হয়রাণী করা হয়েছিল কতিপয় সংবাদকর্মীককে। বছর দুয়েক আগের ঘটনা। শহরের বিশ্বরোডের এক ধর্নাঢ্য পুত্র তার মাকে গরুঘরের পাশে বছরের পর বছর থাকতে দিয়ে মানবতা লঙ্ঘিত করছিল। এমন খবরে ঝালকাঠির দিনকালের প্রতিনিধি ওমর ফারুক, যায়যায়দিনের তৎকালীন প্রতিনিধি এমদাদুল হক স্বপনসহ ৪-৫ সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান। খবর পেয়ে আককাস গৃহকর্তাকে বাঁচাতে তাকে বাদি সাজিয়ে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করাতে সক্ষম হন। পরে তদন্তে চাঁদাবাজির ঘটনা প্রমানিত হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি এসএম রেজাউল করিমসহ ২-৩জন সাংবাদিককে অপসাংবাদিক আখ্যা দিয়ে ঝালকাঠি ছাড়তে হুলিয়া দেয়া হয়েছিল। দৈনিক দক্ষিনাঞ্চলের তৎকালীন প্রতিনিধি এজিএম মিজানুর রহমানকে প্রকাশ্যে আইনজীবি সমিতির হলরুমে লাঞ্ছিত করে তাকে দুটি মামলা দিয়ে হয়রাণী করেছিলো এই আককাস। দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধি এসএম রাজ্জাক পিন্টুকে অপসাংবাদিক আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করাতে উদ্যত হয়। মোহনা টিভি ও আলোকিত বাংলাদেশ’র প্রতিনিধি রুহুল আমিন রুবেল, বশির উদ্দিন খলিফাকে একাধিক চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে ও মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ফেসবুকে মিথ্যা, মনগড়া ও কুরুচিপূর্ণ লেখা লিখিয়ে হয়রাণী ও অর্থদন্ড করাচ্ছে।
সর্বপরি এই আককাস সিকদারের কবল থেকে ঝালকাঠির অগনিত সাংবাদিক হয়রাণীর শিকার হচ্ছেন। এদের অধিকাংশ সাংবাদিকরাই মানসম্মানের ভয়ে প্রতিবাদটুকুও করেনি। তার নাকি হাত অনেক লম্বা। কখনো আইনজীবি কখনো সাংবাদিক হওয়ায় জেলার চারটি থানায় তার বেপরোয়া তদবির বানিজ্য রমরমা। প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাধে স্থানীয় প্রশাসন তার ইচ্ছামাফিক কাজ করতেই অভ্যস্থ। আককাস প্রেসক্লাবের নাম করে বিভিন্ন ক্লিনিক, ইটভাটা সমিতি, কাজী সমিতি, বালি উত্তোলনকারী, আড়ৎদ্দারপট্টি, টমটম, অটো, বাস মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন স্পট থেকে মাসোয়ারা উত্তোলন করছে। যার অধিকাংশ হিসাবই নিজে পকেটস্থ করে বিপুল অর্থের মালিক বনে গেছেন। যার ফলে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না।
আককাসের বিরুদ্ধে কথা বলে প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ হারিয়েছেন সমকালের জিয়াউল হাসান পলাশ, যমুনা টিভির দুলাল সাহা (পুনরুদ্দার), দৈনিক মতবাদের তৎকালীন প্রতিনিধি একেএম মোতালেব হোসেন, দেশটিভির মনির হোসেন (মরহুম), একুশে টিভির আজমীর হোসেন তালুকদার, ডিবিসি টেলিভিশনের আল আমিন তালুকদার প্রমূখ। আককাসের আজ্ঞাবহরাই কেবল টিকে থাকতে পারছেন বাকিরা আউট।
এদিকে প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য দৈনিক শতকন্ঠের জাহাঙ্গীর হোসেন মনজু ও দৈনিক অজানা বার্তার সম্পাদক এসএমএ রহমান কাজল উভয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করার আগ্রহ দীর্ঘদিনের। এরা আককাসের আজ্ঞাবহ নয় বলে তারা সদস্যপদেই রয়ে গেছেন। অথচ অযোগ্য লোকজন পদটিকে একাধিকবার আকঁড়ে আছেন আককাসের ঈশারায়।
এছাড়া একজন সাংবাদিককে দিয়ে আরেকজনের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে এক সংগঠনের বিরুদ্ধে আরেক সংগঠনকে লাগিয়ে দিয়ে আককাস মজা লুটে। সম্প্রতি ঝালকাঠি রিপোর্টার্স ইউনিটি নামে একটি ও রাজাপুরে রিপোর্টার্স ইউনিটি নামে পাল্টা সংগঠন বানিয়ে পেশাগত দ্বন্ধ সৃষ্টি করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন।
সম্প্রতি ঝালকাঠিতে ঘটে যাওয়া তিন সাংবাদিককে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কি কারনে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে জানতে চাওয়া হলে বশির জানান, তার নিজ আইডিতে গত ৩০ মার্চ সোমবার সকালে ‘করোনার মধ্যেও সুদ ব্যবসায়ী হাবিলের অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসি’ শিরোনামে একটি পোষ্ট করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিল স্থানীয় সাংবাদিক আককাস সিকদারকে ম্যানেজ করে কাঠপট্টিতে নিয়ে যান। রিংকু নামের একযুবককে দিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে নেয়। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আমার ওপর চড়াও হয়ে বেদরক মারধর করে। খবর পেয়ে মোহনা টিভির প্রতিনিধি রুহুল আমিন রুবেল ও বিএমএসএফ’র সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকেও লাঞ্ছিত করে ভিডিও চিত্র ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।