লালমনিরহাট,প্রতিনিধিঃ
বিগত কয়েক বছরের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল ও ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী বিবেচনায় নিয়ে গত বছর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় এমপিওভুক্ত হয়েছে ১৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
দীর্ঘদিন অবহেলিত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইসলামী আদর্শ বিদ্যানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়টিতে একসাথে জুনিয়র ও হাই শাখা এমপিওভুক্ত হওয়ার এমন খুশির সংবাদে শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি,উপমন্ত্রী নওফেলসহ স্থানীয় এমপি মোতাহার হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
করোনা ভাইরাসের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও প্রধান শিক্ষক আনিসুল ইসলাম সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার।একটি উন্নতজাতী গঠনে মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই।আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার জন্য বিজ্ঞানাগার অতি প্রয়োজনীয় জানিয়ে তিনি বলেন কমনরুম,হলরুম,ক্যান্টিন সুবিধা থাকা আবশ্যক। প্রতিবছর শিক্ষার্থী ভর্তির চাপ সামলাতে আবাসন সঙ্কট কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারি একটি ভবন দাবী করেন প্রধান শিক্ষক আনিসুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন,বর্তমানে টিনশেড আধা পাকা ভবনে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীর তুলনায় আবাসন সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে।১৯৯৮ সালে আল-আমিন ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি পরিচালনায় হাত বাড়িয়ে দেন আনোয়ারুল ইসলাম রাজুসহ আরও কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি।বর্তমানে বিদ্যালয় এলাকায় আল-আমিন ট্রাস্টের নামে জমি রয়েছে ৭৩ শতাংশ।ট্রাস্ট কর্তৃক স্কুলের নামে দেয়া হয়েছে ৫৭ শতাংশ।পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল, পৌর মেয়র শমসের আলী’র আর্থিক অনুদানে আধাপাকা ভবনে পরিচালিত এ বিদ্যালয়ের কিন্ডারগার্টেন শাখায় প্রায় ৪’ শ এবং হাই শাখায় এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। বিদ্যালয়ের চারদিকে সীমানা প্রাচীরসহ সুন্দর একটি ফটকসহ হাজার প্রজাতির ফুল,ফল,ঔষধি গাছের বাগানের সৌন্দর্য ও মনোরম পরিবেশ মুগ্ধ করে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের।
প্রধান শিক্ষক জানান,গতবছর জুলাই থেকে এমপিও কার্যকর তালিকায় ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষক,সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ নিয়োগকৃত ১৯ জন শিক্ষক কর্মচারীর মধ্যে ৯ জন মানথ লি পেমেন্ট অর্ডার(এমপিও) পেয়েছেন।
পর্যায়ক্রমে বাকীসব শিক্ষক কর্মচারী এমপিও তালিকাভুক্ত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি কিংবা এমপিওভুক্ত করার নীতিমালা অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল,শিক্ষার্থী সংখ্যাসহ কমপক্ষে তিনটি ক্যাটাগরির শর্ত পূরণ করে ২২ বছর পর এমপিওভুক্ত হলেও বর্তমানে আবাসন সঙ্কটের কবলে পরে আছে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামী আদর্শ বিদ্যানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়(আইএবিএন)।
এ বিদ্যালয়ের বিগত ৩/৪ বছরের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,প্রতি বছর পিইসি,জেএসসি,এসএসসিতে সর্বাধিক জিপিএ ৫ অর্জনসহ শিক্ষার্থীরা বৃত্তি লাভ করে জেলা উপজেলায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।
বিদ্যালয়ের তথ্য রেজিস্টার মতে দেখা যায়,
অষ্টম শ্রেণির
জেএসসিতে ২০১৭ সালে অংশ গ্রহন করে ১৩২ জন শিক্ষার্থী।এদের মধ্যে পাস করে ১২৮ জন।পাসের হার ৯৬’৯৭%। জিপিএ ৫ পাওয়া ২২ জনের মধ্যে ১০ জন ট্যালেন্টপুল,৭ জন সাধারণ গ্রেড বৃত্তি লাভ করে।
একই বছর এসএসিতে ৯৮ জন অংশ নিয়ে পাস করে ৮৭ জন।জিপিএ ৫ পায় ১০ জন শিক্ষার্থী।
২০১৮ সালের জেএসসি পরীক্ষা দেয় ১৯৮ জন।পাস করে ১৪৭ জন।জিপিএ ৫ পায় ৯ জন।ট্যালেন্টপুল ৭ জন এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি লাভ করে ১১ জন।
একই বছর এসএসসিতে অংশ নেন ১৪৪ শিক্ষার্থী।পাস করেন ১২১ জন।জিপিএ ৫ পায় ১২ জন শিক্ষার্থী।
২০১৯ সালের জেএসসিতে অংশ নেয় ২৬৭ জন।পাসকৃত ২৪৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পায়১১ জন।এদের মধ্যে ট্যালেন্টপুল ৯ জন এবং সাধারণ গ্রেড বৃত্তি লাভ করেন ১৭ শিক্ষার্থী।
একই বছর এসএসসিতে অংশ নেয় ১৪৪ জন।পাস করে ১২৬ জন।এদের মধ্যে জিপিএ ৫ বা এ প্লাস পান ৫ জন শিক্ষার্থী।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এসএসসি’র ফলাফলে দেখা যায়,
১৫৮ জন শিক্ষার্থীর ১৩৬ জন পাস করে।
১১ জন শিক্ষার্থী পায় জিপিএ ৫।
সাহিত্য-সংস্কৃতি খেলাধুলো এমন কী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সফল কৃতিত্ব দেখিয়ে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেলা জুড়ে সুনাম অর্জন করেছে পাটগ্রামের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
১৯৯৪ সালে কোটতলীতে প্রফেসর মকবুল হোসেনের বাসায় প্রথমে মক্তব হিসেবে চালু হয় ইসলামী আদর্শ বিদ্যানিকেতন।এরপর উপজেলা মোড়ে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি কিনু সাহেব ও মাহাতাব হোসেন পরিবারের জমিতে একটি টিনের ঘরে কিন্ডারগার্টেন হিসেবে আত্মপ্রকাশ।পরবর্তীতে সেখান থেকে কার্যক্রম সরিয়ে নেয়া হয় নওদা’নামের আরেকজনের ভাড়া ঘরে।
সমাজসেবক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি এরশাদ হোসেন সাজু বিদ্যালয়টি পরিচালনার জন্য সে সময় অনেক টাকা পয়সা দান করেছেন।
এছাড়া আলহাজ্ব সোলেমান আলী নামে একজন হিতৈষী ব্যক্তি ফায়ারসার্ভিস সংলগ্ন এলাকায় ২০ শতাংশ জমি দান করেছেন।
তৎকালিন সময় পাটগ্রামে ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন শরিফুল আলম।তাঁরই সহযোগিতায় কোটতলীতে স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে পায় বিদ্যালয়টি।একসাথে ৫৭ শতাংশ জমি কিনে ১৯৯৮ সালে চালু হয় জুনিয়র শাখা।এক সময়ের মেধাবী ছাত্র আনিসুল ইসলাম ১৯৯৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। তাঁর প্রচেস্টায় পরের বছরেই উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন পায়।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার কোটতলী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আদর্শ বিদ্যানিকেতন এর শিক্ষার্থীরা জেলা ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।যে কোন সাহিত্য- সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলোতে অবদান অনেক।
এবছর এসএসসি পাসকৃত একজন শিক্ষার্থী নাফিস আহম্মেদ শাফিন ক্ষুদে বিজ্ঞানী হিসেবে সারাদেশে বেশ পরিচিতি অর্জন করেছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজল মাহমুদ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন,ভবিষ্যতে কলেজিয়েট করার পরিকল্পনা রয়েছে।সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে সারাদেশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে চায় এ প্রতিষ্ঠানটি।