লকডাউন মানেই সাধারণ জনগণের ও শ্রমজীবী মানুষের আয়ের পথ বন্ধ। গত বছর লকডাউন ও সাধারণ ছুটির কারণে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেছে উন্নয়ন কার্যক্রম, অন্যদিকে বাড়ি ভাড়া দিতে হচ্ছে নগদ টাকা।লকডাউন এর কারণে মধ্যবিত্ত গোষ্ঠী অনেকে দারিদ্রসীমার নিচে পড়ে যাবে।আমি কবির নেওয়াজ রাজ মনে করি সবাইকে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে না পারলে ভঙ্গুর অর্থনীতির হাত ধরে তৈরি হতে পারে চরম নৈরাজ্য।যে চ্যালেঞ্জটা আসবে সেটা হলো অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা।এটি অনেকদিন ধরেই আছে।করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে যে লকডাউন পরিস্থিতি চলছে, তাতে করে শুরু থেকেই বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। একমুঠো খাবারের সন্ধানে তাদের অনেকেই ভীড় করছেন শহরের সড়কগুলোতে।লকডাউনের মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানোর পর সাধারণ মানুষের খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ।এইভাবে আর কতদিন চলবো, কতদিন থাকবে, আগের মতোন কবে হবে সেইটাই এখন টেনশন।ঢাকা শহরে কিছুক্ষন ঘুরলেই মোড়ে মোড়ে কিংবা রাস্তার ধারে অসংখ্য মানুষকে দেখা যাচ্ছে, যারা মূলতঃ খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে এসেছেন পথে।লাজ-লজ্জা, করোনা আতংক সবকিছু ছাপিয়ে ক্ষুধা নিবারণই এখন তাদের কাছে মূখ্য বিষয়।আমার ধারনা পরিস্থিতি বুঝে তা বাড়ানো হতে পারে। পরিস্থিতি ভালো নয়, কাজেই হয়তো লকডাউনের মেয়াদ বাড়বে। গত বছরের লকডাউনে প্রান্তিক মানুষ দুর্দশায় পড়েছিলেন। দুর্দশা লাঘবে সরকারি প্রচেষ্টা খুব একটা সফল হয়নি, রিলিফের চাল-ডাল প্রচলিত নিয়মে অনেকটাই স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের প্রান্তিক কর্মজীবীরা রোজগারের ব্যবস্থা হারিয়ে এবারও কষ্টে পড়েছেন।দৈনিক সংক্রমণ কদিন যাবৎ যা ছাড়িয়েছে, হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই। দুঃখের নাটকে মাঝেমধ্যে কিছু কৌতুককর ঘটনা থাকে, যাকে কমিক রিলিফ নামে অভিহিত করা হয়। করোনাকালজুড়ে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে তাঁর বিভিন্ন বাক্যালাপে কমিক রিলিফ জুগিয়েছেন। যা সাধারণ জনগণের কাছে হাস্যকর মনে হয়।বিজ্ঞানীরা শুরু থেকেই বলছেন, দ্বিতীয় এমনকি তৃতীয় ধাক্কা আসবে। তাতে কর্ণপাত না করে আমরা মগ্ন ছিলাম সংক্রমণ এবং মৃত্যু হ্রাসের কৃতিত্বে অবগাহনে। পরিস্থিতি যখন আবার খারাপের দিকে, তখন আইসিইউ, অক্সিজেন ও ন্যাজাল ক্যানোলার অভাব স্বাস্থ্যকর্মীদের দুশ্চিন্তায় ফেলছে।লকডাউনে অনানুষ্ঠানিক খাতের দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষের আয় কমেছে। কারও কারও আয় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেককে প্রয়োজনীয় খাবারের জন্য ঋণ করতে হচ্ছে অথবা আত্মীয়-পরিজনের সহায়তা নিতে হচ্ছে। অনেকে সামাজিক সহায়তার জন্যও হাত বাড়াচ্ছেন। তবে সবাই ঋণ বা সহায়তা পাচ্ছেন না। গতবছর সাধারণ ছুটির সময় বিত্তবান ব্যক্তি, বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থা সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এলেও এবার তেমন দেখা যাচ্ছে না।করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রভাব কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। গত বছরের ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই এখনও বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ওই সময় দেশে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছিল। নিম্ন আয়ের মানুষ যখন সেই ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ।সরকারের কর্মসূচি দ্রুত পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে সরকারের এ কার্যক্রম পর্যাপ্ত নয়। কারণ, সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছে কিছু মানুষ, যারা আগে থেকেই বিভিন্নভাবে সরকারের কাছে দরিদ্র ও দুস্থ হিসেবে নিবন্ধিত। কিন্তু যাদের সংকটাপন্ন পরিস্থিতির তথ্য সরকারের কাছে নেই, তাদের সহায়তা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।সাংবাদিকদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সফল সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর বলেন, কিছু শিল্পকারখানা ছাড়া এখন সবই বন্ধ। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়েছে, অনানুষ্ঠানিক খাতের লোকদের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা শহরেই বেশি। নতুন করে অনেক মানুষ দরিদ্র হয়েছে। সরকারকে এসব বিষয় মাথায় নিয়ে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাড়াতে হবে।এক হাজার ৬০০ পরিবারের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, গত বছরের মার্চের তুলনায় গেল ফেব্রুয়ারিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আয় কমেছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এ সময় তাদের ব্যয় কমেছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। সমীক্ষার আওতায় থাকা প্রায় ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবারকে ঋণ নিতে হয়েছিল। এ ঋণ পরিশোধে তাদের আরও অন্তত দুই বছর সময় লাগতে পারে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, প্রতিবন্ধী, বস্তিবাসী ও চরের মানুষজনের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা টিউশনি করে চলত এখন সে পথ ও তাদের বন্ধ হয়ে গেছে।তাই বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন করছি সাধারণ মানুষের জন্য সহায়তা আরও বাড়ানো দরকার, বিশেষ করে তাদের নগদ টাকা দেওয়া দরকার।সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি সামনে এসেছে তা হলো, শ্রমজীবী মানুষের জীবনের চেয়েও তাদের জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা।বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের আহমেদ আবু জাফর বলেন শুধু গণমাধ্যমকর্মী নয়, সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য পেনশনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা এবং সামগ্রিকভাবে এমন একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের কথাবার্তা শুরু করা উচিত।
লেখকঃ কবির নেওয়াজ রাজ
সম্পাদক,মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম।
Email:mkprotidin@gmail.com