শেরপুর প্রতিনিধি : যুগ যুগ ধরে শোষক-শ্রেণী দ্বারা শোষিত হচ্ছে গরীব সম্প্রদায়ের মানুষ।সেই প্রাচীনকাল হতে শুরু করে সভ্যতার পরিক্রমা পেরিয়ে এসে এই একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছেও এই ব্যবস্থার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি।পূর্ববর্তী মানব সভ্যতার দিকে তাকালেও দেখা যাবে এমন হাজারো দৃষ্টান্ত।বরাবরই অত্যাচারের শিকার হয় অসহায়,নিরীহ এবং দূর্বল মানুষজন।এখনো চারপাশে দেখা যায় সমাজের ক্ষমতাবান শিক্ষিত মানুষের কাছে শোষিত হয় যারা শিক্ষার আলোর আওতায় নেই।তারই চিত্র যেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বানেশ্বর্দী খন্দকার পাড়া গ্রাম।যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন কিছু সুবিধাবাদী সেই সরকারের শাখা-প্রশাখায় ভর করে এলাকায় চালায় তাদের দৌরাত্ম্য।তেমনি দুইজন সুবিধাবাদী খন্দকার মাসুদ রানা সজীব ওরফে নয়ন এবং ভুরদী ছাল্লাকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুস ছুবুর(রনি)।এলাকায় একছত্র অধিপত্য বিস্তারের জন্য একটা পর একটা অপরাধ করে যাচ্ছে।দিনমজুরদের টার্গেট করে জমি বিক্রির ফাঁদ পেতে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
দিনমজুর গেন্দু মিয়ার কাছ থেকে ৩০ বছর আগে বাড়ি ভিটা পাঁচ শতাংশ জমি ২ হাজার টাকা মূল্যে কিনে নেন খন্দকার মাসুদ রানা সজীব ওরফে নয়নের বাবা লেবু মিয়া।কথা ছিলো ১০০ টাকা করে ফেরত দিতে পারলেও সেই জমি ফেরত দিবেন লেবু মিয়া।তৎকালীন সময়ে ১৪ টাকা মজুরীতে কাজ করে ৫ হাজার টাকা ফেরত দিলেও জমি লিখে দেননি লেবু মিয়া।নানান অজুহাতে সময় অতিবাহিত করে।২০১১ সালে লেবু মিয়া মারা যাওয়ায় উনার ছেলে খন্দকার মাসুদ রানা সজীব ওরফে নয়নের কাছে জমি লিখে দেওয়ার কথা বললে গেন্দু মিয়াকে হুমকি ধমকি দিতে থাকে এবং ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করে।টাকা দিতে না পারলে বাড়িঘর ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেয়।গেন্দু মিয়া তাদের হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে।পরে এলাকাবাসীর মধ্যস্থতায় ৮০ হাজার টাকায় শেষ পর্যন্ত জমিটা লিখে দেয়।
এবিষয়ে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন গেন্দু মিয়া। তিনি জানান-আমার খুব কষ্টের টাকা। পাশ থেকে উনার স্ত্রী বলেন-আমার চাওয়া-মাগার টাকাগুলোও আছে।টাকাগুলো ফেরত না দিলে জীবনেও দাবি ছাড়বোনা।আমার টাকা আমি আমি ফেরত চাই।বিদ্যা-বুদ্ধির জোড় না থাকায় বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছি।
এছাড়াও এই মাসুদ রানা সজীব ওরফে নয়নের বিরুদ্ধে বেকার না হয়েও ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি’ থেকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং ১৬২২০ এর মাধ্যমে ১,৫০,০০০ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে।সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ও ভুরদী খন্দকার পাড়া বাজারে একটি মুদি দোকান রয়েছে।
এ বিষয়ে খন্দকার মাসুদ রানা সজীব ওরফে নয়নের কাছে জানতে চাইলে বলেন -আমি তো কৃষক এবং অবসর ভাতা ও দোকান থেকে যে আয় করি তাতে আমার সংসার চলে না এবং গেন্দু মিয়ার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার ব্যাপারে অস্বীকার করে।
অপরদিকে আব্দুস ছুবুর রনির প্রতারণাই যেনো নেশা।একই জমি দুইবার বিক্রির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।প্রতিবেশি দিনমজুর কামাল মিয়ার কাছে জমি বিক্রি করেন আব্দুস ছুবুর রনির শ্বশুর। শ্বশুরের জমির পাশে আব্দুস ছুবুর রনির জমিও থাকায় তার সেই জমি কামাল মিয়াকে কিনতে বাধ্য করে।তা নাহলে তার ক্রয়কৃত জমিতে যেতে দেবেন না বলে হুমকি দেয়।
দিনমজুর কামাল মিয়া বলেন-আমরা তার জমি কিনতে চাইনি। বাধ্য হয়ে তার জমি কিনার জন্য সুদে ধারদেনা করে তাকে টাকা দেই এবং বাকি টাকা জমি লিখে দেয়ার সময় দিয়ে দেওয়ার কথা বলি।কিন্তু আব্দুস ছুবুর রনি আমাদের জমি লিখেও দেয় নি এবং টাকাও ফেরত দেয় নি।দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে নানান তালবাহানা দেখাচ্ছে এবং মিথ্যা মামলা দেয়ারও হুমকি দেয়।এসব বলতে বলতে কামাল মিয়া দুঃখবোধ নিয়ে বলেন-আমারে একেবারে মাইরা ফালাইছে।
অন্য এক দিনমজুর জুলহাস মিয়ার কাছে ৩৫ শতাংশ জমির টাকা নিয়ে ৩১ শতাংশ জমি লিখে দেন এবং বাকি ৪ শতাংশ জমি লিখে দিতে তালবাহানা করছে।সেই জমির পরিবর্তে টাকা ফেরত চাইতে গেলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি দেয়।এ বিষয়ে জুলহাস মিয়ার স্ত্রী বলেন একই জমির দাম ২ বার নিয়েও আমাদের ৪ শতাংশ জমি দিচ্ছে না।
না খেয়ে জমানো টাকা দিয়ে জমি কিনেছি,অভুক্ত থাকতে থাকতে এখন আর ভালোমন্দ খেতেও পারি না।আমরা আমাদের জমি চাই আর নয়তো টাকা ফেরত চাই।
ইউনুস আলীর একই দাগে জমি থাকার সুযোগে মোঃ মোতালেবের ১৫ শতাংশ জমি বি.আর.এস রেকর্ড করে নেয়।ইউনুস আলীর নাতি হওয়ার সুবাদে আব্দুস ছুবুর রনি ও তার বোনের স্বামী মোঃ মোতালেব এর বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন সময় হুমকি ধমকি দিয়ে ১.৫ লাখ টাকা আদায় করে নেয়।
এছাড়াও ২০১৫ সালে ভুরদী ছাল্লাকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়মিত একজন শিক্ষক ও নবদিগন্ত একাডেমির সান্ধ্যকালীন শিক্ষক হয়েও বেকারদের সুবিধার আওতায় আনার জন্য বর্তমান সরকারের উদ্যোগ ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি’র ৭ম পর্ব থেকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক নকলা শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং ১৬৩৬৩ এর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে।আব্দুস ছুবুর রনি যে পূর্ব থেকেই বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষক সে তথ্য গোপন করে পুনরায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিতে আবেদন করলে অস্থায়ী কর্মসংস্থান পায়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস ছুবুর রনি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে।ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি’র ব্যাপারে বলে, আমি ২০১৫ সালে ছাল্লাকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেলেও কোনো বেতন পেতাম না তাই আমি এই সুবিধা নিয়েছি।২০২০ সালের মে মাসে ইনডেক্স নাম্বার পেয়েছি।
কিন্তু জানা যায় নবদিগন্ত একাডেমি থেকে সে নিয়মিত বেতন পেয়ে আসছে।
এবিষয়ে ৫ নং বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাজহারুল আনোয়ার মহব্বতকে ফোন দিলে তাকে পাওয়া যায়নি।