লিয়াকত রাজশাহী: জশাহীতে কর্মরত অস্বচ্ছল, অসুস্থ, দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক ও মৃত সাংবাদিকদের পরিবারের মাঝে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে বরাদ্দকৃত চেক বিট করা হয়েছে।
সোমবার (২৪ মে) বেলা ১১টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এ চেক হস্তান্তর করা হয়।এসময়, আহত ও মৃত পাঁচ সাংবাদিক সাংবাদিকের পরিবার পায় বরাদ্দকৃত চেক।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হকের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে ভাচুর্য়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব জাফর ওয়াজেদ বিশেষ অতিথি ছিলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ: সভাপতি সমাজসেবী শাহীন আক্তার রেনী। এ সময় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক।অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব জাফর ওয়াজেদ বলেন, রাজশাহীর সাংবাদিকরা কখনোই অবহেলিত নন। সাংবাদিকদের জন্যই সরকারের উন্নয়নের অংশ হিসেবে গঠন করা হয়েছে কল্যাণ ট্রাস্ট। রাজধানী ঢাকা ও মফস্বলের সাংবাদিকরা কেউ ছোটবড় নন। সারাদেশের সকল সাংবাদিক সমপর্যায়ের। তাদের পাশে রয়েছে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা প্রকল্প নিয়ে কাজ চলমান। ইতোমধ্যে এটির খসড়া তৈরি হয়েছে। এছাড়া শিক্ষাবৃত্তিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সাংবাদিকদের পাশে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠান।
চেক হস্তান্তরকালে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান, আজীবন সদস্য আহমেদ শফি উদ্দীন, গোরাম সারওয়ার, যুগ্ম সম্পাদক নুরে ইসলাম মিলন, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওয়ালিউর রহমান বাবু, সিনিয়র সাংবাদিক সরকার শরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সিনিয়র রিপোটার্র ড. আইনুল হক, দৈনিক রাজশাহীর সম্পাদক মো. আনিসুজ্জামান, রাজশাহী মডেল প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দি মুসলিম টাইমস পত্রিকার রাজশাহী ব্যুরো লিয়াকত হোসেন দৈনিক ভোরের কাগজ প্রতিনিধি আমানুল্লাহ আমান, সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোটার্র সাইফুর রহমান রকি, জিটিভির স্টাফ রিপোটার্র রাশেদ রিপন, ফটো সাংবাদিক এ্যাসোসিয়েন রাজশাহীর সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিন প্রয়াত সাংবাদিক বুলবুল চৌধুরী ও তবিবুর রহমান মাসুমের পরিবারের জন্য (রাজশাহী প্রেসক্লাবের সুপারিশকৃত) বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে মরণোত্তর তিন লক্ষ টাকা করে মোট ছয় লক্ষ টাকা ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সুপারিশে তিন জন সাংবাদিককে ৫০ হাজার করে মোট দেড় লক্ষ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়।
প্রসঙ্গত, প্রয়াত দুই গুণী সাংবাদিক পরিবারের পাশে কেউ না দঁাড়ানোয় রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি ও সম্পাদক উদ্যোগী হয়ে কল্যাণ ট্রাস্টে আবেদন প্রেরণ করেন। এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সুপারিশের প্রেক্ষিতে দুইজন সাংবাদিক পরিবারকে (খবরপত্রের হুমায়ুন কবীরকে চিকিৎসা ও প্রয়াত সাইদুর রহমান নাজু পরিবারকে মরণোত্তর) দুই লক্ষ করে চার লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছিলো। এছাড়া ক্রীড়া সাংবাদিক জিএম হাসান-ই-সালাম বাবুলের চিকিৎসার জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে এক লক্ষ টাকা ও প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দুই লক্ষ টাকার অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে, সাংবাদিকদের পাশে দঁাড়ানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদ ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালালকে রাজশাহী প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তঁার পিতার মতো সাংবাদিকবান্ধব রাষ্ট্রপ্রধান। সাংবাদিকের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তিনি সার্বজনীন ফান্ড গঠন করেন। কিন্তু একসময় ফান্ডটি সাংবাদিকের কল্যাণে ব্যবহার হওয়ার পরিবর্তে মুষ্ঠিমেয় কতগুলো ব্যক্তি শুধু সুবিধা গ্রহণ করতেন, স্বচ্ছতার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে সজ্জ্বন ব্যক্তি, ডাকসুর সাবেক নেতা একুশে পদকে ভূষিত সাংবাদিক পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ার পর থেকে স্বচ্ছতার সাথে সাংবাদিকদের প্রয়োজনে যেন ফান্ডটি ব্যবহৃত হয় সে ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছেন। যার সুফল রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় ও জেলা শহরের সাংবাদিকরা পাচ্ছেন।
প্রয়াত সাংবাদিক বুলবুল চৌধুরী প্রায় ৪ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভারত থেকে ওপেনহার্ট সার্জারী করে নিজ বাড়িতে বিশ্রামে ছিলেন, পাশাপাশি ব্যবসায়িক কাজে জড়িত ছিলেন। কিন্তু তঁার মৃত্যুতে পরিবারটি আর্থিক সংকটের ভেতর পড়ে। তঁার পরিবারটির কেউ খেঁাজখবর রাখেন নি। রাজশাহী প্রেসক্লাব জানতে পেরে পরিবারটির জন্য মরণোত্তর আর্থিক সহায়তার আবেদন ট্রাস্টে প্রেরণ করে। একইভাবে প্রয়াত সাংবাদিক তবিবুর রহমান মাসুমের মৃত্যুজনিত কারণে তঁার পরিবার আর্থিক সংকটে পড়লেও কেউ এগিয়ে আসেনি। তঁার সহধর্মিণীর অনুরোধ জানালে রাজশাহী প্রেসক্লাব সুপারিশসহ আবেদনটি কল্যাণ ট্রাস্টে প্রেরণ করেন। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজশাহীর দুই প্রয়াত সাংবাদিক পরিবারকে মরণোত্তর তিন লক্ষ টাকা করে মোট ছয় লক্ষ টাকার আর্থিক বরাদ্দ দেয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদ এবং বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালালকে রাজশাহী প্রেসক্লাব ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।