বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যাতীত প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েদের মধ্যকার স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক নৈতিকতা ও সামাজিকতার মানদন্ডে সর্বদা অগ্রহনযোগ্য এবং প্রচলিত আইনানুযায়ী অবৈধ।এজাতীয় অবৈধ সম্পর্ক পরিবার,সমাজ এবং দেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।তাই এজাতীয় কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকা ছেলে এবং মেয়ে উভয়কে সমান অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে উভয়ের জন্য শাস্তির বিধান রেখে একটি অপরাধ সংজ্ঞায়িত এবং সংযুক্ত করা উচিত।এবং বর্তমানে ধর্ষন সংক্রান্ত যে বিধান আছে তার অপব্যবহার করে প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েদের স্বেচ্ছায়কৃত শারীরিক সম্পর্ককে যেন পরবর্তিতে ধর্ষন হিসেবে আখ্যায়িত করে দুজন সম অপরাধীর মধ্যে একজন ভিকটিম সেজে অন্যজনকে ধর্ষনের মামলার আসামী না করতে পারে সে মর্মে ধর্ষন সংক্রান্ত বিধানের সুস্পষ্ট সংশোধনী আনায়ন সমাজ ও দেশের স্বার্থে জরুরী।বিষয়টি ব্যাখা করার জন্য ধর্ষন সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিধান আলোচনা করা জরুরী।ধর্ষনের সংজ্ঞা কী বা ধর্ষন বলতে কি বুঝায় তা জানার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ২(ঙ) ও ৯ ধারা এবং দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ৩৭৫ ধারায় উল্লেখিত ধর্ষন সক্রান্ত বিধান একত্রে বিবেচনায় নিতে হবে।উল্লেখিত আলোচ্য বিষয়টি সহজভাবে উপস্থাপনের জন্য বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯(১) ধারার ব্যাখায় বর্নিত বিধানটি উল্লেখ করা হলো যথা- যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতিত ষোল বছরের অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন করে বা প্রতারনা মূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে বা অথবা ষোল বছরের কম বয়সী কোন মেয়ের সহিত সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষন করেছেন মর্মে গন্য হইবে। উক্ত ব্যাখায় উল্লেখিত প্রতারনামূলকভাবে সম্মতি আদায় করে কোন পুরুষ কর্তৃক প্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারীর সহিত কৃত শারীরিক সম্পর্ক ধর্ষনের আওতাভূক্ত বিধায় “প্রতারনামূলকভাবে সম্মতি আদায় ” টার্মের অপব্যাখা বা অপব্যবহার করে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে তারমধ্যে অন্যতম হলো একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর স্বেচ্ছায়কৃত শারীরিক সম্পর্ককে এভাবে ব্যাখা করে যে শারীরিক সম্পর্ক করার সময় বিবাহের প্রলোভন দিয়েছিল তাই সম্মতি দিয়েছিল এবং পরে বিবাহ করবে না বলেছে বিধায় শারীরিক সম্পর্ক করার সময় যে সম্মতি নিয়েছিল তা প্রতারনামূলকভাবে নিয়েছিল এবং এজন্য সে ধর্ষনের অপরাধ করেছে।এখানে বৈবাহিক সম্পর্ক না থাকা সত্বেও একজন প্রাপ্ত বয়স্ক অর্থাৎ যৌক্তিক বুদ্ধি জ্ঞান সম্পন্ন নারী শুধু বিবাহের প্রলোভন বা আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক করতে যাওয়াটা কতটা সমাজসিদ্ধ বা আইনস্বীকৃত তা বিবেচনায় না নিয়ে আইনের একটি টার্মকে টেকনিক্যাললি অপব্যবহার করে উভয়ের কৃত অসামাজিক ও অবৈধ কাজের দায়ভার শুধুমাত্র পুরুষ অপরাধীর উপর বর্তিয়ে নারী অপরাধী হয়ে যাচ্ছে দায়মুক্ত।কিন্তু ধর্ষন সংক্রান্ত আইনের এই বিষয়টি সংশোধন করে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ সংজ্ঞায়িত করে তার আওতায় উভয় অপরাধীর সমান শাস্তি নিশ্চিত না করা হলে বৈবাহিক সম্পর্ক না থাকা সত্বেও শুধু মাত্র বিবাহের প্রলোভন বা আশ্বাস থাকার বিষয়টি ভিত্তি ধরে কোন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর স্বেচ্ছাকৃত শারীরিক সম্পর্ককে পরোক্ষভাবে সামাজিক বা আইনগত স্বীকৃতি দেয়া হয় যা সভ্য সমাজ ব্যবস্থা ও দেশের জন্য হুমকি সরূপ এবং একই কৃতকর্মের জন্য শুধুমাত্র পুরুষকে শাস্তি দেয়া ন্যায় বিচারকে করে প্রশ্নবিদ্ধ।তাই বিবাহের প্রলোভনে বা চাকুবীর প্রলোভনে বা অন্যকোন প্রলোভনে প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ও পুরুষ কর্তৃক সম্মতিতে কৃত শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষনের আওতাভূক্ত না করে অন্যকোন অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে উভয়ের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
লেখকঃএডভোকেট মোঃকাওসার হোসাইন,
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবি,আইনগ্রন্থপ্রনেতা ও কলামিস্ট