মোহাম্মদ আল-আমিন,ডেস্ক রিপোর্ট: ফাঁস হওয়া ফোনালাপে মনে হলো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ঘটেছে হত্যাকাণ্ড!! যা খুবই অস্বাভাবিক এবং ভয়াবহ।
ক্রসফায়ার যখন শুরু হয়েছিল RAB এর মাধ্যমে, দেশব্যাপী বাঘাবাঘা সন্ত্রাসীরা মারা গিয়েছিল, তখন দেশব্যাপী RAB এর গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে গিয়েছিল এবং কথিত ক্রসফায়ার গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল।
তবে তখনই দূরদর্শী বা চিন্তাশীল মানুষেরা ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছিল কিন্তু আমজনতার কাছে ক্রসফায়ার ছিল খুবই জনপ্রিয়! তাই ধীরে ধীরে ক্রসফায়ার এক ধরনের বৈধতা লাভ করে।
এক পর্যায়ে RAB এর পাশাপাশি পুলিশ ক্রসফায়ার শুরু করে, কারণ পুলিশ মনে করছিল যে গুলি করার অনুমিত না থাকায় তাদের মর্যাদা কমে যাচ্ছে।
তখনো সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকরা কেউ কেউ বিভিন্ন পত্রিকায় লিখেছেন যে, ক্রসফায়ার এক সময় ভয়াবহ রূপ নেবে। এখন আসলে তা-ই দেখা যাচ্ছে!!
টেকনাফে সৎ ও দরিদ্র কাউন্সিলর একরামের মেয়ের ‘চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার ফোনালাপ’ আব্বু তুমি কাঁদতেছ যে’ এখনো কানে বাজে যাদের হৃদয় আছে তাদের।
কিন্তু এরপরেও আমার ধারণা ছিল, ক্রসফায়ারের সিদ্ধান্ত হয় অনেক উপরে। অন্ততপক্ষে পুলিশের আইজি লেভেলে। আকরামের ঘটনায় হয়তো কোথাও ভুল হয়েছিল।
ডিসি এসপি পর্যায়ের কারো সিদ্ধান্তে কারো মৃত্যু হতে পারে, এমনটি অন্তত আমি ভাবিনি আগে। শুধুমাত্র ওসিই মেরে ফেলতে পারে এটা কল্পনাও করিনি।
এবারে মেজর সিনহার ঘটনার পর পুলিশের ফোনালাপে মনে হলো, ওসি সাহেবের সিদ্ধান্তেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
তবে ওসি সাহেব এসপি সাহেবের পেয়ারা আদমি, তাই দারোগাকে বুদ্ধি শিখিয়ে দিচ্ছেন যে, সিনহা গুলি করেছিল পুলিশকে সেটা লাগেনি পুলিশ লিয়াকতের গায়ে, লিয়াকতও গুলি করেছে, সেটা সই হয়েছে!
এতে করে প্রমাণিত হলো পুলিশ কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই মানুষ হত্যা করে তা জায়েজ করে নিতে পারে! এবং আরো একটা জিনিস প্রমাণিত হলো যে, আর্মির চাইতে পুলিশের হাত সই বেশী!!
তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কক্সবাজারের ঘটনা দেশের ভবিষ্যতের জন্য আরো ভয়াবহ হতে পারে। কারণ আমাদের দেশের মানুষ খারাপটাই অনুকরণ করে বেশী।
কক্সবাজারের ওসিকে আরো অনেক ওসি অনুকরণ করতে পারে। সেই ওসি আগে অনেক খুন করেছেন, কিছু হয়নি। এবারেও যদি খুন হওয়া লোকটা আর্মি না হতো, তাহলে কিছুই হতো না!
যেমন- নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় যদি উকিলও একটা না মরতো, তাহলে কিছুই হতো না!!
অতএব অন্য কোন দারগা-ওসি যদি মনে করে, শুধু আর্মি বাদ দিয়ে, যার তার সাথে মাদক উদ্ধারের নামে খুন করবে, সেটা অসম্ভব হবে না!! শুধুমাত্র পুলিশ সুপার লাইনে থাকলেই সব জায়েজ করে নেয়া যাবে!!
করোনাকালে পুলিশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছিল বহু পুলিশ মিলে। কিন্তু বিতর্কিত করে দিল মাত্র কয়েকটা লোভি ও হিংস্র পুলিশ।
পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হলে ক্ষতি সকলেরই। পুলিশের প্রতি জনগণের বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, প্রত্যাশা যে দেশে যত বেশি, সেই দেশে সুশাসনের অনুশীলন ততো বেশি।
পুলিশের উপর যদি জনগণের কোন আশা না থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, আমরা ধংসের দ্বারপ্রান্তে আছি। আমরা পুলিশের উপর ভরসা রাখতে চাই, আশা ছেড়ে দিতে চাই না।
তাই আমাদের সকলের নাগরিক দায়িত্ব হচ্ছে, সৎ পুলিশের, উপকারী পুলিশের, মানবিক পুলিশের প্রশংসনীয় কাজগুলোর প্রশংসা করা, যাতে অন্য পুলিশেরাও ভালো কাজে আগ্রহী হয়।
পাশাপাশি সরকারের উচিত, ক্রসফায়ার সংস্কৃতির চির অবসানের উদ্যোগ নেয়া।
এখনো পরিবেশ যথেষ্ট ভালো আছে। পুলিশ বলে যে কেউ একজন তাকে গুলি করেছে, সেও ওই লোককে গুলি করেছে, এতে ওই লোক মারা গেছে।
গল্পটা সত্য নয়, জনগণ জানে, জেনেও তারা এক ধরনের সান্ত্বনা পায় যে, তাদেরও একটা মর্যাদা আছে। জনগণকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য পুলিশকে মিথ্যা বলতে হয়, এতে পাবলিকের গুরুত্ব আছে প্রমাণিত হয়!!
তবে ক্রসফায়ার সংস্কৃতি বন্ধ না হলে, ভবিষ্যতে পুলিশ হয়তো বলবে, আমার কথা শুনেনি, তাই গুলি করেছি! তখন আমরা কি করব?
লেখক: যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ