উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ
নড়াইলে নানা আয়োযনে বিশ্বকর্মা পূজা
কারিগরী শিল্প যে দেবতার আরাধনা ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তিনি হলেন বিশ্বকর্মা। হিন্দুদের কাছে বিশ্বকর্মার আরাধনা একটি বড় ধর্মীয় উৎসব। ভাদ্রমাসের সংক্রান্তিতে দেবতাদের শিল্পের কারিগর বিশ্বকর্মার পুজো করা হয়। পুরাণে বর্ণিত আছে এই দেবতার শিল্প কার্যের কাহিনী।
বিশ্বকর্মার উত্পত্তি
পুরাণ মতে তিনি হলেন কারিগরি দেবতা। অষ্টম বসু প্রভাস হলেন তাঁর পিতা এবং মাতা হলেন বৃহস্পতির ভগিনী, বরবর্ণিনী। আবার ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে বর্ণিত তাঁর জন্ম ব্রহ্মার নাভি থেকে। পুরাণের কাহিনীতে উল্লেখ করা আছে তাঁর সৃষ্টি কার্যের কথা। ভগবত পুরাণের কাহিনীতে লেখা আছে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা পুরীর নির্মাতা হলেন বিশ্বকর্মা।
বিশ্বকর্মা কী কী সৃষ্টি করেছিলেন?
রাবণের স্বর্ণ লঙ্কা থেকে কুবেরের অলকা পুরী ও দিব্য বিমান, অগস্ত্য মুনির ভবন তৈরি করেছেন তিনি। স্বর্গের দেবরাজ ইন্দ্রের ইন্দ্রপুরীর নির্মাতাও হলেন বিশ্বকর্মা। মৎস্য পুরাণ অনুসারে, জগতের সবকিছুর প্রতিষ্ঠাতা হলেন বিশ্বকর্মা।
দেবতাদের অস্ত্রাগারের সৃষ্টি কর্তা হলেন তিনি। সকল দেবতাদের দৈবরথ ও দৈববাণ তৈরি করেছেন তিনি। পরশুরামের ধনুক, ভগবান বিষ্ণুর চক্র ও শিবের ত্রিশূল হল বিশ্বকর্মার সৃষ্টি। শ্রীশ্রীচণ্ডী কথনে মহিষাসুর বধের সময় দেবী দুর্গাকে বর্শা ও কবচ দান করেছিলেন বিশ্বকর্মা।
রাবণের পুষ্পক রথ তৈরি করেছিলেন বিশ্বকর্মা-পুত্র নীলবীর। ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরানে লেখা আছে বিশ্বকর্মা ও তাঁর স্ত্রী ঘৃতাচী ব্রহ্মার শাপে ধরাধামে জন্মান। নয়টি সন্তানের জন্ম দেয় ঘৃতাচী, তাদের প্রত্যেককেই নানান শিল্পে পারদর্শী করে তোলেন বিশ্বকর্মা।।
মালাকারকে পুস্প শিল্প, কর্মকারকে লৌহ শিল্প, কাংস্যকারকে কাংস শিল্প, শঙ্খ কারকে শঙ্খ শিল্প, সূত্রধরকে কাষ্ঠ শিল্প, কুবিন্দক কে বয়ন শিল্প, কুম্ভকারকে মৃৎ শিল্প, স্বর্ণকারকে অলঙ্কার শিল্প, চিত্রকরকে অঙ্কন শিল্প সেখান তিনি। বায়ু পুরাণ ও পদ্ম পুরাণে বর্ণিত ভক্ত প্রহ্লাদের কন্যা বিরোচনার গর্ভে জন্ম হয় বিশ্বকর্মা-পুত্র ও অসুরদের কারিগর ময় দানবের।
বিশ্বকর্মা পূজা পদ্ধতি
পুরাণ ও হিন্দুশাস্ত্র মতে বিশ্বকর্মা দেবের পুজো করলে শিল্পবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ভক্তেরা। তিনি হলেন চতুর্ভুজ ও গজারূঢ়। তাঁর বাহন হল হস্তী। এবছরের মহালয়ার দিনেই আরাধনা করা হবে শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মার।
বিশ্বকর্মার ধ্যান মন্ত্র
ওঁ বিশ্বকর্মন্ মহাভাগ সুচিত্রকর্মকারক্ ।
বিশ্বকৃৎ বিশ্বধৃক্ ত্বঞ্চ রসনামানদণ্ডধৃক্ ।।
এর অর্থ হল, হে দংশপাল ( বর্মের দ্বারা পালনকারী ) , হে মহাবীর , হে বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও বিশ্ব বিধাতা, হে সুন্দর চিত্র রূপ কর্মকারক , আপনি মাল্য চন্দন ধারন করে থাকেন ।
বিশ্বকর্মার প্রনাম মন্ত্র
দেবশিল্পি মহাভাগ দেবানাং কার্য্যসাধক ।
বিশ্বকর্মন্নমস্তুভ্যং সর্বাভীষ্টপ্রদয়ক
অর্থ- দেবশিল্পী , মহাভাগ ( দয়াদি অষ্ট গুন যুক্ত দেবতা দের কারু কার্য্যসাধক সর্বাভীষ্ট প্রদানকারী হে বিশ্বকর্মা আপনাকে নমস্কার।