ভারতীয় লেখক ও এক্টিভিস্ট অরুন্ধতী রায় অভিযোগ করেছেন, নরেন্দ্র মোদির শাসনামালে দেশটিতে সংখ্যালঘুদের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিবিসির ইভান ডেভিসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি।১৯৯৭ সালে অরুন্ধতী রায়ের প্রথম উপন্যাস ‘গড অফ স্মল থিংস’ প্রকাশিত হয়। ওই উপন্যাসটির জন্য তিনি বুকার পুরস্কার পান। এর ২০ বছর পর ২০১৭ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস’ প্রকাশিত হয়। ভারতের অতীত ও বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে প্রতীকধর্মী এ উপন্যাস ঘিরে সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়। ‘বিবিসি নাইট’ নামের ওই অনুষ্ঠানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর নানা দেশে দক্ষিণপন্থার উত্থানসহ নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেন। ইভান ডেভিস, অরুন্ধতীকে প্রশ্ন করেন, ‘মোদিকে আপনি খুব একটা ভালো চোখে দেখেন না। আপনার বই নিয়ে তিনিও খুব একটা খুশি নন। তিনি কি ততটা খারাপ, আপনি তাকে যতটা ভয় পান?’ উত্তরে অরুন্ধতী বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা তাই। কারণ ভারতে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যেখানে মুসলিম সম্প্রদায়কে সমাজের মূল স্রোত থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। রাস্তাঘাটে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের বংশানুক্রমিক পেশা আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে হটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাংসের দোকান কিংবা চামড়াজাত পণ্য কিংবা হস্তশিল্পের মতো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’অরুন্ধতী বলেন, ভারতে এ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির পেছনে একটিই কারণ, সেটা হচ্ছে একটা জাতি গঠনের চেষ্টা চলছে, যেটা হিন্দুত্ববাদী জাতি। তাদের বাইরে অন্য সবাইকে কোনো না কোনোভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানোর চেষ্টা চলছে।তিনি বলেন, ভারতের এ সহিংসতা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই কাশ্মিরের ছোট মেয়েটির ধর্ষণের ঘটনাটি দেখেছেন। এটা ঘটেছে, অথচ হাজারো মানুষ তাদের মধ্যে নারীরাও ছিলেন, সন্দেহভাজন ধর্ষকের পক্ষে মিছিল করেছে। বিষয়টা ভাবুন? কিন্তু এখানে মূল বিষয়টা হচ্ছে, ওই বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখানে ভারতীয় সমাজের মেরুকরণটা স্পষ্ট।মোদিকে ট্রাম্পের থেকেও খারাপ মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অরুন্ধতী বলেন, পার্থক্যটা হলো, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে যদি বিবেচনা করেন, এটা ঠিক যে তিনি নিয়ন্ত্রণহীন। তবে সব মার্কিন প্রতিষ্ঠানের তাকে ঘিরে উদ্বেগ রয়েছে। সংবাদমাধ্যম উদ্বিগ্ন, বিচার বিভাগ উদ্বিগ্ন, সেনাবাহিনী উদ্বিগ্ন। মার্কিন জনতাও চেষ্টা করছে তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে। বিপরীতে যদি ভারতীয় অভিজাত প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকান, দেখবেন সবাই মোদির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।ভারতে তার কাজের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে অরুন্ধতী বিবিসির সাংবাদিক ইভান ডেভিসকে বলেন, ‘আমার মতো মানুষকে ভারতবিরোধী-জাতিবিরোধী আখ্যা দেওয়াটা একটা বড় রকমের তামাশা। অথচ আমরাই এ ভূ-খণ্ডকে ভালোবাসি।