চট্টগ্রামে এক পঙ্গু ফুচকা বিক্রেতার স্ত্রী ও তার পরিবারের উপর অমানবিক ও বর্বরোচিত নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। আজ ১৪ নভেম্বর (শনিবার) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পঙ্গু ফুচকা বিক্রেতা আলাউদ্দিনের স্ত্রী বিবি মরিয়ম কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার স্বামী ও পরিবারের উপর বয়ে যাওয়া নারকীয় নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান। এসময় তাদের কন্যা উত্তর কাট্টলী মোস্তফা হাকিম ডিগ্রী কলেজের ছাত্রী উম্মে আইমন কান্নাজড়িত কণ্ঠে আত্মহুতি দেয়ারও হুমকি দেয়।
চট্টগ্রামের কাট্টলী এলাকার কথিত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়দানকারী চাচা মোহাম্মদ জাকির হোসেনের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে ভাতিজা পঙ্গু ফুচকা বিক্রেতা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা। শুধু তাই নয়, প্রশাসনে বিদ্যমান এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় ভাতিজা আলাউদ্দিনকে আকবরশাহ থানার শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি র্যাব-৭ এর মাধ্যমে ক্রসফায়ারের পরিকল্পনা করে চাচা জাকির। ভাগ্যক্রমে র্যাবের ক্রসফায়ার থেকে রক্ষা পেলেও বর্তমানে ভাতিজা আলাউদ্দিন হত্যা, ডাকাতি, ইয়াবা সহ ১৯ মামলার হুলিয়া নিয়ে (মামলা নং- পাহাড়তলী থানা মামলা নং- ৭ (৫) ৯৯, ৮ (১১)২০০০, ৯ (১১) ২০০০, ৫ (৮) ২০০৩, ৬ (৫) ২০০৭, ৩০ (২) ২০০৯, ৯ (২) ২০১০, আনোয়ারা থানার মামলা নং- ৭ (৯) ২০০২, ডবলমুরিং থানার মামলা নং- ৭ (১) ২০০৫, ২৭ (৭) ২০২০, বান্দরবান থানায় মামলা নং- এস.টি ২১৩ (১১), কতোয়ালি থানায় মামলা নং- ১১ (১০) ২০১৬, এস.টি ১০২৬/১৫, পাহাড়তলি থানায় নন জি আর মামলা নং- ২২৮৭/৯৯, নন জি আর ৩৩৬৩/২০০২, ১২ (১০) ২০১৬, ইপিজেড থানায় মামলা নং- ১৬ (৬) ১৯, সদরঘাট থানায় মামলা নং- ৪ (৮) ২০১৯, পটিয়া থানায় মামলা নং- ১ (৯) ২০১৭, সি.আর মামলা নং- ২১৯/১৭) দুর্বিষহ পলাতক জীবনযাপন করছে। চাচা জাকিরের সার্বিক সহায়তায় গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ডিবির উত্তর এক নম্বর টিম মারফৎ ভাতিজা আলাউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে সীতাকু–৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দিদারুল আলমের সহায়তায় উদ্ধার হন। মামা আলাউদ্দিনের পক্ষে নেওয়ায় ভাগিনা এমরান হোসেন, মোঃ ফোরকানও আলাউদ্দিনের চাচা জাকিরের মিথ্যা মাদক মামলার শিকার হয়েছে।
বিবি মরিয়ম বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা চাচা পরিচয়দানকারী জাকির, তিন পুত্র এ.এইচ.এম জাহিদ হোসেন, মোঃ মোক্তার হোসেন, পিএসআই শাখাওয়াত হোসেন, পুত্র বধু শিমলা চৌধুরী এবং প্রশাসনে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় প্রভাবখাটিয়ে অন্যায়ভাবে আমাদের ভূমি জবরদখল করলেও পরবর্তীতে সম্পূর্ণ আক্রোশ বশীভূত হয়ে বান্দরবান ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও লোমহর্ষক ঘটনা ছিল ২৩ নভেম্বর ২০১৮ সালে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে র্যাব-৭ এর মাধ্যমে ক্রসফায়ারের শিকার হতে গিয়ে ভাগ্যক্রমে রক্ষা পান আমার স্বামী আলাউদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে বিবি মরিয়ম আরো অভিযোগ করেন, সিএমপির এস.আই কে এম তারিকুজ্জামান (বিপি-৮৯১৪১৭৩২৮৮), এস.আই সুমিত দাশ (বিপি- ৮৭১৪১৭০৪২২), এস.আই মোঃ মাহবুব আলম, এস.আই মোঃ হায়দার আলী (বিপি- ৭৪৯২০২৪৪৬৬), এস.আই পরিতোষ দাশ (বিপি- ৮০০২০৪৪০৪৫) এস.আই মুকুল মিয়া (বিপি- ৭৬৯৬১২২৮৪৯), এ.এস.আই মোঃ ওয়ালিউল্লাহ (বিপি- ৮৪০৩০৫২২৩৭) সহ আরো অজ্ঞাত নামা প্রশাসনিক ব্যক্তি সহ চাচা জাকির ও তার তিন পুত্র এবং পুত্র বধূর অবৈধ কালো টাকার সহায়তায় এই ধরনের ঘৃণ্য কর্মকা- চালিয়ে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে বিবি মরিয়ম এই দুর্বিষহ জীবন থেকে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের রক্ষার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি ও দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অন্যথায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে স্বপরিবারে আত্মাহুতি দেওয়া ব্যতীত আর কোনো উপায় নেই বলে জানান বিবি মরিয়ম।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আলাউদ্দিনের বড় ভাই মোহাম্মদ ইসহাক, মেজো ভাই হাফিজুর রহমান, ভাগিনা মোহাম্মদ এমরান ও মোহাম্মদ ফোরকান, জাকির হোসেনের আপন ভগ্নিপতি মল্লিকা খাতুনের ছেলে মোহাম্মদ শফিউল আলম , জাকির হোসেনের মেজো ভাইয়ের ছেলে মোহাম্মদ দুলাল ও তার বোন বাবলি আক্তার, মেজো ভাইয়ের মেয়ে বিবি ফাতেমা জুলি ও রূপা আক্তার, জাকির হোসেনের নাতি মোহাম্মদ বাপ্পু, মোহাম্মদ ফয়সাল,মুহাম্মাদ অপু, জাকির হোসেনের ভাতিজি জোহরা, লায়লা বেগম ও জাকির হোসেনের ভাতিজি হাজেরা বেগম প্রমুখ।