মিলা আজ এসেছে একার বাসায়। একার এত্তো আনন্দ লাগছে, মনে হচ্ছে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে সে!!! মিলা কে জড়িয়ে ধরে একা বললো: এতো দিন পর এলি? ভাইয়া কোথায়? মিলা একার গালে চুমু দিয়ে বললো, পাগলি আমরা গল্প করবো, সেখানে কারো প্রবেশাধিকার নেই। একা রাগ করে বললো, চুপ করে থাক্ তুই! সেইদিন ও তোর বর কে দেখিনি। মিলা: আরে বাবা, কোথাও হারিয়ে জাচ্ছে না, পালিয়ে যাচ্ছে না দোস্ত, রাগ করিস না। আসলে আজ একটা বিপদে পড়ে আসলাম। একা ঃ ওমা, কি বিপদ দোস্ত? আন্টি, আংকেল সবাই ভালো আছেন তো….! আর মারুফ ভাই??! মিলা মাথা নীচু করে বলল: ভাইয়া আজ ডুবাই চলে যাচ্ছে। একা চোখ কপালে তুলে বললো: ওমা,কেনো? ডুবাই গিয়ে সে কি করবে? আর সেদিন দেখলাম অনেক অসুস্থ! তোকে বলে আসলাম ট্রিটমেন্ট করাতে আর তা না করে অসুস্থ মানুষ টা কে তোরা বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছিস কেনো? বিষন্ন মুখ নিয়ে শান্ত গলায় মিলা বলল: একা, ওর অসুখ এর কোনও ট্রিটমেন্ট নেই রে.. আর আমরা কেউ পাঠাচ্ছি না,ভাইয়া নিজেই যাচ্ছে। একাঃ এসব তুই কি বলছিস্ দোস্ত! কি অসুখ মারুফ ভাই এর.. বল্ না আমাকে খুলে প্লিজ! মিলাঃ অনেক কাহিনি একা। আরেক দিন বলবো তোকে সবকিছুই! এখন চল্ তোর ভাবিদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিবি। চল্ না দোস্ত! একা মাথা নীচু করে বসে আছে,তার খুবই কস্ট হচ্ছে মারুফ ভাই এর জন্য.. মনে হচ্ছে মিলি কিছু লুকাচ্ছে! মিলি: ওমা,কি হলো তোর?! তোর বড় ভাবি কে দেখেছি কিন্তু টুইন দুইটা কে এখন ও দেখিনি। আর তোর সাথে রাগ করে তো আকাশ ভাইয়ার বিয়েতে আসিনি। আর তোর ছোট ভাবি মৌ… তোর বেস্ট ফ্রেন্ড! আমার জায়গা দখল করে দিয়েছে,, কত্তো বড় শত্রু আমার, আমি পরিচিত হবো মৌ এর সাথে আর তোর মতো আমিও ওর বন্ধু হয়ে যাব.. কি মজা তাইনা একা.. শত্রু থেকে বন্ধু! এই একা বোবা হয়ে গেলি না কি? চুপ করে আছিস কেনো? কাদো কাদো গলায় একা প্রশ্ন করলো: মিলা মারুফ ভাই এর কি হয়েছে? তার ফ্লাইট কয়টায়..? দু’চোখে তার পানি ঝলঝল করছে আর তার সাথে কাঠিন্য যেনো কঠিন প্রশ্নের তীর ছুড়ে দিয়েছে মিলার কাছে। এই প্রশ্ন কে অগ্রায্য করার ক্ষমতা মিলার নেই।
মিলা বললঃ রাত দশটায়। এখনো চার ঘন্টা সময় আছে। একাঃ তুই থাকিস দোস্ত, আমি যাচ্ছি। মিলাঃ ওমা,তুই কোথায় যাচ্ছিস? একা: এয়ারপোর্ট.. মিলাঃ আরে তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস না কি? একাঃ আমি পাগল হই নাই, পাগল হয়েছিস তোরা, আর তাই তো সম্পূর্ন অসুস্থ একজন মানুষ কে একা ছেড়ে দিচ্ছিস…! মিলা দীর্ঘস্ষাশ ফেলে বলল, ভাইয়া তো সারাজীবন একা ই…! একাঃ ওহ্ তাই নাকি, আমি জানতাম তার একমাত্র ছোট একটা বোন আছে। বাবা মা আছেন। আজ জানলাম মানুষ টার কেউ নেই। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে একা কথা গুলো বলল! মিলাঃ আমরা অনেক চেস্টা করেছি একা। লাভ হয়নি, ভাইয়া একটি মেয়েকে অনেক অনেক ভালোবাসতো সেই কলেজ জীবন থেকে ই… কিন্তু মেয়েটার আরেক জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে। ভাইয়া,কিছুতেই তাকে ভুলতে পারে না। অন্য কাউকে মেনে নিতে পারবে না। ওই মেয়ের জন্য ভাই টা আমার আজ তিলে তিলে শেষ হয়ে গেছে… বাঁচবে না আমার ভাই টা.. মিলি কান্নায় ভেঙে পরল।। একার বিস্সয়ের সীমা রইলো না। একা বলল, ছোট বেলা থেকে আমি তোদের পুরা ফ্যামিলির সাথে সম্পর্ক… আমি কিছুই জানলাম না মিলা! না কি যখন নয়ন কে বিয়ে করার জন্য তুই আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলি, এটা তখন কার ঘটনা?? মিলা চোখ মুছে বলল: না একা, অনেক আগে থেকেই ভাইয়া ওই মেয়েকে ভালোবাসতো! একাঃ ওহ্ আচ্ছা! ওই মেয়েটা এমন খারাপ কেনো? একটা মানুষ এতো ভালোবাসতো তাকে আর সে তার পবিত্র প্রেম কে অপমান করে ধোঁকা দিয়ে আরেকজন কে বিয়ে করে নিল… আজব মেয়ে! মিলাঃ নারে দোস্ত,তুই যা মনে করছিস এমন কিছু ই না। মেয়েটি জানতো ই না। এক তরফা ভাবে ভাইয়া তাঁকে ভালো বেসে ছিল আর প্রতি দিন আর রাত নতুন করে সপ্নগুলোকে সাজাতো ভাইয়া। আমি সবকিছুই জানতাম আর আমাকে ভাইয়া শেয়ার করতো। জানিস্ একা, যেদিন ভাইয়া ওই মেয়েকে প্রপোজ করবে, কি আনন্দ তার মনে! একশো টা তাজা লাল টুকটুকে গোলাপ অর্ডার করে আনিয়েছিল ফুলের দোকান থেকে, আর আয়নার সামনে কত্তো বার যে রিহার্সেল দিয়েছিল, কিভাবে প্রপোজ করবে! আসলে জানিস একা, বেশি কোনো কিছু ই মনে হয় ভালো না। ওইদিন ভাইয়ার প্রপোজ করা হয়নি। অবাক হয়ে একা বলল ঃ কেনো? যখন বাসা থেকে বের হয়েছে ঠিক তখন ই ভাইয়া জানতে পারলো, তার সপ্নের রাজকন্যা এক রাখাল ছেলেকে মন দিয়ে বসে আছে। শেষ এর কথা গুলো একার কেমন যেনো খটকা লাগলো। সে প্রশ্ন করলো, রাখাল ছেলেকে মন দিয়ে বসে আছে.. এর মানে কি মিলা??? মিলা হেসে বললো: আরে তেমন কিছু ই নারে দোস্ত! এমনি বলেছি,,, জানিস একা ভাইয়ার প্রতিটি বইয়ের পাতায় ওই গোলাপ এর পাপরি আজো আছে ঠিক আগের ই মতোন। সুবাস হারিয়েছে কিন্তু ভাইয়া ওই বইগুলো কে বুকে জড়িয়ে রেখেছে! মিলা আমি এখনই মারুফ ভাই এর কাছে যাচ্ছি, প্লিজ আমাকে আটকাবি না। আমার খুবই কস্ট লাগছে! মিলা: কস্ট কি আমাদের লাগে না? কিন্তু কি করবি গিয়ে?! ফিরিয়ে আনতে পারবি? একা: আমি কিভাবে পারবো? আমি তো তার ওই ভালোবাসার মেয়ে নই! মিলাঃ যদি তুই সেই মানুষ হতি, তবে কি করতি দোস্ত??! অবাক হয়ে একা প্রশ্ন করলো: এগুলো কি ধরনের কথা মিলা? মিলা: আমি আর তুই ছোটবেলার বান্ধবী! কোনোদিন আমাদের দু’ জনের সার্থের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাই আমি তোকে কোনোদিন বলিনি যদি আমায় তুই সার্থপর মনে করিস। তাই কখনো ই বলিনি। আর যখন বলতে চেয়েছিলাম,,তখন তোর জীবন এ নয়ন নামের নরপশু টা চলে এসেছিল। ওই সার্থপর অশিক্ষিত টার ফাঁদে তুই এমন ভাবে পা দিয়েছিলি দুনিয়ার কেউ তোকে ফেরাতে পারেনি আর পারতো না! ফিসফিস করে একা বললো: তার মানে আমি সেই মেয়ে যার জন্য আজ মারুফ ভাই এর এই অবস্থা….!!! মিলা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল,, হ্যা দোস্ত! কিন্তু বিস্ষাশ কর দোস্ত, আমি আমার ভাই এর জন্য তোকে ফিরাই নি… আমি বুঝতে পেরেছিলাম নয়ন একটা লোভী ছেলে, সার্থপর ছেলে! ও তোকে ভালোবাসেনি, তোর টাকা কে ভালোবেসেছিল। এই পরিণতি হবে আমি জানতাম! ছোট্ট বেলার খেলার সাথী কে এমন একটা খারাপ লোকের কাছে আমি ছেড়ে দিতে চাইনি একা। কিন্তু আমার ভাই এর জন্য না। তুই যদি অন্য ভালো কোনো ছেলে কে বিয়ে করে সুখী হইতি, আজ আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হতোনা দোস্ত! বিস্ষাশ কর্, ওইসময় একদিকে তোকে হারিয়ে আর ভাইয়ার এই কস্ট দেখে কি কস্টে দিন কেটেছে আমার… এর ই মাঝে আকাশ ও ধোঁকা দিয়েছিল.. বড় কস্ট! বড় কস্ট দোস্ত! আহারে জীবন! আহা জীবন! জলে ভাসা পদ্ন পাতার ই মতোন…!!! একা বলল, তুই আমার বাসায় থাক দোস্ত! কান্না কর, গান কর যা মন চায় তাই কর.. আমি গেলাম।চোখের পানি মুছতে মুছতে মিলা বলল: কোথায় যাচ্ছিস্ তুই…? একা: এয়ারপোর্টে, মারুফ ভাই কে নিয়ে আসি।