শামীম ,জেলা প্রতিনিধিপটুয়াখালী:
পটুয়াখালীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর তুলনায় ১৫ গুণ বেশি রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে গত এক মাসে। এ সময় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাতজন আর ডায়রিয়ায় মারা গেছেন পাঁচ জন। প্রতিদিনই ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মার্চ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ১ মাসে পটুয়াখালী জেলায় ৪ হাজার ৩০৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। ঠিক একই সময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৯০ জন অর্থাৎ করোনায় আক্রান্ত রোগীর প্রায় পনের গুণ বেশি রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ দিনে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ১৭৩ জন। সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত ১ মাসে সেখানে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১হাজার ৫৬৮ জন এর মধ্যে গত ১ সপ্তাহে ৬৩৭ জনের পাশাপশি উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মির্জাগঞ্জ উপজেলায় গত ১ মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৭৪০ জন এবং এর মধ্যে গত ১ সপ্তাহেই ভর্তি ৫১৬ জন।
মির্জাগঞ্জ উপজেলার ১নং মাধবখালী ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদার জানান, গত শনিবার ১৭ এপ্রিল সকালে মাধবখালী এলাকায় তৈয়ব আলী সিকদার (৭৫) এবং সমাদ্দারকাঠি গ্রামের রাকিব খন্দকারের মেয়ে কাঠালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এস এস সি পরীক্ষার্থী মোসাম্মদ শাহারা সানফুল (১৫) গত ১৮ এপ্রিল সকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুপুর দু’টার
দিকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই বাড়িতে মারা যান।
বিষয়টি আরো নিশ্চিত করেন মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা। তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ৮৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ওই দুইজন ব্যক্তি বাড়িতে মারা গেছেন বলেও নিশ্চিত করেন। বর্তমানে উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নে একটি ২০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও সেখানে আউটডোরে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে ইনডোরে চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু নেই ওই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব রয়েছে। মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে সেখানকারা চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। জনবল সংকটের বিষয়টি তারা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এছাড়া দুইদিন আগে হাসপাতালে কলেরা স্যালাইনের অপ্রতুলতা থাকলেও বর্তমানে তা কেটে উঠেছে।
দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর শাহিদুল হাসান জানান, গত ১৭ এপ্রিল সকালে দুমকী উপজেলার জলিশা গ্রামের আ. হক মুনশী (৮২) ডায়রিয়া নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি ডায়রিয়ার সাথে অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সূত্রমতে, গত ১৮ এপ্রিল বাউফল উপজেলার কেশবপুর এলাকার মো. মাসুম মিয়ার স্ত্রী মোসাম্মদ খাদিজা বেগম (২৭) ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির সাথে সাথেই মারা যান। এছাড়া ১৯ এপ্রিল সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের আঃ হক মৃধার স্ত্রী মোসাম্মদ পিয়ারা বেগম (৬০) ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
জানতে চাইলে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. লোকমান হাকিম জানান, হাসপাতালে এখনো ১৫০জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন। স্যালাইনের সংকট ছিল গত ২ দিন আগে ৬ হাজার পিস স্যালাইন সরকারি অর্থায়নে ঢাকা থেকে আনা হয়েছে আরো ৭ হাজারের অর্ডার করা হয়েছে।
অপরদিকে বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, জেলার সকল নদ-নদী,খাল ও পুকুরের পানিতে অতিমাত্রায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে যা আগে কখনও দেখা যায়নি। এবারে অনাবৃষ্টি, খরার কারণে নদ-নদীর পানি হয়ে গিয়েছে দুষিত। গ্রামগঞ্জে যে পরিমাণ টিউবওয়েল রয়েছে সেগুলোর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় তার অধিকাংশই এখন অকেজো হয়ে গেছে। বাধ্য হয়েই সাধারণ মানুষ নদী, নালা, খাল, পুকুরের দুষিত পানি ব্যবহার করছে যার ফলে ডায়রিয়াসহ পানি বাহিত রোগের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, ইতোমধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত উপজেলাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। পানির অতিমাত্রার লবণাক্ততা সর্ম্পকে তিনি আইসিডিডিআরবিকে জানানো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার ৫ হাজার ব্যাগ স্যালাইন ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেয়া হয়েছে এর মধ্যে ৫শ ব্যাগ এসএসসি ১৯৯০’র সংগঠন “মানবিক-৯০” ব্যাচের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত। তবে জেলা ঔষধ প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাবে বাজারে ডায়রিয়া স্যালাইনের কৃত্রিম সংকটের চেষ্টা চালাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।