শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:৪০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
ভুটানের রাজার আমন্ত্রণে ভুটান সফরে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির  সাথে মত বিনিময় ও ফুলের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ সাতক্ষীরা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ  মনোহরদীতে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর সংরক্ষণের অভিযানে ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড শিশু শামীমের ভিত্তিতে রাজ এর শোক জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবেঃ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী গাজা হত্যাযজ্ঞে নিশ্চুপ শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস ইসরায়েলির পুরস্কার নিয়ে গণহত্যার পক্ষ নিয়েছেন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধিলু রাজার সাম্রাজ্যে! – সাদিকুল আওয়াল আরিফ মঈনুদ্দীন এর একগুচ্ছ কবতিা ইতিহাসের ভিন্ন পাঠ ‘বাঙালির ইতিহাস চর্চার পথের কাঁটা’ -মাহফুজ ফারুক শহরটা যেভাবে প্রিয় হয়ে ওঠে – মহিবুল আলম

ভয়ংকর খুনী-ঠগী, পর্ব- ৪।।মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৬ মে, ২০২১, ৪.০৫ পিএম
  • ১৯৮ বার পঠিত

বড়ই বিচিত্র একদেশ,, এখানে পথে কত ভয়! নদীতে কুমির ডাঙায় বাঘ ভালুক, তার চেয়েও বড় ভয় দস্যুর। শুধু বিপদই নয়, পথ চলতে বন্ধুরও দেখা পাওয়া যায়। অসহায় পথিকের বিপদে উপকার করার লোকেরও অভাব নেই সে দেশে। পথে শুধু বন্ধুই নয়, উপকারী বান্ধবীরও দেখা পেয়েছিলো ওরা..

১৮ শতকের দ্বিতীয় দশক, নিজ বাড়ি ফিরছেন উচ্চ পদস্থ রাজ কর্মচারী, দীর্ঘ কর্মজীবনে অনেক অর্জন তার,, এবার বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন, সঙ্গে একপুত্র,দুই অবিবাহিতা কন্যা,, সাথে আরও দুজন সুদর্শন যুবক। ছেলে দুটোকে নিজেই পছন্দ করেছেন। নিরাপদ বাড়ি পৌঁছোবার পর এক বিশাল আয়োজনে তাদের সঙ্গে মেয়ে দুটোর বিয়ে দিবেন। আপাততঃ তাদের পরিচয় হবু জামাই,, তাদের উপযুক্ত আদর যত্নের জন্য নেয়া হয়েছে চারজন ভৃত্য।

ওরা পথ চলছে,,,, দীর্ঘ পথ চলতে চলতে সন্ধ্যা নেমে এলে বিরতি,, কোথাও তাঁবু গেঁড়ে বিশ্রাম আর যদি সে পথে কোন গ্রাম পড়ে তো পরিচয় জানলে আশ্রয় দেবার লোকের অভাব নেই,, এরকম রাজ কর্মচারীকে বাড়িতে রাখতে পারাটা পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। রাজ কর্মচারী বলে কথা..!!

পথে একদিন দেখা হলো একদল পথিকের। খুব সাধাসিধে,, সদালাপী আর বন্ধুবৎসল। অল্পতেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো, ওরা একসাথে চলতে শুরু করলো…..

ক’দিন পরে এক গ্রামে ওরা আস্তানা গাড়লেন। রাজ দরবারের লোক উঠলেন গ্রামের মোড়লের বাড়িতে আর গাঁয়ের এককোনে নিজেদের তাঁবুতে। রাতে গ্রামের একবাড়িতে আগুন লেগে পুরো বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। সে রাতে কারোরই ভালো ঘুম হলো না। ভোরেই সে গ্রাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ভদ্রলোক।

কিন্তু পথে নেমে দেখা গেল সাথের সেই পথিকেরা নেই, জানা গেলো ওরাই নাকি আগুন লাগিয়েছিল, চৌকিদার সবাইকে ধরে থানায় নিয়ে গেছে। মেয়েদু’টো নড়তে নারাজ,, ওদের না নিয়ে একপাও এগোবে না। কি সুন্দর গল্প বলতো ওরা,, কি সুন্দর তাদের গানের গলা !! এভাবে বিপদের মাঝে ওদের ফেলে যাওয়া উচিত হবে না।

মেয়েদু’টো বড়ই আদুরে। ভদ্রলোকের মন গললো…. তাঁকে থানায় দেখেই সালাম ঠুকলো দারোগা সাহেব। তিনি বললেন, কেন মিছেমিছি এদের আটকে রেখেছ? ক’দিন ধরে আমাদের সাথেই চলছে, একবারও তো ওদের খারাপ লোক মনে হয় নি। আরে আমি তো মানুষ নিয়েই নাড়াচাড়া করি! ছেড়ে দাও ওদের..

সুর মেলালেন মেয়েদু’টোও। কি বলবো দারোগা সাহেব, ওরা কি সুন্দর গান গায় !!! ওদের মুখের দিকে তাকালেন দারোগা সাহেব। একটা মেয়ে একেবারে তার মেয়ের বয়সি,, চোখ দুটিও তার মতো। ভাবলেন এবার তার মেয়ের জন্য ভালো একটা ছেলে দেখা দরকার। মুখ ফিরিয়ে চৌকিদার’কে হুকুম করলেন,, এই ওদের ছেড়ে দাও।
ওরা ছাড়া পেলো, কোন তল্লাশী হলো না, জিজ্ঞাসাবাদ হলো না, অথচ থানা এলাকায় আগের দিনই তিনজন ব্যবসায়ী নিখোঁজ হয়েছে। তাদের সঙ্গে অনেক দামী রেশমি কাপড় ছিল। সে সন্দেহেই ওদের থানায় আনা হয়েছিলো, আগুন লাগানোর দায়ে নয়। মেয়ে দু’টোর মুখচেয়ে কি জানি কি মনে করে ওদের ছেড়ে দিলেন দারোগা সাহেব..

ওরা আবার একসাথে চলতে শুরু করলো.. মেয়েদের মুখে হাঁসি ফুটেছে দেখে ভাল লাগছে ভদ্রলোকের। উনার খাতির যত্নও বেড়েছে। মেয়েদের জন্যও অনেক দোয়া ওদের। তোমাদের ঋণ কোনদিন শোধ হবার নয়, রাজরানী হও মায়েরা …..!

কদিন চলার পর এবার সামনে বড় নগর, নগরের প্রবেশ মুখে কাস্টমস চৌকি, বিপদের গন্ধ আঁচ করলেন দলপতি। ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে বললো, হুজুর এখানেও বোধহয় পুলিশ ঝামেলা করবে, একটু নজর দিবেন। কথা শুনে মেয়েরা বললো, সে আপনাকে ভাবতে হবে না। আমরা থাকতে ভয় কি? তা পুলিশ কি ঝামেলা করবে বলেন তো। আমাদের সাথে অনেক তো মালামাল,, চেক করার কথা বলে হয়তো দু’দিন আটকে রাখবে, কিছু খসাবে, বললেন দলপতি। ভদ্রলোক বললেন, আমরা থাকতে ভয় কিসের? তোমাদের কিছু মালামাল আমাদের কাছে দিয়ে দাও।

ওরা কাস্টম চৌকিতে পৌছালো,, আগেই খবর ছিল, আদর যত্নের কমতি হলো না রাজ কর্মচারী ও তার লোকজনের। মালামাল খুব একটা তল্লাশি হলো না, অনেক দিন পর বাড়ি যাচ্ছে সঙ্গে পরিবার, কদিন পরই দু’টো মেয়ের বিয়ে মালামাল একটু বেশী থাকবেই। অবশ্য মেয়ে দুটোর কাছে দুটো বড় পুটলি ছিলো কিন্তু ওদের চেক করাটা একটু অভদ্রতা যায় ….!!

আর ওদের কাছে সন্দেহ করার মতো কিছু পাওয়া গেল না। নিরাপদেই চৌকি পার হলো সবাই। মেয়েদু’টো হাতের দামি রেশম কাপড়ের পুটলি ওদের দিকে বাড়িয়ে দিলো। কৃতজ্ঞতায় মন ভরে গেলো দলপতির। অাশির্বাদ করলো, বেঁচে থাকলে তোমরা রাজরানী হবে মামণিরা।

ওরা রাজরানী হতে পারে নি। হাতে মেহেদীর ছোঁয়াও পায় নি। ওরা হারিয়ে গেছে চিরতরে। ওদের প্রিয় ছোট ভাই, প্রিয় বাবা সঙ্গের চারজন ভৃত্যও এমনকি হবু বর দু’টোও হারিয়ে গেছে চিরতরে! ওরা, দিনের পর দিন এক সাথে চলেছে, এক সাথে রান্না করা খাবার ভাগাভাগি করে খেয়েছে, পথে নানান মজার গল্প শুনিয়েছে। মানবের উপকার পরম ধর্ম জেনে সহজ সরল গ্রাম্য পথিকদের সাথে নিয়েছে। বিপদে পুলিশ-কাষ্টমের হাত থেকে রক্ষা করা কোন কিছুই ওদের মন গলাতে পারে নি। একুশ দিন একসাথে পথ চললেও ওদের মনে জন্মেনি কোন দয়ামায়া। কারন ওরা আর কেউ নয় ওরা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম খুনীর দল।

ওরা ঠগগগগগগগগগী…..
(চলবে)

বিঃ দ্রঃ- আমার লেখার কোন বানিজ্যিক উদ্দ্যেশ্য নেই, শুধুমাত্র প্রিয় পাঠকদের ঠগী সম্পর্কে একটু ধারনা দেবার জন্য। কাহিনী সূত্র: Philip Meadows Taylor এর The Confession of Thug এবং William Henry Sleeman এর লেখা Rambles and recollection of Indian Official. অনিচ্ছাকৃত ক্রুটি নিজগুণে ক্ষমা করবেন।

লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান। 

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com