পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মুরাদনগর জমতে শুরু করেছে কুরবানির পশু কাটার জন্য দরকারি উপকরণ। তাই দা, ছুরি-চাপাতি তৈরিতে ব্যস্ত কামাররা।
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। আর এই ঈদের অন্যতম কাজ হচ্ছে পশু কুরবানি করা। ঈদুল আজহা সামনে রেখে পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মুরাদনগর উপজেলার কামার পট্টিগুলো।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম হচ্ছে ঈদুল আজহা। আর এই ঈদে মুসলিম ধর্মের অনুসারীরা আল্লাহকে রাজি খুশি করতে পশু জবাই করে থাকে। ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মুসলমানদের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে তার ছেলে ইসমাঈল (আ.) কে কুরবানি করে ছিলেন সৃষ্টিকর্তাকে রাজি খুশি করতে।
পরে আল্লাহ তায়ালা তার কুরবানিকে পছন্দ করে ছেলের স্থলে ফেরেশতাকে হুকুম দেয় পশু রেখে দিতে। এখান থেকেই মুসলমানরা প্রতি বছর আল্লাহকে রাজি খুশি করতে ঈদুল আজহার নামাজের পর পশু জবাই করে। আর এই পশু জবাইয়ের জন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামাদি। মাংস কাটা এবং কুরবানির পশু জবাই করার বিভিন্ন ধাপে ছুরি, দা, চাপাতি এসব ব্যবহার করা হয়। ঈদের বাকি আর ১ দিন। তাই পশু কুরবানিকে কেন্দ্র করে মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানের কামারপল্লীগুলো অনেকটাই ব্যস্ত সময় পার করছে। দগদগে আগুনে গরম লোহায় ওস্তাদ-সাগরেদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামারশালাগুলো। আবার এসব ধাতব সরঞ্জামাদি শান দিতে শানের দোকানগুলোতেও ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। ভ্রাম্যমাণ শানদানিদেরও অনেক ভালো সময় কাটে এই মৌসুমে।
গতকাল মুরাদনগর সদর, কোম্পানিগঞ্জ ,রামচন্দ্রপুর ,বাংগরা বাজার সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়। মুরাদনগর অন্যতম বৃহৎ পাইকারি কোম্পানিগঞ্জ ও রামচন্দ্রপুর বাজারের কামারশালাগুলোর ব্যস্ততা এখন সবচেয়ে বেশি। ভুল্লী কর্মকাররাও ব্যস্ত সময় পার করছেন জবাই সামগ্রী প্রস্তুতে। ঈদে হাজার হাজার গরু, খাসি, ভেড়া, মহিষ, উট, দুম্বা ইত্যাদি পশু কুরবানি করা হয়ে থাকে।
এসব পশু জবাই থেকে শুরু করে রান্নার চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্যন্ত দা-বঁটি, ছুরি-ছোরা, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার আবশ্যকীয় হয়ে যায়। ঈদের আগেই পশু জবাই করার ছুরি, চামড়া ছাড়ানোর ছুরি, চাপাতি, প্লাস্টিক ম্যাট, চাটাই, গাছের গুঁড়িসহ সবকিছু প্রস্তুত রাখতে হয়। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দামে ছুরি, বঁটি, চাপাতি বিক্রি হচ্ছে দোকানগুলোতে। বড় ছুরির দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। ছোট ছুরির দাম ২৫০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। বড় ছুরিগুলো ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাচ্ছে দোকানিরা। দেশি চাপাতিগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতি কেজি ওজনের চাপাতির দাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এছাড়া বিদেশি চাপাতির দাম ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। বঁটি প্রতিটির দাম ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। হাড় কাটার ছোট চাইনিজ কুড়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। মুরাদনগর সবচেয়ে বড় কামার পট্টি কোম্পানিগঞ্জ বাজার। সেখানে কর্মচারী-মালিকরা মিলে পুরোদমে তৈরি করছে কুরবানির সরঞ্জামাদি। কথা হয় এক দোকানে বসে থাকা সজিবের সাথে। তিনি জানান, সারাবছর বেচাকেনা টুকটাক থাকে। কোনোরকম দিন যায়। এই সময়ের জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকি।
কুরবানির ঈদের আগে এক সপ্তাহ ভালো বেচাকেনা হয়। ওই সময় দামও ভালো পাওয়া যায়।